পুজোর মুখেও চোখে জল প্রবীণ শিল্পীর, 'দিদিকে বলো'-তে জানালেও জবাব এল না

  • পশ্চিম বর্ধমানের অণ্ডালের দুলাল চুনারি
  • শোলার ডাকের সাজ তৈরি করেই দিন কাটে তাঁর
  • সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে গিয়েছে কাজের বরাত
  • আর্থিক অনটন থেকে বাঁচতে 'দিদিকে বলো'-তে ফোন 

debamoy ghosh | Published : Sep 28, 2019 9:10 AM IST

লিপিকা সরকার, অণ্ডাল: শোলার ডাকের সাজ ছাড়া একটা সময় দুর্গা প্রতিমার কথা ভাবাও যেত না। তাই পুজোর সময় চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে কাটত এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কারিগরদের। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে প্রতিমা তৈরির শৈলী। দুর্গা প্রতিমার রূপেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তাই যত সময় যাচ্ছে কমছে শোলার ডাকের সাজের উপকরণের চাহিদা। পুজোর মুখেও তাই হাসি নেই পশ্চিম বর্ধমানের অণ্ডাল ব্লকের উখড়ার শোলার ডাকের কাজের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের। অভাব, অনটনে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে শেষ পর্যন্ত সাহায্য চেয়ে 'দিদিকে বলো'- তে ফোন করলেন এক প্রবীণ শিল্পী। 

অণ্ডালের উখড়ার বাসিন্দা প্রবীণ এই শিল্পীর নাম দুলাল চুনারি। আর্থিক অনটনে জর্জরিত হয়ে কয়েকদিন আগে 'দিদিকে বলো'- তে ফোন করেন দুলালবাবু। শোলার ডাকের সাজের মতো পুজোর উপকরণ তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। এবারও পুজোয় ভাল বরাতের আশায় দিন গুনছিলেন এই প্রবীণ শিল্পী। কিন্তু কাজের বরাত বাড়া দূরে থাকুক, উল্টে আরও কমেছে। কোনও উপায় না দেখে বাধ্য হয়েই 'দিদিকে বলো'- তে  ফোন করেন তিনি। কিন্তু তাতেও স্বস্তি ফেরেনি। ফোনের ওপার থেকে তাঁর যাবতীয় সমস্যার কথা শুনলেও এখনও পর্যন্ত ফিরতি কোনও ফোন পাননি  তিনি। প্রশাসনের তরফেও কোনও যোগাযোগ করা হয়নি বলেওই অভিযোগ বৃদ্ধ দুলাল চুনরির। 

পেশা এবং নিজের দুরবস্থার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুলালবাবু। চোখের জল মুছতে মুছতেই তিনি বলেন, 'পূর্বপুরুষদের এই শিল্প বাঁচিয়ে রেখেছি। একসময়ে অনেক জমিদার পরিবার ও ক্লাব থেকে এই ডাকের সাজের জন্য আমাদের সম্মানিত করা হয়েছে। এখন এই শিল্প প্রায় বন্ধ শোলার অমিলের জন্য। আমার ৫ মেয়ে ছিল, তাদের কোনও রকমে বিয়ে দিয়েছি। এখন আমি ও আমার স্ত্রী একটি ভাঙা ঘরে কোনও রকমে মাথা গুঁজে থাকি। কাজ আগের মতো না থাকায় রোজগার প্রায় বন্ধ।  না খেয়ে দিন কাটে আমাদের। তাই একজন শিল্পী হয়ে 'দিদিকে বলো' তে আশা করে ফোন করেছিলাম শিল্পীভাতা বা একটু সমস্যা সমাধানের জন্য। কিন্তু সবকিছু ফোনে বলার পরেও কোনও সাহায্য পাইনি। পুজোর আগে তাই খুবই ভেঙে  পড়েছি।'

গোটা ঘটনার কথা শুনে পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, 'এই  শিল্পীদের যে সমস্যা রয়েছে, তার সমাধানের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে গেলে একটু সময় লাগবে।'দিদিকে বলো'-তে ফোন যখন করা হয়েছে তখন শিল্প বাঁচানোর জন্য সরকার নিশ্চয়ই কোনও ব্যবস্থা নেবে। আপাতত কীভাবে  ওই শিল্পীদের সাহায্য করা যায়, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।'

প্রবীণ শিল্পীরা জানাচ্ছেন, প্রথমত শোলা গাছ বিলুপ্ত হতে বসার কারণেই শিল্পের কাঁচামাল পেতে সসমস্যা শুরু হয়। তার উপর শোলার কাজের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের নবীন প্রজন্মের ব্যবসার খারাপ হাল দেখে এই পেশায় না এসে দিনমজুরেরও কাজ করছেন। ফলে দিন দিন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষের সংখ্য়া কমছে। পুজোর আগে যে উখড়া ক্রেতা, বিক্রেতাদের লেনদেনে গমগম করত, সেখানেই এখন কাজের অপেক্ষায়য় হাহুতাশ করছেন শিল্পীরা। কেউ বসে আছেন ক্রেতা আসার অপেক্ষায়, কারও অপেক্ষা 'দিদিকে বলো'-র ফোনের জন্য। 

Share this article
click me!