চাইলে কতভাবেই না অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়! বর্ধমানে নজির গড়লেন নাপিতরা। বুঝিয়ে দিলেন, প্রকৃত অর্থে সমাজের সেবা করার জন্য মানসিকতাটাই আসল। নাপিতদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই।
নিয়মিত চুল-দাঁড়ি কাটলে যেমন দেখলে ভালো লাগে, তেমনি শরীরও কিন্তু সুস্থ থাকে। মাথায় চুল অবিন্যস্ত চুল, না কামানো দাঁড়িতে অপরিচ্ছন্ন হয় শরীর, বাসা বাধে রোগ। কিন্তু মাথায় ঝাঁকরা চুল, গাল ভর্তি দাড়ি নিয়ে রাস্তা-ঘাটে ঘুরে বেড়ান অনেকেই। সাহায্য করা তো দূর, পরিচয়হীন ভবঘুরে মানুষগুলির দিকে ফিরেও তাকায় না কেউ। অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বর্ধমান জেলা নাপিত ও সেলুনকর্মী জনকল্যাণ সোসাইটি। সময় পেলেই হাতে দস্তানা আর পোশাকের উপর অ্যাপরন চাপিয়ে বর্ধমান শহরের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সোসাইটির সদস্যরা। সঙ্গে সাইকেলে থাকছে টুল, আয়না ও কাঁচি। অসহায় ভবঘুরে মানুষদের রীতিমতো খুঁজে বের করে কেটে দিচ্ছেন চুল-দাঁড়ি-নখ। কেউ যদি ফোনে খবর দেন, তাহলেও সেই ঠিকানায় পৌঁছে যাচ্ছেন নাপিতরা! গত মঙ্গলবারই যেমন রেল স্টেশন, পুরসভা, আদালত চত্বরে গিয়ে ভবঘুরেদের চুল-দাঁড়ি কেটে দিলেন তাঁরা। এমনকী, অনেকেই সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে স্নানও করিয়ে দেওয়া হল।
বর্ধমান জেলার নাপিত ও সেলুনকর্মী জনকল্যাণ সোসাইটির সদস্য সংখ্যা কম নয়। তাঁদের অনেকেই এভাবে সমাজ সেবার কাজে এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে নিজেদের ফোন নম্বরও দিয়ে আসছেন। মূলত প্রতি মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ভবঘুরের জন্য বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প করছেন নাপিতরা। সময়ে পেলে বেরিয়ে পড়ছেন সপ্তাহের অন্যদিনেও। সংগঠনের সম্পাদক বিধান প্রামাণিক বলেন, 'আমার দেখেছি, পরিচয় না থাকায় এই মানুষগুলিকে সাহায্য করতে চট করে কেউ এগিয়ে আসে না। অনেক সময়ে স্রেফ চুল-দাড়ি না কাটার ফলে চর্মরোগ-সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন এঁরা। কোন কোনও ক্ষেত্রে কা আবার মারাত্বক আকার নেয়। সংগঠনের তরফে আমরা এই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেউ খোঁজ দিলেই আমরা গিয়ে চুল-দাড়ি কেটে দিয়ে আসছি।' প্রশংসনীয় কাজ, বলছেন বর্ধমান শহরের বাসিন্দারা।