শাহি ডাকের ঐতিহ্যের বাহন বুধন, তার অলঙ্কারেই সাজছে দুর্গা

 

  • হারিয়ে যাচ্ছে শাহি ডাকের সাজে
  • চাহিদা বাড়ছে ইমিটেশন ডাকের সাজের
  • শাহি ডাকের সাজ পরিবেশ বান্ধব
  • জামুড়িয়ার গড়াই পরিবরা ধরে রেখেছে পুরনো ঐতিহ্য
     

debojyoti AN | Published : Sep 23, 2019 5:29 AM IST / Updated: Sep 23 2019, 04:33 PM IST

একটা সময়ে বাংলার জমিদার ও রাজ পরিবারগুলির দুর্গা প্রতিমার সাজে  ব্যবহার করা হত শাহি ডাকের সাজ। তবে খরচ কমাতে  এখন বেশিরভাগ পুজো কমিটিই ব্যবহার করছে  ইমিটেশন ডাক। তারের কাঠামোর উপর ডেনড্রাইট আঠায় সাটানো থার্মোকল, সিন্থেটিক জরি,রঙিন প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে ইমিটেশন ডাক। দাম কম হওয়ায় চাহিদাও বাড়ছে দ্রুত। আর হারিয়ে যাচ্ছে আসল ডাকের সাজ। কিন্তু জামুড়িয়ার গড়াই পরিবার এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে পরিবেশ বান্ধব বিরোজা আঠায় তৈরি শাহি ডাকের সাজকে। শুধু ঐতিহ্য নয়,  এই ডাকের সাজ এখনও উৎকৃষ্ট মানের ও দৃষ্টিনন্দন।   

জামুড়িয়ার বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর ষাটেকের বুধন গড়াই। ডাকের কাজে প্রথম হাতেখড়ি হয়েছিল দাদুর কাছে। পরে বাবা, কাকার হাত ধরে বাড়ে অভিজ্ঞতা। এলাকার তিনিই একমাত্র মালাকার, যিনি পরম্পরা ঐতিহ্য ও বাঁচিয়ে এখনও এই  কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন।  মোটা কাগজের উপর তৈরি চুমকি,কাটা বাদলা, রাজস্থানের গোখরী ,জামির পাতা ,জড়ি,পুথির মালা, রোলেক্স সুতো দিয়ে তৈরি হয় শাহী ডাকের সাজ। মা দুর্গার সালঙ্করার সাজে চিক, কঙ্কন, বালা, চূড়, বাজুবন্ধ, সীতাহার, শাড়ির আঁচল,  মুকুট সবকিছু তৈরিতেই  ব্যবহার  করা  হয় পরিবেশ বান্ধব এই ডাকের সাজ। এই সমস্ত উপকরণ শোলা বা মোটা কাগজের ওপর সাটানো হয় বিরোজা আঠা দিয়ে। সেগুনগাছের ছাল ও জমিদারি মোম গলিয়ে আগুনে ফুটিয়ে তৈরি হয় বিরোজা আঠা। পুকুর বা নদীতে বিসর্জনের সাথে সাথে তাই  এই ডাকের সাজ সহজেই গলে যায়। কেমিক্যাল না থাকায় ক্ষতি হয় না জলাশয়ের। তাই আদি অকৃত্রিম শাহি ডাকই এখনও পছন্দ জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জের বনেদি বাড়ির পুজোয়।   

 ব্রিটিশ শাসিত ভারতে জার্মানি থেকে আমদানি করা হতো রাংতা, যার হাত ধরে আসে ডাকের সাজের কনসেপ্ট। যেহেতু ডাক ব্যবস্থার মাধ্যমেই আসতো এর সরঞ্জাম, তাই নাম হয়  ডাকের সাজ। তবে পরবর্তীকালে  বাংলায় শোলার ডাক নিজস্ব পরিচিত পায়। যেমনটা হয় শাহি-ডাক সজ্জার ক্ষেত্রে। পরিবেশ বান্ধব এই ডাকের সাজ  এখন কেবল তৈরি করেন  জামুড়িয়ার হাতেগোনা কয়েকজন মালাকাররাই।

শাহি ডাক তৈরি করতে যে সরঞ্জাম প্রয়োজন তা বর্তমানে বাজারে তেমন পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ সরঞ্জামই অমিল।  ফলে  শাহি ডাক তৈরি করতে পরিশ্রমের সঙ্গে সঙ্গে খরচা অনেক পড়ে যায়। সেভাবে রোজগার না হওয়া  পরের প্রজন্মও আর এগয়ি আসছে না  শাহি ডাকের কাজে। তবু বুধন গড়াইয়ের  মত শিল্পীরা যতদিন  আছেন , ততদিনই  জামুড়িয়া,  রানিগঞ্জের বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজোগুলিতে  বেঁচে থাকবে শাহি ডাকের সাজ।  

Share this article
click me!