শিয়রে পুরভোট, কোন ফুলে মন 'ফরাসডাঙা'-র, রইল চন্দননগর পুরসভার সাতকাহন

দোরগড়ায় পুরভোট। ১২ ফেব্রুয়ারি চন্দননগরের ভোট হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। তবে পুরভোট আসার আগে পর্তুগীজ কলোনীতে চলুন ঘুরে ফিরে দেখে নেওয়া যাক, কী রাজনৈতিক পরিস্থিতি রয়েছে এখন গঙ্গার ধারের এই শহরে।

 

Ritam Talukder | Published : Feb 7, 2022 1:09 PM IST / Updated: Feb 07 2022, 06:49 PM IST

দোরগড়ায় পুরভোট। ১২ ফেব্রুয়ারি চন্দননগরের ভোট ( Chandannagar Municipal Corporation Election 2022 ) হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। প্রথমে ২২ জানুয়ারি ভোট হওয়ার কথা ছিল এই কেন্দ্রে। কিন্তু কোভিডের কারণে তা পিছিয়ে যায়। ভোট যত এগিয়ে আসছে, তবে হুগলি জেলার এই ঐতিহাসিক শহর ঘিরে ক্রমশ উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে শাসকদল-সহ বিরোধী শিবিরে। ৩৩ আসনে এই কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল-সহ অন্যান্যরা। তবে পুরভোট আসার আগে পর্তুগীজ কলোনীতে চলুন ঘুরে ফিরে দেখে নেওয়া যাক, কী রাজনৈতিক পরিস্থিতি রয়েছে এই শহরে।

চন্দননগর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫৫ সালে, ২০১৫ সালে চন্দননগর নির্বাচনে ২১ আসন জয় করে তৃণমূল

  চন্দননগর ছিল একসময় ফরাসী উপনিবেশ। যার আরেকনাম ফরাসডাঙা। চন্দননগর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। ১৯৫০ সাল অবধি এটি ভারত সরকার চন্দননগর প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের সময় পর্যন্ত এটা ফরাসী ভারতের একটি অংশ ছিল। ১৯৫৪ সালের ২ অক্টোবার এটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অংশ হয়।  ১৯৯৪ সালে পৌর কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী এটি ১৯৯৪ সালে চন্দননগর পৌরসংস্থায় পরিণত হয়। উল্লেখ্য,  ২০০০ সালের গোড়ায় এই কেন্দ্রে তখন বামেদের আধিপত্য। সাল ২০০৫, চন্দননগরের পৌর কর্পোরেশনের নির্বাচনে সিপিআইএম ২০ টি আসন পায়। বাকি ১৩ আসনের ১০ টি তৃণমূলের এবং বাকি ৩ অন্যান্যদের দখলে যায়। তবে বামেদের সরকার ভাঙার শেষ সময়ে ২০১০ সালে চন্দননগরের পুরভোটের ৩৩ আসনে বিপুল ভোট পেয়ে ২৩ প্রায় দিগুনেরও বেশি সংখ্যায় ২৩ আসনে দখল করে চন্দননগর। বামেরা সেবার ১ টি এবং অন্যান্যরা পায় ২ টি আসন। যদিও ২০১৫ সালে সংখ্যা একটু কমে আসে। তবু দড়ি তৃণমূলের হাতেই থাকে। ২০১৫ সালে চন্দননগরের পৌর কর্পোরেশনের নির্বাচনে ২১ আসন জয় করে তৃণমূল। তবে সিপিআইএম ৭ আসন, ফরোয়ার্ড ব্লক ১ আসন, কংগ্রেস ৩ আসন এবং বিজেপি ১ আসন পায়। তবে এবার কার পালে হাওয়া বইবে বেশি তা কেবল জানে চন্দননগরবাসী। 

আরও পড়ুন, Bidhannagar Municipal Election 2022: দোরগড়ায় পুরভোট, রইল বিধাননগর পুরসভার সাতকাহন

বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছিল, শেষ অবধি জোট ধরাশায়ী হয়

কয়েক মাস আগে গতবছর একুশের বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছিল।  কিন্তু শেষ অবধি জোট ধরাশায়ী হয়। রাজ্যের একটি আসনও তাঁরা পায়নি। এরপরে পুরভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছাড়ার বিষয়টি স্থানীয় নের্তৃত্বের উপরেই ছেড়ে দেয় সিপিএম। বাম-কংগ্রেসের রসায়ন নিয়ে কম চর্চা হয়নি রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু একুশের বিধানসভা ভোটেতে বটেই, তারপর ভবানীপুর-সহ একেরপর এক উপনির্বাচনে তৃণমূলের ধার দেখতে পায় রাজ্যে। এমনটি কি কলকাতা পুরভোটেও বাধনছাড়া জয় আসে তৃণমূলের। আর এই জায়গাতেই প্রধান বিরোধী দলের আপত্তি। তখন মূলত একসঙ্গে একইদিন ভোট চেয়েছিল পদ্মশিবির সহ বিরোধীরা। কারণে নাহলে তাঁদের যুক্তি একটা ভোটের ফল অপরটায় পড়ে। তবে এখন বাম-কংগ্রেসের সেই জোট বিশেষ কিছু দাগ কাটতে পারেনি। আর এদিকে দেখতে দেখতে বছর পেরিয়ে হাজির চন্দননগরের পুর ভোট।সম্প্রতি, পুরভোটে দলের সাফল্যের কথা তুলে ধরে তৃণমূলের শ্রীরামপুর-হুগলির সাংগাঠনিক সভাপতি স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, 'কলকাতার মতোই চন্দননগের ফলের ধারাবাহিকতা থাকবে।'

কোভিড আবহে অভিনবে প্রচারে চন্দনগরের প্রার্থীরা

কোভিড আবহে এবার অভিনবে প্রচারে নেমেছেন চন্দনগরের প্রার্থীরা। ২ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী মোহিত নন্দী তার এলাকায় ছটি বুথে টেলি কলার বসি প্রচার সারছিলেন এতদিন। ওয়ার্ডের সবার বাড়ির অভিভাবকদের ফোন নম্বর জোগাড় করেচেন তিনি। খাতা খুলে বাড়ি বাড়ি ফোন করে তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেবার আর্জি জানিয়েছেন। তবে একজনের থেকে অপরজন যেনও আরও এগিয়ে। ৪ নং ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী অনিমেষ বন্দ্য়োপাধ্যায় তিনি প্রচারের জন্য বাড়ি বাড়ি স্যানিটাইজেশনকে বেছে নিয়েছেন। তবে ১৩ নং ওয়ার্ডের শুভজিৎ সাউ ডিজিট্যালিই এতদিন প্রচার সেরেছেন। ২৪ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় আবার কোনও দেওয়াল লিখন করেননি। তিনি তিনি শহর জুড়ে ছবি একে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার বার্তা দিয়ে গিয়েছেন।

অন্যতম হাতিয়ার প্রস্তাবিত ইস্তেহার

মূলত চন্দননগরে এবার শাসকদলের অন্যতম হাতিয়ার প্রস্তাবিত ইস্তেহার। নিকাশি নর্দমা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন থেকে শুরু করে সড়ক ব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নত করা , জল সরবারহ, শৌচাগার ব্যবস্থার উন্নতি, শিক্ষার উন্নতি, , স্বাস্থ্য, সমাজকল্যণ এবং সংষ্কৃতিমূলক উন্নয়ন-সহ একাধিক ইস্যুতে এবার ভোট জয় করে নিতে চায় তৃণমূল। এদিকে চন্দননগরেএবং সংলগ্ন এলাকায় নিকাশ ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যা ছিল ছিল দীর্ঘদিনের। ভোটের দোরগড়ায় এই ইস্যুতে সরব হয়েছে একাধিকবার বিজেপিও। মশারি নিয়ে ভোট প্রচারে নেমেছে পদ্ম শিবির। ভোট পিছিয়ে গিয়ে আরও বাড়তি সময় সব প্রার্থীরাই পেয়েছে। তবে শেষবারের পুরভোটের পর একুশের বিধানসভা নাকি কলকাতা পুরসভার ফলাফল প্রভাব ফেলবে নাকি পুরোপুরি এক অন্য অঙ্কের আসনে নয়া সমীকরণ তৈরি করবে চন্দননগর নির্বাচন, তা ১২ ফেব্রুয়ারিই শেষ কথা বলবে।

Share this article
click me!