শীতের মরশুমে যদি বাহারি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে আজই বেড়িয়ে পড়ুন খিড়াইয়ের পথে। ২ থেকে ৩ ঘন্টার সফরেই পৌঁছে যাবেন খিড়াইতে। ফুলের চাষের জন্য বিখ্যাত খিড়াই। সেই সঙ্গে এখানের মানুষরাও ফুল চাষের হাত ধরে উপার্জনের বিকল্প পথ খুঁজে পেয়েছেন।
পাহাড়ের কোলে বাহারি ফুলের (Flower) সমাহার দেখে চোখ জুড়ায় না, এই রকম মানুষের সংখ্যা খুবই কম। আসলে ফুল নিজেই একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক। আর পাহাড়ি সৌন্দর্যের মাঝে রংবে রঙের ফুল সেই সৌন্দর্যায়ণের মাত্রাকে আরও কিছুটা বাড়িয়ে দেয়। একজন প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ পাহাড়ের বুকে গজিয়ে ওঠা বেনামী ফুলের (Flower Farming) প্রেমেও নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। তবে এই রকম ফুলের সৌন্দর্য দেখতে সবসময় পাহাড়ের ডাকে সাড়া দিতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। শীতের মরশুমে যদি বাহারি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে আজই বেড়িয়ে পড়তে পারেন। মাত্র কয়েক ঘন্টার সফরেই আপনি ফুলের বাগানের মাঝে দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করার এক দারুণ সুযোগ পেয়ে যাবেন। এই রাজ্যেই রয়েছে ফুলের (Flower) চাদরে মোড়া এক বিশেষ জায়গা। কলকাতা থেকে ৩ ঘন্টা আর হাওড়া থেকে ট্রেনে ২ ঘন্টার জার্নিতেই পৌঁছে যাবেন এই খিড়াইতে (Khirai)।
বলাই বাহুল্য, ফুল চাষ আর তার সৌন্দর্য্যের জন্য খিড়াই আজ পর্যটন কেন্দ্রে (Tourism Spot) পরিণত হয়েছে। আর সেখানে একবার পৌঁছে গেলে আপনি বাহারি ফুলের সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার সুযোগ পাবেন। আসলে ফুল কে না ভালবাসে...ঘরের সৌন্দর্যায়ণ থেকে শুরু করে নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে ফুলের (Flower) জুড়ি মেলা ভার। আর এই ফুল চাষের হাত ধরে এই এলাকার অনেক মানুষ তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। খিড়াইয়ের ফুল চাষ আজ এতটাই সমৃদ্ধ যে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বহু মানুষে তাঁদের উপার্জনের বিকল্প পথ খুঁজে পেয়েছেন। খিড়াইতে ফুলচাষের ওপর ভর করে বহু মহিলা ফুলের মালা বানিয়ে টাকা উপার্জনের পথ প্রসস্থ করেছেন।
আরও পড়ুন-Business Idea-চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করতে চাইছেন, তাহলে শুরু করুন ড্রাগন ফলের ব্যবসা, মাসে আয় করুন লাখ টাকা
আরও পড়ুন-Business Idea-সখেই সাফল্য,করোনা পরিস্থিতিতে এক গৃহবধূর ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার গল্প
আরও পড়ুন-Business Idea-কম পুঁজি বিনিয়োগে মোটা আয়ের সুযোগ,শুরু করুন রসুন চাষ,৪ লাখ টাকা উপার্জনের সুযোগ
খিড়াইতে ফুলের চাষের জন্য এটি আজ পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই পর্যটকরা যখন এই স্থান ভ্রমণ করতে আসেন তখন তাঁদের থেকেও একটা উপর্জনের পথ খুলে যায় খিড়াইয়ের জন্য। বিশেষত শীতকালে এখানে বাহারি ফুলের সমাহারে একেবারে নতুন রুপে নতুন সাজে সেজে ওঠে খিড়াই। এই সময় এখানে ভিড় জমায় পর্যটকরাও। কলকাতা বা তার আশেপাশের এলাকা থেকে খুব অল্প সময়ের সফরেই পৌঁছে যাওয়া যায় খিড়াইতে। চলতি বছরে শীতের মরশুম প্রায় শেষের মুখে, এই সময় যদি আপনি একবার খিড়াইমুখী হন তাহলে কিন্তু শীতের শেষটা বেশ এনজয় করতে পারবেন আপনি।
সিমেনানেমার পর্দায় আমরা ফুল বাগানের মধ্যে নায়ক-নায়িকার মিষ্টি প্রেমকাহিনিতে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে যৌবন হৃদয়। যদি উদাহরণস্বরুপ বলা হয়, তাহলে সিলসিলা ছবিতে (Bollywood Movie) একদিকে টিউলিপের সৌন্দর্য আর তার মাঝেই জমে উঠেছিল অমিতাভ-রেখার মিষ্টি মধুর প্রেমকাহিনি যেমন আজও ভোলেনি দর্শক, ঠিক তেমনই ডিডিএলজি-তে শাহরুখ-কাজলের সরষে ক্ষেত্রের রোম্যান্সে গা ভাসায় জেন ওয়াই। বাংলার বুকেও যে এই সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, তারই জ্বলন্ত উদাহরণ খিড়াই (Khirai)। বিগত কয়েক দশকে খিড়াইতে ফুল চাষের জন্য বেশ কিছু চাষীকে নিয়োগ করা হয়েছে। এর ফলে তাঁরা কাছে খুলে গেছে উপার্জনের একটি পথ।
মার্চ থেকে নভেম্বর, এই সময়টায় খুবই ব্যস্ত থাকেন ফুল চাষীরা। এই সময়টাকেই কার্যত ফুল চাষের জন্য আদর্শ সময় হিসাবে গণ্য করা হয়। খিড়াইয়ের ফুলের চাষ এতটাই বিখ্যাত যে এই ফুল গৃহকর্তীরা হোলসেল মার্কেট বিক্রি করে নিজেদের উপার্জনের রাস্তা খুঁজে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আজকাল হালফিলের ফ্যাশনে ফুলের গয়নার (Flower Jewellery) চাহিদাও প্রচুর। বিশেষ করে বিয়ের মরশুমে ফুলের গয়নায় সেজে ওঠে নববধূরা। খিড়াই-এ চাষ করা সেই ফুল দিয়ে বানানো হয় সেই গয়নাও।
খিড়াইতে দীর্ঘদিন ফুল ও সবজি চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পিন্টু হালদার । তিনি জানান, শীতের মরশুম (Winter) ফুল চাষের (Flowe Firming) জন্য আদর্শ। এই সময় ফুলের গ্রোথ হয় সবচেয়ে ভাল। কিন্তু আজকাল দূষেণের পরিমান যে হারে বাড়ছে তাতে ফুল চাষে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তবে সরকারের তরফে এক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দূষেণের হাত থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তথা ফুলকে রক্ষা করতে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের (Botanist) পাঠানো হয়। তাঁদের সাহায্যেই উন্নত পদ্ধতিতে সুরক্ষিত উপায়ে ফুলের চাষ করা হয়ে থাকে।
করোনা পরিস্থিতিতে বিগত দুবছরে খিড়াইতে (Khirai) আসা পর্যটকের (Tourist) সংখ্যা বেশ খানিকটা কমে গিয়েছিল। তবে এবারের শীতে ফের ফুলের সৌন্দর্য দেখতে খিড়াইতে প্রকৃতি প্রেমীরা ভিড় জমিয়েছেন এমনটাই বললনে, মিনতি দাস। ফুলের মালা তৈরি করে দিনযাপন করেন তিনি। অতিমারি পরিস্থিতিতে খিড়াইতে পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাঁদের মত মানুষদের পেটে টান পড়েছিল। সেই সময় কোনও বিক্রিবাটা ছিল না বললেই চলে। তবে এই শীতে ফের চাঙ্গা হয়েছে ফুলের বাজার। খিড়াইতে হওয়া ফুলের চাষ গোটা ভারতে বিখ্যাত। আর সেখানকার মানুষদের জন্য এটাই হল তাঁদের রুজি-রুটি। দিল্লি (Delhi), মুম্বই (Mumbai), হায়দরাবাদ (Hyderabad), কানপুর (kanpur) ও ব্যাঙ্গালোরের (Bangaluru) মত শহরে প্রতিদিন ফুল পাঠানো হয় ট্রেনে করে।