বহু বিতর্কের পর রাজ্যের মুখ্যসচিবের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু, তারপরও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। সোমবার ফের আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া চিঠি পাঠাল কেন্দ্র। গতমাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না আলাপন। আর বৈঠকে অনুপস্থিতির জন্য কেন তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে না সেবিষয়ে তাঁর কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তাঁকে একমাস সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে যদি তিনি জবাব না দেন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন- প্রাপ্ত নম্বরে খুশি না হলে কবে হবে দ্বাদশের ঐচ্ছিক পরীক্ষা, সুপ্রিম কোর্টে জানাল সিবিএসই
গত মাসের শেষের দিকেই ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পড়েছিল বঙ্গে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজ্যের একাধিক জায়গা। আর সেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। একটি পর্যালোচনা বৈঠকের আয়োজনও করা হয়েছিল। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি ডাকা হয়েছিল আলাপনকেও। যদিও তাঁরা দু'জনেই ওই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। যা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাত শুরু হয়েছিল। কেন্দ্রের অভিযোগ, কলাইকুন্ডায় পৌঁছে নরেন্দ্র মোদীকে রাজ্যের আমলাদের জন্য ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এরপর মুখ্যসচিবকে ফোন করে জানতে চাওয়া হয় যে তিনি বৈঠকে যোগ দিতে চান কি না। কিন্তু, মুখ্যসচিব ও মুখ্যমন্ত্রী দু'জনেই বৈঠক কক্ষে ঢোকার পর প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান সংক্রান্ত একটি ফাইল তুলে দিয়েছিলেন। আর তারপরই বৈঠক না করে ওই ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। কেন্দ্রের অভিযোগ, ওই বৈঠকে যোগ না দিয়ে কেন্দ্রের নির্দেশকে অমান্য করেছেন আলাপন। এরপরই তাঁকে নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাত শুরু হয়। এমনকী, আলাপনকে দিল্লিতে বদলি করার জন্য কেন্দ্রের তরফে চিঠি পাঠানো হয়। তখনই তড়িঘড়ি মুখ্যসচিবের পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। তাঁকে আগামী তিনবছরের জন্য নিজের মুখ্যউপদেষ্টার পদে নিযুক্ত করেন মমতা।
আরও পড়ুন- ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ রাজ্যে, বড় ঘোষণা মমতার
এর পরেই বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের আওতায় আলাপনকে শোকজ করে কেন্দ্র। ৩ জুন লিখিত জবাব দিল্লিতে পাঠান আলাপন। তাতে তিনি জানান, মুখ্যসচিব হিসেবে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করাই তাঁর প্রধান কর্তব্য ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল। যদিও তাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট হয়নি কেন্দ্র। এরপর ফের আজ তাঁকে ফের কড়া চিঠি পাঠাল কেন্দ্রীয় কর্মীবর্গ মন্ত্রক। তাতে বলা হয়েছে, আলাপন শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন। লিখিতভাবে নিজের বক্তব্য জানাতে পারেন তিনি। অথবা আত্মপক্ষ সমর্থনে সশরীরে উপস্থিত হয়েও বক্তব্য জানাতে পারেন। তার জন্য তাঁকে ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
আর যদি তিনি জবাব দিতে ব্যর্থ হন তাহলে সর্বভারতীয় প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার ৮ এবং ৬ নম্বর বিধি অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। যার আওতায় অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন তিনি। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি তিনি উত্তর না দেন তাহলে শৃঙ্খলাভঙ্গ নিয়ে আলাদা করে তদন্ত হবে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে কেন্দ্র।