সাড়ে ন'শো গ্রামের খাঁটি সোনা, এখানে দেবী থাকেন সশস্ত্র পাহারায়

  • সারা বছর থাকেন ব্যাঙ্কের লকারে।
  • পুজোর চার দিন সশস্ত্র পুলিশি পাহারায় নিয়ে আসা হয় তাঁকে।
  • দর্শনার্থীদের জন্য পুরুলিয়ার জয়পুরের রাজবাড়ির মন্দিরে রাখা হয় কনক দুর্গাকে। 

সারা বছর থাকেন ব্যাঙ্কের লকারে। পুজোর চার দিন সশস্ত্র পুলিশি পাহারায় নিয়ে আসা হয় তাঁকে। দর্শনার্থীদের জন্য পুরুলিয়ার জয়পুরের রাজবাড়ির মন্দিরে রাখা হয় কনক দুর্গাকে। 

এই পুজোর সামনে থমকে যায় কলকাতার একাধিক থিমের পুজো।  বিশাল বাজেটের প্রয়োজন হয় না দর্শনার্থী টানতে। কারণ দেবী নিজেই এখানে অমূল্য রতন। বলতে গেলে,রাজ্যের অন্য়তম মূল্যবান দুর্গা পুজো হয় পুরুলিয়ার জয়পুরের রাজবাড়িতে। প্রায় সাড়ে ন'শো গ্রাম ওজনের খাঁটি সোনা দিয়ে গড়া হয়েছে কনক দুর্গার মূর্তি। মা দুর্গার বিগ্রহ তৈরি হয়েছে মূল্যবান মণি,মুক্তো ও হীরে দিয়ে। 

Latest Videos

এখানেই থেমে থাকে না দেবীর আড়ম্বর। প্রায় ৮০ কিলো ওজনের রূপো দিয়ে তৈরি হয়েছে দেবীর চালচিত্র। নিরাপত্তার কারণে সারা বছর ব্যাঙ্কের লকারে রাখা হয় দ্বিভুজা কনক দুর্গাকে। পুজোর সময় সশস্ত্র পুলিশি নিরাপত্তার বেষ্টনীতে রাজ পরিবারের ঠাকুর দালানে আনা হয় এই মূর্তি। পুজোর দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের জন্য ঠাকুর দালান চত্বরে অবাধ প্রবেশ থাকলেও পুলিশ ও সিসি টিভির নজরদারি থাকে সারাক্ষণ। বিজয়ার আচার অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়ার পরই কৈলাস নয় মা দুর্গা ফিরে যান যথারীতি ব্যাঙ্কের লকারে। পুজোর নিয়ম কানুন এবং রীতি এখানে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে গিয়েছে দর্শনার্থীদের কাছে। দর্শনার্থীরা পুজোর এই চারটি দিন গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন মূল্যবান এই সোনার দুর্গা চাক্ষুস করার জন্য।

রাজবংশের শেষ সেবায়েত বীরেন্দ্র নারায়ণ সিংদেও মারা যান গত বছরের শেষে। তাঁর ছেলে শংকর নারায়ণ সিংদেও পুজোর সূচনা প্রসঙ্গে জানালেন উত্তরসূরীদের ইতিহাস। ১৫৮০ সালের আগে জয়সিং এবং তাঁর তিন ভাই উজ্জয়নী থেকে ভাগ্যের খোঁজে জয়পুরে আসেন। সেই সময় ওই এলাকার সর্দার ছিলেন খামার মুণ্ডা। খামার মুণ্ডার এলাকায় প্রবেশের জন্য জয়সিংয়ের সঙ্গে তুমুল লড়াই শুরু হয়। জয় সিং খামার মুণ্ডাকে হত্যা করে অধিকার করেন ওই এলাকা। প্রতিষ্ঠা করেন রাজত্ব।  নিজের নামানুসারে ওই এলাকার নাম দেন জয়পুর। আনুমানিক ১৭৬৬ সাল থেকে খামার মুণ্ডার কাছ  থেকে ছিনিয়ে নেওয়া খড়্গকে ইস্ট দেবতা হিসেবে মেনে নিয়ে সূচনা হয় পুজোর। সেই সময় সারা বাংলায় দুর্গাপুজোর প্রসার ঘটেছিল। সেই দেখে উৎসাহিত হয়ে  জয় সিং সেই পুজো শারদীয় উৎসবের আকার দেন শক্তির এই আরাধ্য দেবীকে। হিন্দু শাস্ত্রীয় মতে বেদিতে নবপত্রিকা ও খাড়ার পুজোর চলে আড়ম্ভরের সঙ্গে। পুজোয়  মেতে ওঠেন আদিবাসীরাও। জয় সিংয়ের বংশের সপ্তম পুরুষ কাশীনাথ সিং-এর আমলে ১৯৬৪ সালে পুজোর সময় খড়ের চালাবাড়িতে প্রদীপ থেকে কোনও রকমে আগুন লাগে। ভস্মীভূত হয়ে যায় ঠাকুরবাড়ি। সেই সময় খড়ের বদলে খাপরার মন্দির তৈরি হয়।

কিন্তু; এই ঘটনাকে অমঙ্গল বলে মনে হয় কাশীনাথ ও তাঁর পরিবারের। ঘটনার রাত্রেই স্বপ্নাদেশ পান কাশীনাথ সিং। বেনারসের কনক দুর্গার আদলে বিগ্রহ গড়ে জয়পুরে প্রতিষ্ঠা করে পুজোর নির্দেশ ওই স্বপ্ন পান কাশীনাথ। তিনি সেই সময়ই তিনি মানত করেন যে, পরের বছরের মধ্যেই ঠাকুরবাড়িতে সোনার ওই বিগ্রহের পুজো করবেন। ধন সম্পত্তির অগাধ পরিমাণে থাকায় তখনকার দিনে এক সের অর্থ্যাত্‍ ১০৫ টি স্বর্ণ মুদ্রা (সাড়ে ন'শো গ্রাম ওজন) দিয়ে দ্বিভুজা মহামায়ার বিগ্রহ এবং প্রায় দু মন ওজনের রূপো দিয়ে বিগ্রহের চালচিত্র তৈরি করতে দেওয়া হয়। কাশীনাথ সিং-এর নির্দেশ মতো বেনারসের কারিগর ও শিল্পীরা এক বছরের মধ্যেই সেই মূর্তি তৈরি করে দেন। ১৮৬৫ সাল থেকে ধূম ধামের সঙ্গে জয়পুরের ঠাকুর বাড়িতে পূজিতা হন সোনার দেবী দুর্গা। 

পরে অবশ্য ঠাকুরের দালান নির্মাণ কড়া হয়। কাশীনাথের মৃত্যুর পর সেই পুজোর ভার ছিল পুত্র ভিক্ষাম্বর সিং-এর। ভিক্ষাম্বরের মৃত্যু হয় ৮০ বছর বয়সে ১৯২১ সালে। তাঁর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে কন্যা ব্রজকুমারী সেই পুজোর দায়িত্ব পান। তাঁর বিয়ের পর জয়পুরেই থাকতেন তিনি। ব্রজকুমারীর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র বীরেন্দ্র নারায়ণ সিংদেও মামাবাড়ির সম্পত্তি ও পুজোর দায়িত্ব পান। ১৯৭০ সালে একবার ডাকাতির ঘটনা ঘটে রাজবাড়িতে। দুষ্কৃতীরা অন্যান্য মুল্যবান জিনিস নিতে পারলেও কোনক্রমে সোনার বিগ্রহ নিয়ে যেতে পারে নি। এই ঘটনার পরই উদ্বেগের পুলিশের এবং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা রাজবাড়িতে যান। রাজপরিবারের সদস্যদের মুল্যবান বিগ্রহ বাড়িতে রেখে ঝুঁকি না নেওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা। ওই বিগ্রহ ব্যাঙ্কের লকারে রাখার পরামর্শ দেন পুলিশের আধিকারিকরা। সেই থেকে আজও সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে ওই মূল্যবান বিগ্রহ ব্যাঙ্কে রাখা হয়। বারোয়ারি না হলেও পুজোর দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের ভিড়ে রাজপরিবারের উঠোন সর্বজনীন পুজোর রূপ পায়।

রাজবংশের সদস্য শংকর নারায়ণ সিংদেও বলেন, গত ৫ বছর ধরে চিরাচরিত পশু বলি প্রথার বিলোপ ঘটানো হয়েছে। বেনারসের পুরোহিত ও পন্ডিতদের পরামর্শ মেনে পুজোর সময় বলি বন্ধ করা হয়েছে। আক্ষেপের সঙ্গে রাজ পরিবারের সদস্যরা জানালেন ঐতিহ্যবাহী হওয়া সত্বেও রাজপরিবারের এই পুজোর খরচ বাবদ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নাম মাত্র টাকা দেওয়া হয়। যেখানে রাজ্যের সম পর্যায়ের রাজবাড়ির পুজো খরচ অনেক বেশি অর্থ দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। এই বিষয়টি ভীষণ রকম যন্ত্রণা দেয় বর্তমান সদস্যদের।   

Share this article
click me!

Latest Videos

সনাতনীদের বিশাল মিছিল! Bangladesh-এ চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবীতে Kolkata উত্তাল |Chinmoy Krishna Das
এটিএম লুঠের ছক ভেস্তে দিলো পুলিশ! ভীন রাজ্যের যোগ, চাঞ্চল্য New Barrackpore-এ | North 24 Parganas
Suvendu Adhikari : 'সোমবার বর্ডার-এ বুঝিয়ে দেবো ইউনূসকে' #shorts #suvenduadhikari #bangladeshcrisis
'এক চিন্ময় কারাগারে, লক্ষ চিন্ময় ঘরে ঘরে' Chinmoy Krishna Das-এর মুক্তির দাবীতে উত্তাল Kolkata
Suvendu Adhikari : বাংলাদেশের ইউনূসকে যা বলল শুভেন্দু! #shorts #suvenduadhikari #bangladeshcrisis