স্বপ্নাদেশে লালগোলার রাজা রাও রামশঙ্কর নির্দেশ পান, এই রাজ পরিবারের দ্বারা অধিষ্ঠিত হয়েই কালীমন্দির পূজিত হবেন দেবী। সেইমত মন্দিরের পিছন দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখা নদীতে হঠাৎই একটি দেবীর কাঠামো ভাসতে দেখা যায়।
অজানা ইতিহাস (Unknown History) আর রহস্যের (Mystery) মোড়কে নানান তথ্য ছড়িয়ে রয়েছে মুর্শিদাবাদের(Murshidabad) অন্দরে। দুই শতাব্দীরও বেশী সময় ধরে সীমান্ত শহর লালগোলা(Lalgola) কালী মন্দিরের(Kali Mandir) মা কালী পূজাকে (Kalipuja) কেন্দ্র করে রয়েছে সেই বহু অজানা ইতিহাসের সমৃদ্ধ ভান্ডার। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শুরু করে রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিদেবী, এমনকি কবি কাজী নজরুল ইসলামের আনাগোনা ছিল এই মন্দিরে। এখানে এসেই যোগীবর বরদাচরণ মজুমদারের মতন ব্যক্তিত্বদের মাধ্যমেই যোগের জগতে প্রবেশ কবির। মুর্শিদাবাদের লালগোলার শ্রীমন্তপুরে অবস্থিত এই কালী মন্দিরের সুখ্যাতি এখন অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়েছে।
তাই কালীপুজো থেকে শুরু করে পরের কয়েকটা দিন টানা দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন রাতদিন আসছেন এমন অজানা নানান দুর্লভ ঘটনা চাক্ষুষ করতে প্রতিদিন। আর সেই নানান মুহূর্তের সাক্ষী এশিয়ানেট নিউজ বাংলাও। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের নানান কাহিনী তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।সালটা সম্ভবত ১৭৯০। জানা যায়, সেই সময় স্বপ্নাদেশে তৎকালীন লালগোলার রাজা রাও রামশঙ্কর নির্দেশ পান, এই রাজ পরিবারের দ্বারা অধিষ্ঠিত হয়েই কালীমন্দির পূজিত হবেন দেবী।সেইমত এই কালীমন্দিরের পিছন দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখা নদীতে হঠাৎ ই একটি দেবীর কাঠামো ভাসতে দেখা যায়।পরে এতেই মাটি লাগিয়ে দেবীর প্রায় ৪ফুট উচ্চতর একটি মূর্তি তৈরি করা হয়।
এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি তথা যোগীবর বরদাচরণ মজুমদার এর উত্তরসূরী পার্থ মজুমদার জানান, মা কালী স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেছিলেন তৎকালীন রাজা যেন পূজার জন্যে বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার মণ্ডল গ্রাম থেকে পুরহিত আনার ব্যাবস্থা করে,আর সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন রাজা। পরে ত্রৈলক্ষ্য ভট্টাচার্য ও ধর্মদাস পণ্ডিত নামের ওই দুই পূজারী কে এনে তাদের স্থায়ী ভাবে বসবাসের সু ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলেন রাজা রামশঙ্কর রাও।
এমন কি আমাদের বিদ্রোহ কবি কাজী নজরুল,যিনি যশস্বী পণ্ডিত বড়দা চরন মজুমদারের সাথে নিয়ম মাফিক দেখা করতে আসতেন।ঐতিহাসিক আর সম্প্রীতির মেল বন্ধনের ফল এই শতাব্দী প্রাচীন কালী মন্দির। বড়দা বাবুর হাত ধরেই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লালগোলায় টানা প্রায় ১০ বছর কাটিয়ে গেছেন। এমনকি বড়দের বাবুর গৃহে বসেই বহু শ্যামা সংগীত রচনা করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে হারমোনিয়াম নিয়ে নিয়মিত সঙ্গীত চর্চা করতেন তার বাড়িতে বসেই।
সবমিলিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের লালগোলায় আগমন ও কালী মন্দিরের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া নিয়ে বড়বাবুকে ঘিরে বহু স্মৃতি আজ ইতিহাসের পাতায় মলিন হয়ে গেছে। এদিকে প্রতিবছর নিয়ম করে কালী পুজো উপলক্ষ্যে বিশেষ ভাবে সেজে ওঠে এই স্মৃতি বিজড়িত শৃঙ্খলিত মন্দির চত্বর। কয়েকদিন ধরে টানা দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষজন বিশেষ করে আসেন এখানে।
আরো জানা যায়, রাজার পরবর্তী উত্তরসূরি যোগীন্দ নারায়ণ রায় আনুমানিক ১৯১৩ সাল নাগাত মন্দির সংস্কার পুনর্নির্মাণ করেন। এই মন্দির চত্বরের মধ্যেই মহাদেবের পূজার জন্য আলাদা আলাদা শিব লিঙ্গের মন্দিরও নির্মাণ করা হয়। এই কালী মন্দিরের পুজোর মাহাত্ম রয়েছে আরও। বছর বছর নতুন করে মাটি দিয়ে আলাদা আলাদা দেবীর মূর্তি নির্মাণ হয় না এখানে, সেই শতাব্দী প্রাচীন একই মূর্তিতে চলে আসছে পূজা।