সমরেশ মজুমদার ২৫ এপ্রিল মস্তিষ্কের রক্তক্ষণের কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দীর্ঘ দিন ধরেই স্লিপ অ্যাপমিয়াতে ভুগছিলেন। এদিন তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রয়াত কালবেলার স্রষ্টা বিখ্যাত বাংলি সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর সোমবার কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। কালজয়ী উপবন্যাস উত্তরাধিকার ,কালবেলা, কালপুরুষ ও মৌশলকালের স্রষ্টা তিনি। এই বইগুলিতে উত্তাল বাংলায় অনিমেশ আর মাধবীলতার প্রেম আর টানাপোড়েনের কথা বলেছেন। বাংলা সাহিত্যের বিখ্য়াত অর্জুন চরিত্রে স্রষ্টাও তিনি।
হাসপাতাল সূত্রের খবর গত ২৫ এপ্রিল মস্তিষ্কের রক্তক্ষণের কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দীর্ঘ দিন ধরেই স্লিপ অ্যাপমিয়াতে ভুগছিলেন। ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি হয়। এদিন চিকিৎসকদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে তিনি প্রয়াত হন।
সমরেশ মজুমদার বাংলা সাহিত্যের আকাশে উজ্জ্ল নক্ষত্র। সুদূর জলপাইগুড়ে থেকে কলকাতায় এসেছিলে পড়াশুনার জন্য। স্কটিশচার্চ কলেজ বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করেন। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সালটা ১৯৭৫, দেশ পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস দৌড়। তারপর অবশ্য তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর বলিষ্ঠ কলমে ধরা পড়েছে স্বাধীনতা আমল থেকে শুরু করে হাল আমলের জলছবি- উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরু আর মৌষলপর্ব। যেখানে অনিষের মাধবীলতার প্রেম আর তাঁর ছেলে অর্কর জবনীর কঠিন লড়াইয়ের কথা তিনি লিখেছিলেন।
সমেরেশ মজুমদারের শৈশব কেটেছিল জলপাইগুড়ির গয়েরকাটা চাবাগানে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে ছাত্র তিনি। জলপাইগুড়ি বা ডুয়ার্স তিনি নিজের হাতের তালুর মতই চেনেন। এমন অনেক বাঙালি পাঠাক বা তাঁর অনুগামী রয়েছেন, যাদের তরাই-ডুয়ার্সের প্রতি প্রেম বা টান সমরেশ মজুমদারের লেখা পড়ে। তাঁর বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র অর্জুন। সেই অর্জুন আর কেলবেলার অনিমেষের চোখ দিয়ে দেখেই ডুয়ার্স চিনেছেন। শুধু প্রকৃতি নয়, তাঁর লেখায় উঠে এসেছে সমসাময়িক রাজনীতি থেকে সমাজ সবকিছুই। সেই সঙ্গে ধরা পড়েছে বাংলার সামাজিক ও রাজনীতিক পরিবর্তনও। লেখায় গুরুত্ব পেয়েছে বাংলার মহিলারা।সমরেশ মজুমদারের লেখা নিয়ে সিনেমা আর ধারাবাহিক তৈরি হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। সাহিত্য একাডেমি-সহ একাধিক পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি।