যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ঠিক কোন কোন পদ্ধতিতে নবাগত ছাত্রদের ‘স্বাগত’ জানানো হয়? প্রাক্তনীরা দিলেন বিবরণ

স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যু কীভাবে হল তা ‘তদন্তসাপেক্ষ’ হলেও, ছাত্রদের মধ্যে বড় প্রশ্ন, সুদীর্ঘ কাল ধরে ছাত্ররা প্রত্যেকেই যেসমস্ত খবর সম্পর্কে অবগত, সেই খবর কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছল না এবং কোনও সুরাহা মিলল না কেন?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হস্টেলে এক ছাত্রের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় হয়েছে গোটা বাংলা, সর্বোপরি শহর কলকাতা। নদিয়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকতে আসা বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের নাম স্বপ্নদীপ কুন্ডু। ১০ অগাস্ট বৃহস্পতিবার ভোরে হস্টেলের নীচের তলায় ওই ছাত্রের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়, যাঁর পরনে ছিল শুধুমাত্র একটি গামছা। ময়নাতদন্তের পর দেখা গেছে, তাঁর মাথার হাড়ে চিড় ধরেছিল, পাঁজর এবং কোমরের হাড় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, পড়ে যাওয়ার পর আভ্যন্তরীণ ক্ষতির কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। শরীরে কোনও বাহ্যিক আঘাতের চিহ্ন না পাওয়া গেলেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ঠিক কোন কোন পদ্ধতিতে নবাগত ছাত্রদের ‘স্বাগত’ জানানো হয়, তা নিয়ে বেশ শোরগোল পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সম্মানীয় অধ্যাপকরা বর্ণবিদ্বেষ সম্পর্কিত ঘৃণ্য মন্তব্য করে থাকেন, বহু বিখ্যাত যুক্তিবিদও কলেজের ক্লাসে নারীবিদ্বেষমূলক কথা বলেন, এমনকি, পড়ুয়ারা ক্লাস চলাকালীন সামান্য অমনোযোগী হলে সর্বসমক্ষে দাঁড় করিয়ে তাঁদের কার্যত হেনস্থা করা হয়ে থাকে। তবে, এসব শুধুই ক্লাসের অভ্যন্তরের কথা। হস্টেলের অভ্যন্তরের ছবি আরও ভয়াবহ। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই কলেজের ক্যাম্পাস এবং হস্টেল ঘুরে দেখে এসেছেন আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। হস্টেল চত্বর ঘুরে দেখেছেন কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) ও ডিসি এসএসডি। কিন্তু, হস্টেলের বাইরে (বাধ্য হয়ে) থাকা কিছু পড়ুয়া হস্টেলের পরিস্থিতি সম্পর্কে মারাত্মক কিছু অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের প্রত্যেকেই একটি বিশেষ শব্দ ব্যবহার করেছেন, তা হল ‘ইন্ট্রো’।

Latest Videos

জনৈক পড়ুয়া নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, কলেজের ক্লাসের পর নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে হস্টেলে ঢোকার পরপরই অন্যান্য উঁচু ক্লাসের ‘দাদা’-রা প্রথম বর্ষের ছাত্রের ঘরে শিষ দিয়ে উঁকি দেন। তারপর জিজ্ঞেস করেন, ওই ছাত্রের ‘হস্টেলের বাবা’ কে? উল্লেখ্য, হস্টেলে ওই ছাত্র কোন ঘরে থাকবেন, তা কোনও সুপার বা অন্য আধিকারিক ঠিক করে দেন না। তা ঠিক করে দেয় হস্টেলের মেস কমিটি। এই মেস কমিটির যে সিনিয়র ছাত্র ওই প্রথম বর্ষের ছাত্রকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, তাঁকেই ‘দাদা’-রা ‘হস্টেলের বাবা’ বলে সম্বোধন করতে বলেন। এরপর প্রত্যেকদিন রাতে শুরু হয় ‘ইন্ট্রো’-পর্ব। সেখানে নতুন ছাত্রকে জামাকাপড় পরতে দেওয়া হয় না। অন্তর্বাস পরে সমস্ত বড় দাদাদের দরজায় দরজায় ঘুরে নিজের নাম থেকে শুরু করে নিজের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য দিতে হয়। এর মধ্যে, নিজের জন্মদিন এবং সেই জন্মদিনের সঙ্গে হিসেব করে নিজের বাবা-মায়ের যৌন সঙ্গমের তারিখ কত হতে পারে, সেই তথ্য-ও সিনিয়রদের কাছে জানাতে হয়। তারপর রয়েছে নিজের শরীরের বর্ণনা দেওয়া (যার মধ্যে নিজের যৌনাঙ্গের বর্ণনা দেওয়াও বাধ্যতামূলক)।

সম্পূর্ণ বর্ণনায় নবাগত ছাত্র যদি একটাও ইংরেজি শব্দ বলেন, তাহলে তাঁকে দরজার খিল দিয়ে মারা হয়, অথবা ওঠবস করানো হয়। যতদিন না পর্যন্ত তাঁর প্রত্যেকটি বর্ণনা সমস্ত সিনিয়র দাদার মুখস্থ হয়ে যাচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত তাঁকে ওই ‘ইন্ট্রো’ দিয়ে যেতে হয়। একজন ছাত্র তাঁর ব্যক্তিগত পোস্টে লিখেছেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যে সেলুন আছে, সেখানে সিনিয়র ‘দাদা’-রা নির্দেশ দিয়ে রাখেন যে, প্রথম বর্ষের কোনও ছাত্র চুল কাটতে এলে, তাঁকে যেন মিলিটারি ছাঁট কেটে দেওয়া হয়। প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সহজে চিনতে পারার জন্য তাঁদের কাছেও এই হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখা থাকে। এছাড়া সপ্তাহে একদিন করে সমস্ত ‘দাদা’-দের জলের বোতলে জল ভরে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। সন্ধে ৬টার মধ্যে হস্টেলে ঢুকে যাওয়ার নির্দেশ থাকে এবং ক্লাসে আসা প্রত্যেক ছাত্রীর বর্ণনা সিনিয়র দাদাদের কাছে দিতে হয়।

ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দলবদ্ধভাবে ছাত্রদের স্টেজে তুলে তাঁদের হাতে যৌনাঙ্গের আকারে বানানো তিনটি করে বেলুন (একটি লম্বা বেলুন এবং দু’পাশে দুটি ছোট বেলুন) ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই বেলুন নিজের কোমরের নীচে ধরে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের অশ্লীল নাচ নাচতে বাধ্য করা হয়। এর ওপরেও রয়েছে, ‘সিনিয়র দাদা’-দের সিনিয়রিটির বাহুল্য। বহু ছাত্রদের অভিযোগ, প্রায় দশ থেকে পনেরো বছর আগের পাশ করে যাওয়া দাদা-রা এখনও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে থাকেন এবং তাঁরা এইসব জোরজুলুমে সর্বাগ্রে ভূমিকা নেন।

স্বপ্নদীপ কুণ্ডু হস্টেলের অন্য এক ছাত্রের ‘অতিথি’ হিসেবে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন। ছাত্রাবাসের ডিন অফ স্টুডেন্টস প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি ছাত্রাবাসে জায়গা না পেয়েও কীভাবে সেখানে বাস করছিলেন? অপরদিকে, সিনিয়র দাদা-দের ‘অত্যাচার’-এ হস্টেল ছেড়ে যাওয়া ছাত্রদের দাবি সত্যি বলে ধরে নিলে, এটাই প্রশ্ন ওঠে যে, পুরনো ছাত্ররা নতুনদের জায়গা ছেড়ে দেন না কেন? কোনও উচ্চ পদস্থ আধিকারিক নতুন ছাত্রদের থাকার জায়গা ঠিক করে দেন না কেন? হস্টেলে প্রথম দু-তিন দিন থাকার পর ছাত্ররা হস্টেল ছেড়ে অন্যত্র থাকার জন্য চলে যায়, এই খবর উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের কাছে থাকে কিনা, এই খবর থাকলে সেই কারণের তদন্ত হয় না কেন? স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যু কীভাবে হল তা ‘তদন্তসাপেক্ষ’ হলেও, ছাত্রদের মধ্যে বড় প্রশ্ন, সুদীর্ঘ কাল ধরে ছাত্ররা প্রত্যেকেই যেসমস্ত খবর সম্পর্কে অবগত, সেই খবর কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছল না এবং কোনও সুরাহা মিলল না কেন?

আরও পড়ুন-

Sex Toy: চরম যৌন সুখের আনন্দ পেতে ‘সেক্স টয়’-এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, জেনে নিন এর গুণাবলী

Tips For Good Luck: বাড়িতে পূজাপাঠের ক্ষেত্রে ১০টি মারাত্মক ভুল অবশ্যই এড়িয়ে চলুন

Hymenoplasty: যৌন সঙ্গমে ভার্জিনিটি-র আনন্দ ফিরিয়ে আনতেই কি হাইমেনোপ্লাস্টি-র দিকে ঝুঁকছেন মহিলারা?

Rakhi Purnima 2023: সাবধান! এবছর রাখী পূর্ণিমায় পড়তে চলেছে ভাদ্রের ছায়া, জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে উৎসবের তারিখ ও শুভ সময় কখন?

Share this article
click me!

Latest Videos

New Alipore-এ বস্তিতে বিধ্বংসী আগুন! পুড়ে ছাই একাধিক ঝুপড়ি, আগুন নেভাতে মরিয়া দমকল
‘Mamata Banerjee আজ TMC-র মুখ্যমন্ত্রী আছেন কাল জামাতের মুখ্যমন্ত্রী হবেন’ বিস্ফোরক Sukanta Majumdar
‘West Bengal-এ জঙ্গিদের সরকারের মুখোশ Mamata Banerjee’ Suvendu Adhikari-র ঝাঁঝালো তোপ মমতাকে
ক্যানিং-এ এসে ভেবেছিল ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকবে! রাতেই গ্রেপ্তার কাশ্মীরি জঙ্গি | Canning News Today
কেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করেছিল? আসল কারন ফাঁস করলেন Suvendu Adhikari, শুনলে চমকে উঠবেন