ট্রাফিক সিগন্যালে অবারিত দ্বার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের, কেন এমন সিদ্ধান্ত কলকাতা পুলিশের

গ্রিন করিডরের আওতায় চলে এলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও, গ্রিন করিডরের আওতায় থাকা ১৫ জন ভিআইপি-র তুলনায় আরও অনেক নেতা-মন্ত্রী যে এই সুবিধা নেবেন না- এমন গ্যারান্টি কলকাতা পুলিশ কিন্তু দিতে পারছে না।

 

Web Desk - ANB | Published : Nov 1, 2022 8:12 AM IST

২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী পদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিষেকের পর থেকে আরও এক অভিষেকের রাজনৈতিক যাত্রা গতি পেয়েছে। হরে দরে বাড়তে বাড়তে এই অভিষেক এখন এমন একটি জায়গায় এসে বিচরণ করছেন যে রাজ্য প্রশাসন বুঝিয়ে দিয়েছে যে তিনি একজন কেউকাটা- মানে সাধারণ আম আদমি নন-রীতিমতো ভিআইপি। নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারের পুষ্পমালায় সাজিয়ে তোলা ছাড়া আর কি কি কাজ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া ভার। তিনি তৃণমূল কংগ্রেস নামক রাজনৈতিক দলের একজন দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা হয়েছেন, নিজের রাজনৈতিক পরিচয় মহিমাকে ভিআইপি-র তকমায় ভূষিত করেছেন। রাজ্য প্রশাসন এবং রাজ্যের সামগ্রিক স্বার্থে তিনি ব্যক্তি হিসাবে কতটা গ্রহণযোগ্য-সেই উত্তর চাওয়াটাও বৃথা। আর একজন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতে রাতারাতি রাজ্যের মুখ্যসচিব পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজ্য সরকারের বিশেষ উপদেষ্টা পদে আসিন। এতে রাজ্য প্রশাসন এবং রাজ্যের মানুষের কি কৃপা লাভ হয়েছে- সে উত্তর হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ছাড়া আর কারও কাছে বোধগম্য নয়।

এমন দুই ব্যক্তিত্ব-কে নিয়ে কলকাতা পুলিশের একটি সিদ্ধান্তে বিতর্কের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতা পুলিশ ভিআইপি তালিকায় এমন একটা জায়গায় ফেলেছে যে এর দ্বারা এই দুই জন অবাধে কলকাতার বুকে যে কোনও রাস্তায় বন্ধ ট্রাফিক সিগন্যাল ভেদ করে চলে যাবেন। অনেকটা ওই রাজ-রাজাদের যুগে যেমন রাজা এবং তাঁর সভাসদরা রাস্তা দিয়ে গেলে প্রজাদের সরে দাঁড়াতে হত এবং বর্তমান সময়ে রাজ্য প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্তাব্যক্তি থেকে নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-সাংসদরা যেমন লাল ও নীল বাতি অবাধে জ্বালিয়ে রাস্তা দিয়ে গেলে সাধারণ জনমানবকে রাস্তা ছেড়ে দিতে হয়-অনেকটা তেমন-ই। মানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়দের কনভয় রাস্তায় বের হলে তার জন্য থমকে যাবে বাকিরা, তাঁরা নিরুপদ্রবে ট্রাফিক সিগন্যাল ভেদ করে চলে যাবেন।

কলকাতা পুলিশের সুত্র বলছে, যেভাবে যথেচ্ছারে নেতা থেকে শুরু করে মন্ত্রী এবং প্রশাসনের কিছু কর্তা ব্যক্তি অবাধে গ্রিন করিডরের ফায়দা লুঠছেন, তা থামাতেই রাজ্য প্রশাসন নতুন করে একটি তালিকা তৈরি করেছে। এখানে মোট ১৫ জন ভিআইপি-র নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই ১৫ জন ভিআইপি-র তালিকায় নাম রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়দের। এই তালিকায় আর যারা রয়েছেন তাঁরা হলেন- রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, বিধানসভার অধ্যক্ষ, বিরোধী দলনেতা, কলকাতার মেয়র, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ডিজি অফ বেঙ্গল, কলকাতা পুলিশের কমিশনার,কলকাতা পুলিশের স্পেশাল সিপি, এডিজি-আইন-শৃঙ্খলা।

এই তালিকায় যে ১৫ টি পদমর্যাদায় আসিন ব্যক্তিদের গ্রিন করিডর ব্যবহারের বৈধতা-কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তাতে আলাপন বন্দ্যোপাধ্য়ায়-এর সংযোজন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তোলে। এর সঙ্গে অবশ্য-ই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্তর্ভুক্তিকরণেও বিতর্ক তৈরি হতে বাধ্য।

গত কয়েক বছর ধরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তায় বাড়তি জোর দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। হরিশ মুখার্জি রোডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে রাস্তার অনেকটা অংশ দখল করে যেভাবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়েছে তা নিয়ে বারবার বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একাধিক তৃণমূল বিরোধী রাজনৈতিক দল এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন মনে করে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে একজন প্রথমসারির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তাঁকে জেড প্লাস ক্যাটিগরির নিরাপত্তা বলয়ে রাখা দরকার। স্বাভাবিকভাবেই এই সব ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসন সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। সুতরাং তাদের সেই অধিকার রয়েছে। এবারও যেভাবে গ্রিন করিডর ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তাতে যুক্তির তাৎপর্য যতটা স্পষ্ট হচ্ছে তার থেকে বড় হয়ে উঠছে এক রাজ্য প্রশাসনের বিতর্ক তৈরির অভ্যাসটা। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতেই পারে তাহলে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী কেন গ্রিন করিডরের সুবিধা পাবেন না? কিছুদিন আগে ডানকুনিতে ভয়ানকভাবে তাঁর গাড়িতে এসে লরি ধাক্কা মারে। জোর বাঁচা বাঁচেন স্নেহাশিস। অভিষেককে যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে তাতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা বা বিধায়ক ও সাংসদরা কি দোষ করলেন?

সালটা ছিল ২০১১। সদ্য ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছে। মহাকরণের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন হবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তুমুল মানুষের জয়োল্লাসে মুখ্যমন্ত্রী সেদিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মা-মাটি-মানুষের সরকার উপহার দেওয়ার। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই তার প্রতিফলনও দেখিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাস্তার যানজটে আটকে থাকা কালো গাড়িতে সামনের সিটে বসে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় গ্রিন করিডরের ফায়দা নিতে অস্বীকার করেছিলেন। সালটা ছিল ২০১১, আর এই সময়টা ২০২২। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কি প্রতিশ্রুতিও বদল হয়ে যায়! অতঃ কিম! বড়-ই আশ্বর্য এই দুনিয়া।

Share this article
click me!