সৌরভকে পেতে মরিয়া বিজেপি, আর সেই কারণেই কলকাতায় ৫ বিশ্বকাপ ম্যাচ! জল্পনা যখন তুঙ্গে

রাজনীতিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আগমন সম্পর্কে জল্পনা গত কয়েক বছর ধরেই গল্পের গরু গাছে ওঠার মতো জায়গায় পৌঁছেছে। কিন্তু, সমস্ত জল্পনাকে নসাৎ করে মহারাজ সৌরভ থেকে গিয়েছেন তাঁর নিজের জায়গাতেই।

 

Web Desk - ANB | Published : Jun 30, 2023 7:43 AM IST

সম্প্রতি একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সূচি ঘোষিত হয়েছে। আর এতে দেখা গিয়েছে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ৫টি ম্যাচ পড়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসিত বাংলায় বিশ্বকাপের এতগুলো ম্যাচ কেন? যেখানে বিসিসিআই-এর অন্দরমহলের অধিকাংশ শীর্ষপদেই বিজেপি-র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে খবর। সবচেয়ে বড় বিষয় অমিত শাহ-র পুত্র জয় শাহ যিনি এই মুহূর্তে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট। আর তাঁর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অন্দরে তাঁর নিয়ন্ত্রণ সর্বজন বিদিত। কারণ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিসিসিআই-এর অন্দরে জয় শাহর-র প্রবেশ ঘটেছিল। সৌরভ বিসিসিআই থেকে বিদায় নিলেও জয় শাহ-এর বিদায় হয়নি। বরং বিসিসিআই-এর সুপারিশে তিনি এখন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট। বিসিসিআই-এৎ অন্দরে যখন এমন পরিস্থিতি, তখন বাংলার বুকে বিশ্বকাপের ৫-৫টি ম্যাচ সত্যি অবাক করেছে বহু নিন্দুক। আর এই নিয়েই এখন নানা খবরে মুখরিত বাংলা সংবাদমাধ্যমগুলি। কেউ বলছেন সৌরভের কথা ভেবেই এত সংখ্যক ম্যাচ কলকাতায়।

সৌরভের কথা ভেবে ম্যাচ কলকাতায়! এই ধরনের যুক্তি যারপরনাই অবাক করছে সকলকে। এর পিছনে যুক্তি হিসাবে সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, আসলে সামনে ২০২৪-এর সাধারণ নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে বিজেপি। বাংলার বুকে সৌরভকে যদি বিজেপি-তে আনা যায় তাহলে সেটা বাংলার সাধারণ জনমানসে বিপুল প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে বলেই নাকি বিজেপি মনে করছে। যদিও, সরকারিভাবে এমন কোনও সম্ভাবনার কথা বা পরিকল্পনার কথা বিজেপি-র শিবির থেকেও পাওয়া যায়নি।

মিডিয়া রিপোর্টে আবার দাবি করা হয়েছে, কলকাতায় বিশ্বকাপের ৫ ম্যাচ ফেলার পিছনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র হাতযশ রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। সৌরভকে রাজনীতি আনা নিয়ে বিজেপি-র উদ্যোগ বলে গত কয়েক বছর ধরেই বারবার খবরের শিরোনাম তৈরি হয়েছে। সৌরভের সঙ্গে অমিত শাহ থেকে শুরু করে নানা বিশিষ্ট বিজেপি নেতাদের সাক্ষাৎ আরও এই জল্পনাতে মাত্রা যোগ করেছিল। এমনকী, যেভাবে রাতারাতি সবাইকে পিছনে ফেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তার পিছনেও অমিত শাহর-র হাতযশ ছিল বলে সেই সময়ও খবর চাওড় হয়েছিল। সেই সময় থেকেই জল্পনা ছিল সৌরভের পিছনে এভাবে বিজেপি-র সমর্থন জোগানো পিছনে রয়েছে নির্বাচনী অঙ্ক। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-তে যোগ দেননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু, এরপরও নানা খবরে দাবি করা হয়েছে সৌরভের জন্য নিজেদের পরিশ্রম বন্ধ করেনি বিজেপি। তারা নাকি আজও সৌরভকে তাদের দলে পেতে মরিয়া।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ক্রিকেট জীবন থেকেই বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষের কাছের জন বলেই পরিচিত। একটা সময় তাঁর সঙ্গে তৎকালীন পুরমন্ত্রী সিপিএম-এর অশোক ভট্টাচার্যের সখ্য দেখে ভেবেছিলেন সৌরভ বামপন্থী এবং আচিরেই সিপিএম-এর হয়ে রাজনীতিতে আসবেন। কিন্তু এই জল্পনার কোনও দিনই বাস্তবায়িত হয়নি। আবার পরবর্তী সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছের মানুষ হয়ে ওঠা সৌরভকে নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল যে এই বুঝি দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেট অধিনায়কদের একদম উপরের দিকে থাকা এই ব্যক্তি বোধহয় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন। কিন্তু সেই আশাতেও জল ঢেলেছিলেন সৌরভ। এরপর আসে বিজেপি-তে তাঁর যোগদানের সম্ভাবনার বিষয়টি। এখন এই বিশ্বকাপের ম্যাচ ঘিরে যে জল্পনায় আবার মাত্রা যোগ হয়েছে। কারণ বিশ্বকাপের ৫ টি ম্যাচের মধ্যে একটি হল সেমিফাইনাল। একটা সময় ছিল যখন মুম্বই এবং দিল্লির থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনে এগিয়েছিল ইডেন গার্ন্ডেন্স। অবশ্যই এটা জগমোহন ডালমিয়ার আমলে। কিন্তু ডালমিয়া পরবর্তী সময়ে ইডেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনে যতই লক্ষীর ভাড়ার উপর করে দিক না কেন, তাতে অবেহলার বহরটা কমেনি। এখন আইপিএল-এর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ম্যাচের আয়োজনে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড রোটেশন পদ্ধতির কথা বললেও, তাতে দেখা যাচ্ছে মুম্বই এবং আহমেদাবাদের আধিপত্যটাই বেশি।

বলা হচ্ছে ইডেনকে বেশি করে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেওয়া হচ্ছে সৌরভের জন্য। কারণ, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড থেকে সৌরভ বিদায় নেওয়ার পরও তিনি দিল্লি ক্যাপিটালসের মেন্টর হয়েছিলেন। আবার ত্রিপুরা ক্রিকেট বোর্ডও সৌরভকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করেছে। ত্রিপুরার ক্রিকেট বোর্ডেও বর্তমানে সেখানকার বিজেপি সরকারের প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। সুতরাং, সৌরভের সঙ্গে বিজেপি যোগসূত্র যে কমে গিয়েছে তা মানতে রাজি নন বেশকিছু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের। তাঁদের মনে হচ্ছে এটা আসলে সৌরভের দিকে একটা জোর বার্তা। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে যখন কোথাও বিশ্বকাপের ম্যাচ পড়ে তখন আইসিসি-র বেশকিছু নিয়ম মানতে হয়। সেই নিয়ম অনুযায়ী ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কাছে এমন কোনও অপশন নেই যেটা এই ধরনের ম্যাচ আয়োজনে ইডেনের গুরুত্ব কমিয়ে দিতে পারে। তাই এই জল্পনায় আদৌ কতটা সারবত্তা নিয়েছে তা নিয়ে কিন্তু ধোঁয়াশা রয়েছে। কিছু সংবাদমাধ্যম এই নিয়ে লাফালাফি ঝাপাঝাপি করতে পারে, কিছু রাজনৈতিক তত্ত্বগুরু নানা ধরনের ফর্মূলার অবতারনা করতে পারেন, কিন্তু তাতে কি সৌরভের কিছু যাবে আসবে! চোখ এখন তাই মহারাজের গতি-বিধির দিকেই।

Share this article
click me!