'দিদিকে বলো'-র প্রচারে গিয়ে গ্রামে রাত কাটালেন রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক। কিন্তু তা করতে গিয়েই গ্রামবাসীদের ক্ষোভের কথা শুনতে হল তাঁকে। পানীয় জল থেকে শুরু করে বার্ধক্যভাতা, আলো, রাস্তা, সব সমস্যার কথাই শুনতে হল মন্ত্রীকে। গোটাটাই অবশ্য হাসিমুখে সামলে ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। রুটি, তরকারি, আলু ভাজা দিয়ে নৈশভোজ সেরে গ্রামেই দলের এক নেতার বাড়িতে ফোল্ডিং খাটে শুয়ে রাত কাটালেন তিনি।
আমজনতার সঙ্গে দলের নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে 'দিদিকে বলো' কর্মসূচির শুরু করেছে তৃণমূল। তারই অংশ হিসেবে দলের বিধায়কদের গ্রামে গ্রামে গিয়ে রাত কাটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশ মতোই শনিবার আসানসোল উত্তর বিধানসভা এলাকায় কন্যাপুর, রঘুনাথবাটি ও সুইডি গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় বিধায়ক মলয় ঘটক। সুইডি গ্রামে উত্তম বাড়ুই নামে এক স্থানীয় নেতার বাড়িতেই রাতে থাকেন তিনি। তার আগে স্থানীয় কমিউনিটি হল এবং গ্রামের মধ্যে খোলা আকাশের নীচেই গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন- গ্রামে রাত কাটাতে গিয়ে মাতালের খপ্পরে মন্ত্রী, আসানসোলে 'দিদিকে বলো', দেখুন ভিডিও
শনিবার সন্ধে থেকেই আসানসোলে বৃষ্টি হচ্ছিল। আবহাওয়া খারাপ থাকায় সুইডি কমিউনিটি হলে তিনি টেবিল চেয়ার পেতে বসেন সন্ধ্যা থেকে। সেখানেই গ্রামবাসীরা এসে জমা হতে থাকেন। কিন্তু মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে অনেকেই চিৎকার, চেঁচামেচি করতে থাকেন। গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকেই পানীয় জলের সমস্যার কথা বলেন মন্ত্রীর কাছে। এক গ্রামবাসী অভিযোগ করেন, তাঁর ছোট্ট ভাগ্নির পেটে টিউমার হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিয়ে সরকারি হাসপাতালে ঘুরলেও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। মন্ত্রী অবশ্য অভিযোগ শুনেই আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপারকে ফোন করে চিঠি লিখে দেন।
পানীয় জলের সঙ্কটের পাশাপাশি বার্ধক্যভাতা না পাওয়া, রাস্তা খারাপের মতো নানা সমস্যা রয়েছে সুইডি গ্রামে। সেকথা জানতেন মন্ত্রীও। তবু এই গ্রামকেই জনসংযোগের জন্য বেছে নিয়েছিলেন তিনি। সমস্যা জানাতে এসে গ্রামবাসীদের একাংশ উত্তেজিত হয়ে উঠলেও ধৈর্য ধরে হাসি মুখেই সব শুনেছেন মন্ত্রী। গ্রামবাসীদের তিনি বলেন, পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে তাঁর বিধায়ক তহবিল থেকেই সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে। এর পাশাপাশি গ্রামের পাকা রাস্তা তৈরি করা, বিদ্যুৎ নিয়ে আসা, কমিউনিটি হলও তৈরি হয়েছে তাঁর বিধায়ক তহবিলের অর্থ থেকে। বাকি সমস্যারাও তিনি সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেন মন্ত্রী।
মুনমুন সেনকে প্রার্থী করেও আসানসোল দখল করতে ব্যর্থ হয়েছে তৃণমূল। এ দিন সেই প্রসঙ্গও ওঠে মন্ত্রীর জনসংযোগ বৈঠকে। গ্রামবাসীরা মন্ত্রীকে পেয়ে সরাসরি বলেন, 'মুনমুন সেনকে কেন প্রার্থী করেছিলেন, উনি বহিরাগত। আমরা রাগ করেই তৃণমূলকে ভোট দিইনি।' মন্ত্রী পাল্টা বলেন, 'বাবুল সুপ্রিয়ও তো বহিরাগত, তাহলে তাঁকে কেন ভোট দিলেন?' গ্রামবাসীদের মধ্যে মলয়বাবু ‘দিদিকে বলো’ কার্ড, স্টিকার বিলি করেন। কীভাবে ফোন করতে হবে, তাও গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে দেন মন্ত্রী।
মলয়বাবু পরে বলেন, 'এখানে বার্ধক্যভাতা নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। আর পানীয় জলের সমস্যাই বেশি। তবে গ্রামে বিদ্যুৎ, জল আমরাই নিয়ে এসেছি। বাকি কাজও করে দেওয়া হবে।'
তবে গ্রামবাসীদের অভিযোগ ছিল মূলত কাউন্সিলর শ্রাবণী মণ্ডলের বিরুদ্ধে। তিনি সুইডি গ্রামের মানুষের সমস্যার সমাধানে উদ্যোগি হননি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অভিযোগ, মন্ত্রী আসবেন বলে গ্রামের রাস্তার খারাপ আলোগুলি শনিবারই সারানো হয়। মন্ত্রী যেদিকে যাননি, গ্রামের সেই অংশ শনিবারও অন্ধকার ছিল।
আসানসোল উত্তর বিধানসভার ছোট্ট গ্রাম সুইডি। সন্ধ্যায় কমিউনিটি হলে বসেই চপ, মুড়ি খান সবার সঙ্গে। কমিউনিটি হলে বসেই হাত রুটি, সবজি, আলুভাজা, ও ছানা খান। এর পর চলে যান উত্তম বাবুর বাড়িতে। সেখানে ফোল্ডিং খাটে বিছানা পাতা ছিল তাঁর জন্য।