যার ঘরই নেই, সে কোথায় পতাকা লাগাবে: প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন বিমান বসুর 

“আরএসএসের এমন অনেক নেতা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন, যাঁরা পরবর্তীকালে মুচলেকা দিয়েছিলেন, ‘আমি দেশের স্বাধীনতার লড়াইতে অংশগ্রহণ করিনি।” স্পষ্ট বক্তব্য বিমান বসুর। “পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তাঁকে দিল্লি গিয়ে জয় শ্রী রাম বলতে হচ্ছে”, রাজ্য সরকারকে বিঁধলেন মহম্মদ সেলিম। 

Sahely Sen | Published : Aug 15, 2022 12:15 PM IST

মহানগরীর বুকে সিপিএমের প্রধান কার্যালয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে উড়ল ভারতের জাতীয় পতাকা। এই বছর দ্বিতীয়বারের জন্য জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন বাম নেতারা। গতবছর অর্থাৎ ২০২১ সালে স্বাধীনতা দিবসে প্রথম জাতীয় পতাকা উঠছিল সিপিএমের সদর দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। তারপর ২০২২-এও এর ভিন্নতা হল না। দলীয় পতাকা তুলে বিপ্লবীদের স্মরণে মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরের দিকে তুলে সম্মান জ্ঞাপনের মতো দেশের জাতীয় পতাকা তুলেও স্বাধীনতায় প্রাণ বলিদান দেওয়া শহিদদের উদ্দেশ্যে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে শ্রদ্ধা জানালেন বামপন্থীরা।

আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএম রাজ্য দফতরের ছাদে আজ জাতীয় পতাকা তুললেন বামফ্রন্ট চেয়্যারম্যান বিমান বসু। তারপর তিনি তেরঙার উদ্দেশে মুষ্টিবদ্ধ হাত প্রদর্শন করেন। সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসুর পর সম্মান জ্ঞাপন করেন বাম নেতা দীপক দাশগুপ্ত, সুখেন্দু পাণিগ্রাহি, সূর্য মিশ্ররা। 

জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর শহিদ বেদীতে ফুল ও মালা দিয়ে বিপ্লবী অভিবাদনের মুদ্রা প্রদর্শন করেন নেতারা। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সিপিএম রাজ্য দফতরের ছাদে দলের কাস্তে হাতুড়ি পতাকার চেয়ে অনেকটাই বেশি উচ্চতায় উড়ল ভারতের জাতীয় পতাকা। অভিজ্ঞ সিপিএম নেতারা আবার বুঝিয়ে দিলেন, দলের চেয়েও আরও অনেক উচ্চতায় দেশের স্থান। 


পতাকা উত্তোলনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যকে কটাক্ষ করে বিমান বসুর প্রশ্ন, “সাভারকর স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন? তাহলে তিনি মুচলেকা দিলেন কেন?” বিজেপির নমস্য হিন্দুত্ববাদী দল আরএসএস-এর প্রাচীন নেতাদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,  “আরএসএসের এমন অনেক নেতা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন, যাঁরা পরবর্তীকালে মুচলেকা দিয়েছিলেন, ‘আমি দেশের স্বাধীনতার লড়াইতে অংশগ্রহণ করিনি, আমাকে ভুল করে ধরা হয়েছে’। সেই নেতাদের আজ স্মরণ করা হচ্ছে। বিজেপি আসলে আরএসএসের পরিবারতন্ত্র কায়েম করতে চায়।”।

নরেন্দ্র মোদীর ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ উৎসব প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “যে মানুষ খেতে পায় না, যে মানুষ পথে থাকে, যার ঘর নেই, সে কী করে ঘরে তিরঙ্গা লাগাবে? পয়সাটা পাবে কোথ থেকে? যদি সরকারের পক্ষ থেকে তিরঙ্গা সবাইকে বিতরণ করা হত, তাহলে এই উদ্যোগের অর্থ থাকে। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে সকলের পতাকা কেনার পয়সা নেই। খাওয়ারই পয়সা নেই। কোনওরকমে কষ্ট করে অভুক্ত থেকে, অর্ধভুক্ত থেকে জীবনযাপন করছে। তাদের ওপর হুইপ জারি করা অমানবিক এবং অগণতান্ত্রিক।”

আরেক বাম নেতা মহম্মদ সেলিম অবশ্য হাসিমুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায় বিঁধেছেন, তিনি স্পষ্ট বলেছেন, “পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তাঁকে দিল্লি গিয়ে জয় শ্রী রাম বলতে হচ্ছে। বিজেপি রামের কথা বলে, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সীতারামের কথা বলেন। আমরা বলেছি রাজ্যের চিট ফান্ডের তদন্ত করতে হবে, কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত লড়াই করা হবে। উনি রাজ্যের কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন, যাতে তদন্ত না হয়।”

অনুব্রত মণ্ডল প্রসঙ্গে সেলিমের বক্তব্য, “অনুব্রত মণ্ডলের বুদ্ধি নিয়ে রাজ্য চালালে ওই-ই হবে”। মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধে তিনি আরও বলেন, “অনুব্রত মণ্ডল অনু থেকে হনু হল কী করে ওনার আশীর্বাদ ছাড়া? উনি (মুখ্যমন্ত্রী) বেহালায় গিয়ে বোঝালেন যে, পার্থর পাশে নেই, অনুব্রতর পাশে আছি। কারণ, পার্থ টাকাগুলো নিয়ে অপার কাছে জমা দিয়েছিল, আর অনুব্রত টাকা নিয়ে সব কালীঘাটে জমা দিয়েছে।”


আরও পড়ুন-
গায়ের চামড়া দিয়ে পায়ের জুতো তৈরি হবে: তৃণমূলের প্রতিবাদ মঞ্চে বিরোধীদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্বক সৌগত রায়
গুড়-বাতাসা বিলির রেশ এখনও থামেনি, শিলিগুড়িতে DYFI-এর নকুলদানা ও বাতাসা বিলি
‘মুখ্যমন্ত্রী বলুন অন্যায় হয়েছে’, সাংবাদিক বৈঠকে শাসকদলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ মহম্মদ সেলিমের

Read more Articles on
Share this article
click me!