এলাকার আন্দি, মহিশগ্রাম, বড়কাপসা, বিছুর, দেবগ্রাম ও কল্যাণপুর গ্রামগুলিতে কিছু প্রাচীন পুজো রয়েছে। যেগুলি ঘিরে প্রতিবছরই ভক্তদের মধ্যে চরম উন্মাদনা দেখা যায়। পরবর্তীতে গ্রামগুলিতে নতুন পুরনো মিলিয়ে প্রায় ২৫০টি পুজো হয়ে থাকে।
তারা মায়ের সন্তান সাধক বামাক্ষ্যাপা (Bamakhepa)। তাঁর নির্দেশেই মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বড়ঞা গ্রামের ৬টি কালী প্রতিমাকে (Kali Idol) পশ্চিমমুখী অবস্থানে রেখেই প্রাচীন মণ্ডিত কালীপুজো (Kali Puja) করা হয়। প্রায় ৩০০ বছর ধরেই এই পুজোর রীতি চলে আসছে। শুরু থেকেই পশ্চিম দিকে রেখে প্রতিমাগুলিকে পুজো করা হয়। তারাপীঠের (Tarapith) সাধক বামাক্ষ্যাপার নির্দেশেই সেই প্রাচীন কাল থেকেই এইভাবে পুজো করা হয়ে আসছে বলে জানান গ্রামের বয়স্ক বাসিন্দারা।
এলাকার আন্দি, মহিশগ্রাম, বড়কাপসা, বিছুর, দেবগ্রাম ও কল্যাণপুর গ্রামগুলিতে কিছু প্রাচীন পুজো রয়েছে। যেগুলি ঘিরে প্রতিবছরই ভক্তদের মধ্যে চরম উন্মাদনা দেখা যায়। পরবর্তীতে গ্রামগুলিতে নতুন পুরনো মিলিয়ে প্রায় ২৫০টি পুজো হয়ে থাকে। কিন্তু, সকল প্রতিমাই থাকেন পশ্চিম মুখো অবস্থানে। মহিশগ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাজু ঘোষ বলেন, "কথিত আছে আমাদের গ্রামের কালীপুজো করার জন্য গ্রামের কয়েকজন একবার বামাক্ষ্যাপার কাছে গিয়েছিলেন। তখন তিনি মুলুটি গ্রামের বাগানে তারামায়ের ফুল তুলছিলেন। গ্রামের লোকেদের তিনি নির্দেশ দেন, দেবীর মুখ যেন পশ্চিম দিকে রাখা হয়। সেই নির্দেশ মেনেই আজও ওইসব গ্রামের পুজো হয়ে আসছে।"
আরও পড়ুন- ৫০০ বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে দেবীনগর কালীবাড়িতে পূজিতা হচ্ছেন মা কালী
এ প্রসঙ্গে আন্দি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জিতেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, "মহিশগ্রামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে অন্য ছয়টি গ্রামের প্রতিমাগুলিকেও পশ্চিম দিকে মুখ করে রেখে পুজো করার রীতি চালু হয়ে যায়।" এদিকে আন্দি ও মহিশগ্রামে দুটি কালীতলা রয়েছে। যা প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো। দুটি জায়গায় একসময় ঘন জঙ্গল ছিল। যদিও বর্তমানে গাছপালা কেটে তা অনেকটা পরিষ্কার করা হয়েছে। বছরের এই সময় নির্দিষ্ট তিথিতে দুই জায়গাতে কালীপুজো হয়ে থাকে। কিন্তু দু’টি জায়গাতে দেবীর কোনও মাটির মূর্তি তৈরি হয় না।
আরও পড়ুন- মুসলিম জমিদারের হাতে শুরু হয় তিন বোনের বুড়ি কালী পুজো
আরও পড়ুন- পুরুলিয়ার এই গ্রামে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াতেন মা কালী
মহিশগ্রামে দেবীদুর্গার পাশে কালী প্রতিমা রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন পুজো করা হয়। কালীপুজোতেও ওই দুটি মূর্তিকেই পুজো করা হয়। অন্যদিকে আন্দি গ্রামের কালীপুজো করা হয় একটি বটগাছকে। পাশে রয়েছে শিবলিঙ্গ। সেখানেও দেবীর মূর্তি হয় না। গ্রামের বাসিন্দারা দেবী দুর্গা নয়, বরং কালী ও মহেশ্বরকে উৎসর্গ করে সাইত দেখান। দুর্গাপুজোর সময় গ্রামে দুর্গাপুজো হলেও, আগে কালী পুজো হয়। পরে দুর্গাপুজো হয়ে থাকে। কালীপুজোয় কালীতলায় প্রতি বছর মেলা বসে। দুটি গ্রামের কালীপুজোতে কয়েক হাজার বাসিন্দাকে অন্নভোগও বিতরণ করা হয়। এবার অবশ্য করোনা পরিস্থিতিতে মেলা বসবে না। পাশাপাশি অন্নভোগের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে না।