তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নন। সন্দেশখালিতে হিংসার পরে এভাবেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। তাঁর অভিযোগ, "বাংলার হাজার হাজার কর্মী মারা গেলেও ওনার কিছু আসে যায় না। কারণ উনি তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী।"
এ দিন নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠক করার পরে মমতা অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকার ভাঙার জন্য চক্রান্ত করছে বিজেপি। মুকুলের পাল্টা জবাব, "সরকার ভাঙার কোনও ইচ্ছে বিজেপি-র নেই। তৃণমূলের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন বাংলার মানুষ।" মুকুল দাবি করেন বাংলার অধিকাংশ পৌরসভা, পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদের সদস্যরা বিজেপি-তে যোগদান করতে চাইছেন। মমতাকে উদ্দেশ করে মুকুলের পরামর্শ, "দেওয়ালের লিখনটা এবার পড়ুন।"
এ দিন নবান্নের বৈঠকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মমতা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে সেকথা নিজেই জানান মুখ্যমন্ত্রী। মুকুলে অবশ্য দাবি, বৈঠকে বিজেপি-র বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। মুকুলে দাবি, বিজেপি কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা করার, মিটিং, মিছিলের অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বাইরে এসে অন্য কথা বলেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই যেহেতু স্বরাষ্ট্র দফতর রয়েছে, তাই পুলিশ ঠিক মতো কাজ না করলে তার দায় নিয়ে মমতার সবার আগে পদত্যাগ করা উচিত বলেও দাবি করেন মুকুল।
বাংলার সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে তাঁরা ৩৫৬ ধারা জারি করার দাবি জানাবেন কি না, সেই প্রশ্ন অবশ্য কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন মুকুল। বিজেপি নেতার দাবি, বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারি স্তরে কি পদক্ষেপ নেবে তা পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত। তার সঙ্গে বিজেপি-র কোনও যোগ নেই।
রবিবার সন্দেশখালিতে নিহত দুই বিজেপি সমর্থকের দেহ কলকাতায় আনার সময় বিজেপি-কে বাধা দেয় পুলিশ। মুকুলের অভিযোগ, বিরোধী নেত্রী থাকার সময় বার বার বিভিন্ন জেলা থেকে কলকাতায় নিহত দলীয় সমর্থকদের দেহ এনে রাজনীতি করেছেন মমতা। অথচ সেই তিনিই এখন বিজেপি-কে মৃতদেহ কলকাতায় আনতে বাধা দিচ্ছেন। সেই প্রসঙ্গেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের 'সুসম্পর্ক' নিয়ে কটাক্ষ করেন মুকুল। তাঁর দাবি, কৃতজ্ঞতা থেকেই এখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুল বলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কলকাতায় দলীয় কর্মীদের মৃতদেহ আনতে মমতাকে বাধা দেননি। ধর্মতলায় মমতার ছাব্বিশ দিনের অনশন বা সিঙ্গুরে হাইওয়ে আটকে বিক্ষোভ দেখানোরও সময়ও মমতাকে বাধা দেননি বুদ্ধবাবু। সেই কৃতজ্ঞতা থেকেই এখন মমতার সঙ্গে বুদ্ধর এত ভাব। বার বার বুদ্ধবাবুর কাছে ছুটে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।" মুকুলের ধারণা, সন্দেশখালি কাণ্ডে অভিযুক্তরা বাংলাদেশে পালিয়েছে। সূত্র মারফত তাঁর কাছে এই খবর এসেছে বলেও দাবি করেন মুকুল। তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধেই মূল অভিযোগ বিজেপি-র। মুকুল দাবি করেন, শেখ শাহজাহানও বাংলাদেশে আশ্রয় রয়েছে।
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অমিত শাহকে চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠি জনসমক্ষেও নিয়ে এসেছে তৃণমূল। মুকুল রায় জানিয়েছেন, চিঠিতে যা যা অভিযোগ তৃণমূল বিজেপি-কে নিয়ে করেছে, তার জবাব দিয়েই তিনিই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাল্টা চিঠি দেবেন। মুকুলের অভিযোগ, "বাংলা যদি শান্তিপূর্ণই হয় তাহলে গত কয়েক দিনে বিজেপি-র সাতজন কর্মী কীভাবে খুন হল?"