শাজাহান আলি, পশ্চিম মেদিনীপুর: ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল নির্ধারণে নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়েছিল কেশপুর। কারণ শুধুমাত্র কেশপুর বিধানসভা থেকেই নব্বই হাজারের বেশি লিড পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী দেব। ভোটের দিন কেশপুরে গিয়ে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ, গ্রামবাসীদের একাংশের হাতে আক্রান্তও হয়েছিলেন তিনি।
ভোট মিটতেই অবশ্য এ হেন কেশপুরের ছবিটা পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। বিজেপি নেতারা সেভাবে তৎপর না হলেও কেশপুরের গ্রামের পর গ্রাম বিজেপি-র দিকে ঝুঁকছে, লক্ষ্যণীয় ভাবে বাড়ছে সমর্থক সংখ্যাও। কেশপুরের গ্রামে গ্রামে এখন বিজেপি-র পতাকায় ছয়লাপ। এমন কী, ভোটের দিন যে আমড়াকুচি ও চড়কাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেখানেই ভারতী ঘোষকে সংবর্ধনা দিয়ে বিজেপির সভা করেছেন গ্রামবাসীরা ৷ কেশপুরের সিপিএমের তাবড় নেতারা দল ছেড়ে এই সভা থেকেই বিজেপিতে যোগ দেন দু' দিন আগে ৷ ফলে গোটা কেশপুরে ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছে শাসক দল। খোদ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী কেশপুরে গিয়ে সংগঠনকে চাঙ্গা করার ডাক দিলেও বিজেপি-র বৃদ্ধি ঠেকানো যাচ্ছেনা।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার আচমকাই কেশপুর থানার আইসি হীরক বিশ্বাসকে সরিয়ে দেওয়া হল ৷ তার জায়গায় দায়িত্বে এসেছেন প্রশান্ত কীর্তনীয়া ৷ আচমকা এই বদলিতে পুলিশকর্মীরাও কিছুটা অবাক। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলেও জোর জল্পনা, কেশপুরে বিজেপি-র প্রভাব বাড়ারই খেসারত দিতে হয়েছে ওই পুলিশ আধিকারিককে। বিজেপি-র জেলা কমিটির সদস্য অরূপ দাসেরও দাবি, এলাকায় বিজেপি-র প্রভাব বেড়ে যাওয়াতেই শাস্তি স্বরূপ আইসি-কে সরিয়ে দেওয়া হল। বছরখানেক আগেই কেশপুর থানার দায়িত্ব নিয়েছিলেন এই পুলিশ অফিসার। যথেষ্ট দক্ষ অফিসার হিসেবে জেলা পুলিশে সুনাম রয়েছে তাঁর। জেলা পুলিশের কর্তারা অবশ্য একে রুটিন বদলি বলেই দাবি করেছেন।
ভোটের পরে কেশপুরে বিজেপি-র প্রতি মানুষের এই সমর্থন দেখে নিয়মিত সেখানে যাচ্ছেন ভারতী ঘোষও। তাঁর দাবি, 'আমি আগেই বলেছিলাম, শুধু কেশপুর কেন, বহু এলাকার মানুষই বিজেপিকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করে নিয়েছেন৷ কিন্তু সর্বত্র তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেওয়া হয়নি৷ শাসকদল জানত, কেশপুর সঠিকভাবে ভোট দিলে তাদের হার নিশ্চিত৷ এখন প্রকৃত সত্যিটা সামনে উঠে আসছে।'
যদিও ভারতীদেবীর বক্তব্য আমল দিতে নারাজ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। তিনি বলেন, 'সিপিএমের নেতারাই বিজেপি-র হয়ে পতাকা তুলছেন৷ এতে আমাদের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না৷ আমরা আমাদের জবাব রাজনৈতিক কর্মসুচির মাধ্যমে দেব৷'