একের পর এই ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়ার এই প্রশ্নটা ওঠা খুবই স্বাভাবিক যে একের পর এক এই কেন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় বঙ্গোপসাগরে।
২০২০ সালে এই রাজ্য়ের বিস্তূর্ণ এলাকা বিশেষত দক্ষিণবঙ্গকে প্রায় লন্ডভন্ড করেছিল আমফান (Amphan)। সেইক্ষত কাটিয়ে ওঠার আগেই চলতি বছর আরও দুটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে এই রাজ্যে। একটি ইয়াস (Yaas) অন্যটি জাওয়াদ (Jawad)। দুটি ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি স্থলই হল বল বঙ্গোপসাগর (Bay Of Bengal)। আপাত শান্ত বঙ্গোপসাগর বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় বা স্লাইক্লোনের (Cyclone) একটি বড় কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। যাইহোক বছর শেষের আগে একনজরে দেখে নেওয়া যাক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সেই ভয়ঙ্কর ছবিটা।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-
এই রাজ্যে তৃতীয় বার ক্ষমতা দখল করার পরই প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইয়াসের তাণ্ডবের মোকাবিলা করতে হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। কারণ ২০২১ সালের ২৮মে এই ঝড় আছড়ে পড়ে উড়িশার উপকূলে। তবে আবহাওয়া দফতরের কথায় ঝড়টি তৈরি হয়েছিল ২৩ মে থেকেই। তারপর থেকে বঙ্গোপসাগর থেকে শক্তিসঞ্চয় করে ক্রমশই বিরাট আকার নিয়েছিল। এই ঝড়ের প্রভাবে ব্যপক ক্ষতি হয়েছিল বাংলার।
ওড়িশার উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার। ইয়াসের প্রভাব পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশ। প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও নেপালও নিস্তার পায়নি ইয়াসের দাপট থেকে। ঝড়, প্রবল বৃষ্টির দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়েছিল সবকটি রাজ্যকে।
ইয়াসের তাণ্ডবে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দিঘা। উপকূলবর্তী এই এলাকায় তছনছ হয়ে গিয়েছিল। উড়ে গিয়েছিল কংক্রিটের চাল। ভেঙেগিয়েছিল সিমেন্টে বাঁধানো সমুদ্রতট। ভেঙে পড়েছিল একাধিক গাছ। উপড়ে গিয়েছিল বিদ্যুতের খুঁটি। এই ঘূর্ণি ঝড়ের বলি হয়েছিল ৯ জন।
ঘূর্ণঝড় ইয়াসকে কেন্দ্র করে আবারও বিবাদে জড়িয়েছিল কেন্দ্র ও রাজ্যসরকার। কারণ ঝড় বিধ্বস্ত ওড়িশা পরিদর্শনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই রাজ্যের কলাইকুন্ডা বিমান ঘাঁটিতে আসেন। খতিয়ে দেখেন রাজ্যের দুর্যোগ কবলিত এলাকা। তারপরই তিনি একটি প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও সেই বৈঠকে উপস্থিত হননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ তিনিও যথেষ্ট ব্যস্ত ছিলেন রাজ্যের দুর্যোগ কবলিত এলাকার অবস্থা খতিয়ে দেখতে। তাই কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে উপস্থিত না হলেও তিনি রাজ্যের তরফে একটি রিপোর্ট পেশ করেছিলেন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গী ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সফরে ব্যস্ত থাকায় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি। তারপরই কেন্দ্রের তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে নাড়াঘাটা শুরু হয়। অবসর গ্রহণের পরেই সেই ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মে মাসের পর ডিসেম্বর মাসে আরও একটি ঘূরণিঝড়ের সাক্ষী থাকে রাজ্য।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ--
ইয়াসের তুলনায় অনেকটাই শক্তি কমছিল জাওয়াদের। কিন্তু এটির প্রভাবও পড়েছিল এই রাজ্যে। জাওয়ার দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ। এটি আছড়ে পড়ার আগেই শক্তি হারিয়ে নিন্মচাপে পরিণত হয়। জাওয়াদের কারণে অসমেয় প্রবল বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয় এই রাজ্যের কৃষি কাজের। পাকা ধান শীতকালীন সবজি ও ডাল জমিতেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের কারণে চলতি বছর একশো টাকা কিলো দরে টোমেটো কিনতে হয়েছে এই এই দেশের মানুষকে। যাইহোক সাইক্লোন না হলেও জাওয়াদের কারণে শীতকালেই জমা জলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল এই রাজ্যের বাসিন্দাদের।
বঙ্গোপসাগরেই ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় কেন?
একের পর এই ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়ার এই প্রশ্নটা ওঠা খুবই স্বাভাবিক যে একের পর এক এই কেন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় বঙ্গোপসাগরে। আবহাওয়াবিদদের কথায় বঙ্গোপসাগরের বেশ কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। মৌসুমি ঘূর্ণঝড় বা সাইক্লোন তৈরির অন্যতম কারণ হল সমুদ্রের উপরিতল বা সারফেসের তাপমাত্র। বঙ্গোপসাগর খুবই উষ্ণ সাগর। বঙ্গোপসাগরের উপকূল জুড়ে রয়েছে ঘনবসতি যা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বের প্রতি চার জন মানুষের এক জন থাকেন এই উপকূলবর্তী এলাকা।