পার্থিব দুনিয়ার মোহমায়া ত্যাগ করে পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। বাংলা সাহিত্য ফের একবার তার অভিভাবক হারাল। কবি অনুগামীদের মধ্যে শোকের ছায়া। কবির লেখনীই কোনও একদিন সোচ্চার ঘোষণা করেছিল, তাঁকে সমর্পণ সাজে না। কর্মেই রয়েছে তাঁর অধিকার। সেই কবিই নিজেকে সমর্পণ করলেন মৃত্যুর কাছে। যে নিঃশঙ্ক কবি চিরকাল মাথা না নোয়ানোর সদর্প ঘোষণা করেছেন, করোনার করাল গ্রাসে মাথা নোয়াতে হল সেই তাঁকেই।
আরও পড়ুন - 'তোমার দুঃখের পাশে বসে আছি' - শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণ কতটা ক্ষতি, বুঝতে লাগবে একযুগ
বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তবে মনের বয়সে তিনি ছিলেন চির যুবক। সপ্তাহ খানেক আগেই করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে তাঁর। তবে বার্ধক্যজনিত কারণে বেশ কয়েক মাস ধরে ভুগছিলেন তিনি। শেষ রক্ষা হল না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিল তাঁকে।
মঙ্গলবার রাত থেকে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে কবির। বুধবার সকালে সব রকম চিকিৎসা শুরুও হয়ে যায় তাঁর। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি শেষ পাণ্ডব। বুধবার নিমতলা মহাশ্মশানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ কৃত্য সম্পন্ন হবে তাঁর। গায়ে জ্বর ছিল, তাই গত সপ্তাহে করোনা পরীক্ষা করান কবি।
তারপরেই রিপোর্ট পজেটিভ আসে। ১৪ই এপ্রিল বিকেলে করোনা সংক্রমণের খবর জানা যায়। আরও দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন শঙ্খ ঘোষ। তবে হাসপাতালে যাওয়ার ঝুঁকি নেননি তিনি। বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন। চলছিল সবরকম চিকিৎসা। বুধবার ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় তাঁকে। তবে সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।
কবি শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সাহিত্য জীবনে একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। বাবরের প্রার্থনা কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি সম্মান পান তিনি। ১৯৯৯ সালে কন্নড় ভাষা থেকে রক্তকল্যাণ নাটক অনুবাদের জন্য পান সাহিত্য অ্যাকাডেমি সম্মান।
ছুটি কবিতায় শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন 'যাব। যাব। যাব। সব তো ঠিক করাই আছে। এখন কেবল বিদায় নেওয়া, সবার দিকে চোখ, যাবার বেলায় প্রণাম, প্রণাম! কী নাম ? আমার কোনো নাম তো নেই, নৌকা বাঁধা আছে দুটি'....নিজের এপিটাফ কি নিজেই লিখে গিয়েছিলেন কবি....সে প্রশ্নের উত্তর হারিয়ে ফেলেছি আমরা।