লোকাল ট্রেনেই পড়াশোনা,সেনাবাহিনীতে যেতে চায় নিরাশ্রয় অর্জুন

  • লোকাল ট্রেনেই পড়াশোনা করে অর্জুন দাস
  • কাকদ্বীপ স্টেশন চত্বরে মা এবং বোনকে নিয়ে থাকে কিশোর
  • বাড়ি না থাকায় ট্রেনের কামরাতেই পড়াশোনা
  • সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চায় অর্জুন
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের পরে মিলল প্রশাসনিক সাহায্য

বাড়ি, ঘর নেই। অভাবের সংসার, দু' বেলা দু' মুঠো ভাত জোগাড় করতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে বাড়ি ঘরের স্বপ্ন দেখা ওদের কাছে অলীক কল্পনা। তাই দিনের কিছুটা সময় কাকদ্বীপ স্টেশন চত্বর, বাকিটা সময় চলন্ত ট্রেন ও রাতে শিয়ালদহ কোর্ট চত্বরই ঠিকানা আরতি দাস ও তার দুই নাবালক সন্তানের। আর এই অসম পরিস্থিতির  লড়াই করেই জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার চেষ্টা ওদের। 

রাত আটটার আপ নামখানা- শিয়ালদা লোকল। কাকদ্বীপ স্টেশন ছাড়ার পরই একটি কামরার মধ্যে একটি বছর চোদ্দর কিশোরের দেখা মিলবে। কোনওদিন সিটের উপর আবার কোনওদিন মেঝেতে বই, খাতা নিয়ে এক মনে পড়াশোনা করে চলেছে ওই কিশোর। নাম অর্জুন দাস। পাশের সিটে ঘুমে কাতর তার বছর সাতের ছোট বোন। আর একপাশে শ্যামলা রঙের মোটা গড়নের এক মহিলা বসে আছেন। বছর ত্রিশের সেই মহিলার চোখ, মুখ জুড়ে একরাশ ক্লান্তি। তিনিও কখনও সখনও ঢুলে পড়ছেন। 

Latest Videos

ভাই- বোনের সঙ্গে থাকা ওই মহিলা কিশোরের মা। এক একটা স্টেশন পেরিয়ে অন্ধকার চিড়ে ট্রেন এগিয়ে চললেও কিশোরের পড়াশোনায় কোনও ছেদ পড়ছে না। রাতের ট্রেনে যাত্রী কম থাকায় পড়াশোনাতেও কোনও অসুবিধাও হচ্ছে না তার। 

কাকদ্বীপের বামুনের মোড় এলাকার একটি তেঁতুল গাছের তলায় বছর আটেক ধরে মরসুমি ফল বিক্রি করেন আরতি দাস। বছর পনেরো আগে এলাকার যুবক বলাই দাসের সঙ্গে আরতির বিয়ে হয়েছিল। দুই সন্তান হওয়ার পর আরতিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় স্বামী। দুই নাবালক সন্তানকে নিয়ে তখন অথৈ জলে আরতি। আরতির বাপের বাড়ি রায়দিঘির কাশীনগর গ্রামে। বাপের বাড়িতেও টানাটানির সংসার। ফলে আরতির মা মেয়ের হাতে পাঁচশো টাকা তুলে দিয়ে বলেছিলেন, নিজের মতো করে কিছু করে সংসার অন্ন সংস্থান করতে। সেই শুরু। মরসুমি ফল নিয়ে একসময় কাকদ্বীপ বাজারে বসতেন আরতি। দুই সন্তান তখন খুব ছোট। কিন্তু কোনও বাড়ি নেই। তাই রাস্তা যেখানে ফল বেচতেন, তার পাশেই ছেলেমেয়েকে শুইয়ে রাখতেন তিনি। দিনে এভাবে কাটলেও রাত কাটত কাকদ্বীপ প্ল্যাটফর্মে। 

কীভাবে ট্রেনের কামরায় পড়াশোনা করে অর্জুন, দেখুন সেই ভিডিও

এর পর শিয়ালদা থেকে ফল কেনা শুরু করেন আরতি। ছেলে অর্জুন ততদিনে প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় জ্ঞানদাময়ী বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে সে। মেয়ে পূর্ণিমা পড়ে আইসিডিএস স্কুলে। তবে ঘর না থাকায় ট্রেনের কামরাই পড়াশোনার জন্য তাদের ভরসা। প্রতিদিন রাত আটটা নাগাদ ট্রেনে দুই সন্তানকে নিয়ে কাকদ্বীপ থেকে শিয়ালদার উদ্দেশ্যে রওনা দেন আরতি। ছোট মেয়েটি ট্রেনের সিটে ঘুমিয়ে পড়লেও অর্জুন ট্রেনের কামরাতেই শুরু করে পড়াশোনা। 

একদিকে মা ছোট বোনকে নিয়ে বসে থাকেন, অন্যদিকে অর্জুন একমনে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। এইটুকু বয়সে চরম বাস্তবের মুখোমুখি অর্জুন। 

যুদ্ধটা অর্জুন ভালই বোঝে। ছোট থেকেই জীবনযুদ্ধের সঙ্গে লড়াই করেই হয়তো বড় হয়ে সত্যিকারের যুদ্ধ লড়ার সাহস পেয়ে গিয়েছে সে। তাই আরামের কোনও নিশ্চিন্ত চাকরি নয়, চোদ্দ বছরের ছেলে ঠিক করে নিয়েছে, বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে সে।    

নিত্যদিনের রুটিন শুনিয়ে দেয় সে। অবলীলায় বলে যায়. 'রাত আটটার ট্রেন ধরে সাড়ে দশটা নাগাদ শিয়ালদা পৌঁছই। মা কিছু খাবার নিয়ে এলে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ফল কিনে নিয়ে ফের সকালের ট্রেন ধরে ফিরে এসে স্কুলে যাই।' বড় হয়ে সে কী হতে চায় জিজ্ঞেস করতেই অর্জুনের চটজলদি জবাব, 'আমি আর্মিতে যেতে চাই।'

কিছুদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে রাতারাতি সেলিব্রেটি হয়েছেন রানাঘাট স্টেশানের রাণু মণ্ডল। আর সেই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেই সম্প্রতি আরতি ও তাঁর সন্তানদের লড়াই নজরে আসে কাকদ্বীপের প্রতাপাদিত্য পঞ্চায়েতের কর্মকর্তাদের। শুরু হয় খোঁজখবর। অবশেষে সেই কিশোরের পড়াশোনার দায়িত্ব নিল কাকদ্বীপের প্রতাপাদিত্য গ্রাম পঞ্চায়েত। পড়াশোনার পাশাপাশি ওই পরিবারের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁইও হয়েছে। এবার থেকে পঞ্চায়েতের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘরেই থাকবে ওই পরিবার। মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতাও দেওয়া হবে আরতি এবং তাঁর সন্তানদের। 


 

Share this article
click me!

Latest Videos

‘Chinmoy Krishna-কে আমি মুক্ত করবোই’ নির্ভীক Bangladeshi আইনজীবী Rabindra Ghosh-এর চরম প্রতিশ্রুতি
'ওদের লেজ কখনও সোজা হয় না' কেন বললেন শুভেন্দু! দেখুন বুঝে যাবেন | Suvendu Adhikari | Bangla News
জালে পুরনো পাপী! জাল পাসপোর্ট পৌঁছে যেত অনুপ্রবেশকারীদের হাতে! | Duttapukur News | Kolkata
বিস্ফোরক অভিযোগ Agnimitra Paul-এর! Mamata-র বিরুদ্ধে RG Kar কাণ্ডের প্রমাণ লোপাটের সরাসরি তোপ
'ইয়ে ডর মুঝে আচ্ছা লাগা' হিন্দুদের প্রতি সহানুভুতি, বাংলাদেশী জঙ্গিদের টার্গেট Suvendu Adhikari