মঙ্গলবারই কাটমানি নিয়ে দলের নেতা, কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে তৃণমূলের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানকে গ্রেফতার করল রাজ্যে আর্থিক অপরাধ দমন শাখা। অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতার নাম সুকেশ যাদব। তিনি মালদহের রতুয়া এক নম্বর ব্লকের মহানন্দাটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান। অভিযুক্ত ওই নেতার বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের অর্থ থেকে এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন- কাটমানি ফেরত চাই, বীরভূমে দুই তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘেরাও জনতার
জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতা আগে কংগ্রেসে ছিলেন। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে তার বিরুদ্ধে প্রথমবার একশো দিনের কাজ, নির্মল বাংলার মতো সরকারি প্রকল্পের সুবিধা প্রাপকদের থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। রতুয়া এক নম্বর ব্লকের বিডিও অর্জুন পাল প্রথম সুকেশবাবুর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যে সময়ে তিনি এই দুর্নীতি করেন বলে অভিযোগ, তখন অভিযুক্ত নেতা কংগ্রেসের পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি তৃণমূলের যোগ দেন। এর পরে গত প্রায় দু' বছরে বিষয়টি নিয়ে তেমন নাড়াচাড়া না হলেও মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতি নিয়ে কড়া বার্তা দেওয়ার পরেই অভিযুক্ত ওই নেতাকে গ্রেফতার করা হল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ শুধু কথার কথা নয়, দুর্নীতির প্রশ্নে তিনি দলের নেতাদেরও রেয়াত করবেন না, সেই বার্তা দিতেই এমন কড়া পদক্ষেপ বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা।
মঙ্গলবার গভার রাতে বাড়ি থেকেই অভিযুক্ত সুকেশ যাদবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৫০৬ এবং ১২০-র বি ধারায় মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার অবশ্য দাবি, তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের অনেকেই এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
এর পাশাপাশি তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পরে যদি বিরোধী দলের কোনও নেতা কর্মীকেও দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হলে, তখন প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও সহজে তুলতে পারবেন না বিরোধীরা। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চের সভায় মমতা অভিযোগ করেন, তৃণমূলে এসে সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে বা দুর্নীতি করে অনেক নেতাই বিজেপি-তে চলে যাচ্ছেন। তাঁদের কাউকেই যে রেয়াত করা হবে না, সেই বার্তাও দেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের নেতারা সাধারণ মানুষের থেকে সরকারি প্রকল্পের টাকা কাটমানি হিসেবে নিয়েছেন, অবিলম্বে তা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পরেই বীরভূমের ইলামবাজারে কাটমানি ফেরানোর দাবিতে তৃণমূল নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। ফলে একদিকে জনতার রোষ, অন্যদিকে সরকারের কড়া পদক্ষেপের ভয়, শাসক দলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের অনেকেই এখন ভয়ে কাঁপছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরেই নবান্নে দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য বিশেষ গ্রিভান্স সেল চালু হয়েছে। টোল ফ্রি নম্বর ১৮০০৩৪৫৮২৪৪-এ ফোন করে বা wbcmro@gmail.com ই- মেল করে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে পারছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও ৯০৭৩৩০০৫২৪ নম্বরে এসএমএস করেও অভিযোগ জানানো যাবে।