১৬০০ পূর্ণার্থী নিয়ে গঙ্গাসাগরের পথে মাঝরাতে ঘন কুয়াশায় নিখোঁজ ৪ ভেসেল ও ২ লঞ্চ, প্রশাসনের তৎপরতায় ৪ ঘণ্টা পরে উদ্ধার

ঘন কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে গঙ্গাসাগর। কুয়াশার চাদর এতটাই গাঢ় যে মকর স্নানের জন্য সাগরের পথে এখনও কাকদ্বীপের লট ৮ ঘাটে এখনও আটকে রয়েছেন হাজার হাজার পূর্ণার্থী। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় বারুইপুরে এবং ক্যানিং সেকশনে আটকে রয়েছে বহু লোকাল ট্রেন।

 

মাঝরাতে ৪ ঘণ্টা ধরে নিখোঁজ থাকল ৪ ভেসেল ও ২টি লঞ্চ। এক একটি ভেসেলে অন্তত ৪০০ করে পূর্ণার্থী ছিলেন। আর ২টি লঞ্চে আরও প্রায় শখানেক যাত্রী ছিল। সবমিলিয়ে শুক্রবার মাঝরাতে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে ১৭০০ পূর্ণার্থী নিয়ে নিখোঁজ ছিল এই ৪ ভেসেল ও লঞ্চ। কাকদ্বীপ লট ৮ নম্বর ঘাট থেকেই এই চার ভেসেল ও ২টি লঞ্চ ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। যখন এই চারটি ভেসেল ও ২ লঞ্চ ১৭০০ পূর্ণার্থীকে নিয়ে কচুবেড়িয়া ঘাটে এসে ভেড়ে তখন রাত দেড়টা বেজে গিয়েছে।

জানা গিয়েছে, কাকদ্বীপ থেকে ভেসেল রওনা দেওয়ার পর তা জিপিএস-এ ট্র্যাক করা হচ্ছিল। কিন্তু, ৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও এম ভি তিস্তা ও এম ভি কংসাবতী-সহ ৪ ভেসেলের কচুবেড়িয়া পৌঁছয়নি। কাকদ্বীপ লট ৮ থেকে এবং গঙ্গাসাগরের কচুবেড়িয়া জেটি ঘাট থেকে ৪টি ভেসেলের সঙ্কেত চিহ্ন দেখা গেলেও তা লোকেট করা যাচ্ছিল না। কারণ ততক্ষণে ঘন কুয়াশার চাদরে চারদিকে ঢেকে গিয়েছিল। কুয়াশার চাদর এতটাই গাঢ় ছিল যে এক হাত দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছিল না। এত কম দৃশ্যমানতায় কীভাবে ৪ ভেসেলকে মাঝ নদীতে লোকেট করা সম্ভব তা নিয়ে একটা সংশয় তৈরি হয়েছিল।

Latest Videos

শেষেমেশ কচুবেড়িয়া জেটিঘাটের দায়িত্বে থাকা এডিএম(এলআর) নীশিথ ঢালি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রদীপ রায়-এর নেতৃত্বে এনডিআরএফ-একটি টিম রবার বোট নিয়ে ৪ নিখোঁজ ভেসেলের সন্ধানে নামে। ঘন কুয়াশায়া জিপিএস ট্র্যাকিং-এর সিগন্যাল ছাড়া আর কোনও সূত্রই ছিল না এনডিআরএফ বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর হাতে। তারমধ্যে ঘন কুয়াশা নদীর মধ্যে দিকচিহ্ন নির্ধারণেও অসুবিধা তৈরি করছিল। কোনওমতে সার্চ টর্চ লাইট জ্বেলে কখনও চিৎকার করে আবার কখনও মাইক দিয়ে আওয়াজ পাঠিয়ে ভেসেলে আটকে থাকা পূর্ণার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যুত্তর পাওয়ার চেষ্টা চলে। এইভাবে কিছুক্ষণ চলার পর মাঝ নদীতে ঘন কুয়াশায় চারটি ভেসেলকে লোকেট করে এনডিআরএফ। এর সঙ্গে খোঁজ মেলে আরও ২ লঞ্চের। তাতেও কম করে শখানেক পূর্ণার্থী ছিল। এরপর আগে আগে এনডিআরএফ-এর দল এবং পিছনে চার ভেসল ও দুই লঞ্চ এগিয়ে চলে কচুবেড়িয়ার দিকে। এনডিআরএফ সার্চ টর্চলাইটের মধ্যে দিয়ে ভেসেলগুলোকে রাস্তা দেখাতে থাকে।

রাত দেড়টা নাগাদ কচুবেড়িয়া জেটিঘাটে এক এক করে ৪টি ভেসেল এসে ভেড়ে এবং সেই সঙ্গে ২টি লঞ্চও নোঙর ফেলে। নিখোঁজ পূর্ণার্থীদের কথা ভেবে কচুবেড়িয়া ঘাটে সাজো সাজো রব ছিল। এরমধ্যে ১৭০০ পূর্ণার্থী নিরাপদ আছে এবং নিরাপদে নিখোঁজ ভেসেলে তারা কচুবেড়িয়া ঘাটে আসছে এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি ছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরাও। রাতের ঠান্ডায় এবং ঘন কুয়াশা যাতে পূর্ণার্থীদের আর বিপদে ফেলতে না পারে তার জন্য গরম গরম খিচুড়ি ও তরকারি নিয়ে জেটিঘাটে অপেক্ষা করছিলেন দধিচি-র স্বেচ্ছাসেবকরা। ভেসেল থেকে নামা ক্ষুধার্ত পূর্ণার্থীদের হাতে গরম খিচুড়ি ও তরকারি তুলে দেওয়া হয়। এরপর এক এক করে বাসে করে পূর্ণার্থীদের গঙ্গাসাগরের মূল মেলা প্রাঙ্গণের উদ্দেশে রওনা করিয়ে দেওয়া হয়। ১৭০০ নিখোঁজ পূর্ণার্থী নিরাপদ জেনে ততক্ষণে হাফ ছেড়ে বাঁচেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। তবে, এই ঘটনার জেরে শনিবার সকালে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি প্রশাসন। ঘন কুয়াশার জেরে দৃশ্যমানতা কম থাকায় ভোর রাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত কাকদ্বীপ লট ৮ ও কচুবেড়িয়ার মধ্যে ভেসেল ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পরে দৃশ্যমানতা বাড়লে ফের ফেরি চালু করা হয়।

Share this article
click me!

Latest Videos

Viral Video! আবাসের টাকা ঢুকতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাটমানি চাইছেন TMC কর্মী | Murshidabad Latest News
প্রেমের আড়ালে লক্ষাধিক টাকা লুঠ! প্রতারণার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনি | South 24 Parganas News Today
‘প্রণামের সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছে বাঙালি’ বিস্ফোরক মন্তব্য Dilip Ghosh-এর, দেখুন কী বলছেন | Dilip Ghosh
'কুমিল্লা ছেড়ে চলে যা' কুমিল্লায় বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা! | Bangladesh News |
শীতের রাতে যমুনার আতঙ্ক! একের পর এক জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাঘিনী | Bandwan Tiger News