ভোট ঘিরে কেন বারবার রক্তাক্ত হচ্ছে বাংলার মাটি? বাম আমলের সন্ত্রাসের ছায়া বর্তমান তৃণমূল জমানাতেও

Published : Jun 20, 2023, 03:15 PM ISTUpdated : Jun 20, 2023, 03:28 PM IST
Here are 10 reasons why there is repeated violence around the polls in West Bengal

সংক্ষিপ্ত

ভোট সন্ত্রাস বাংলার সঙ্গে জুড়ে গেছে। বাম আমলের ধারা অব্যাহত তৃণমূলের জমানাতেও। কিন্তু কেন বারবার ভোটে রক্ত ঝরছে বাংলার মাটিতে। রইল তারই কাটাছেঁড়া। 

পঞ্চায়েত নির্বাচন ২০২৩ ঘিরে ইতিমধ্যেই অশান্ত রাজ্য। উত্তর থেকে দক্ষিণ ক্রমশই প্রকাশ্যে আসছে আশান্তির ছবি। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রাজ্য ও নির্বাচন কমিশনের মামলাও খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে। জানিয়েছেন রাজ্যের ২২টি জেলাকেই মোচায়েত করতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এর আগেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েত থাকা সত্ত্বেও ভোটে আশান্ত হয়ে উঠেছিল রাজ্য । ২০১৩ সালে তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে রাজ্যের বিরুদ্ধে গিয়ে ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তারপরেও আশান্তি রোখা যায়নি। কিন্তু কেন- পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে শুরু করে লোকসভা এমন কি বিধানসভা নির্বাচনেও বারবার অশান্ত হয়ে ওঠে রাজ্য - আজ তারই উত্তর খুঁজি আমরা।

১. বাম আমলে সন্ত্রাস

শুধুমাত্র বর্তমানকালে নয়, ভোট ঘিরে বাম আমলেও একাধিকবার উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। ক্যাডার নির্ভর সিপিআই(এম) এর সময়ও বিরোধীদের ওপর হামলা চলত। চলত দেদার বুথলুঠ। কিন্তু সিপিআই(এম) অত্যান্ত সুশৃঙ্খল দল বলে কখনও ক্যাডাররা মাত্রা ছাড়াতে পারেনি। মারামারি, বুথ লুঠ, ভোট লুঠ চললেও সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ থাকত নেতাদের হাতে। তাই বলা যেতে পারে ভোট -সন্ত্রাস পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘ দিনের সংস্কৃতির সঙ্গেই যুক্ত। একটা সময় বাম আর কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হত। পরবর্তীকালে কংগ্রেসের পরিবর্তে বামেদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল তৃণমূল। যদিও বাম আমলের আগে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের জমানা অর্থাৎ কংগ্রেস জমানাতেও আবাধ ভোট লুঠে আর হিংসার ছবি ধরা পড়েছে বাংলায়।

২. মমতার উত্থান

বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিপক্ষ জয়প্রকাশ নায়ারণের গাড়ির বোনেটের ওপর নেচে। সেই সময় তিনি যুবকংগ্রেস নেত্রী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। রাজনৈতিক দাপট মমতা মজ্জাগত বলেও ধরে নেওয়া যেতে পারে। এই ঘটনার পর থেকেই বাংলার রাজনীতিতে পরিচিত হয়ে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

৩. মমতার মহাকরণ অভিযান

সালটা ছিল ১৯৯২। সেই সময় মহাকরণ অভিযানে গিয়েছিলেন মমতা। অভিযোগ ছিল এক মহিলাকে ধর্ষণের। কিন্তু তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর পুলিশ মমতা টানাহেঁচড়া করে মহাকরণ থেকে বার করে দিয়েছিল। তারপরই মমতা প্রতিবাদে সরব হয়। সেই সময় বাম সরকারের গুলিতে কংগ্রেসের ১৪ জন শহিদ হয়।

৪. তৃণমূল তৈরি

মূলত বামফ্রন্ট আরও খুলে বললে সিপিআই(এম)এর বিরোধিতার জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেছিলেন। সেই সময় থেকেই তিনি দাবি করেছিলেন রাজ্যের মূল বিরোধী দল টিএমসি। কিন্তু তখনও এই রাজ্য থেকে কংগ্রেসের প্রতিনিধি লোকসভা আর বিধানলভায় ছিল। তাই সিপিআই(এম)-এর বিরোধিতা প্রশ্নে মমতা কিন্তু সর্বদাই কংগ্রেসকে গুণে গুণে ১০ গোল দিয়েছেন। পাল্টা তিনি কংগ্রেসকে সিপিআই(এম)এর বি টিম বলেও দাবি করেছেন। বাম আমলে তৃণমূলের প্রতিবাদ বিরোধিতা কিন্তু কখনই তেমন সহিষ্ণুতার ধারধারত না। বরাবরই ছি অ্যাগ্রেসিভ।

৫. ধারা অব্যাহত

২০১১ সাল বিধানসভা নির্বাচনে ৩৪ বছরের বাম সরকারের পতন ঘটে। মহাকরণ দখল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও সেই সময় তৃণমূলের স্লোগান ছিল বদলা নয় বদল চাই- কিন্তু বর্তমানে গ্রাম বাংলা জুড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বদলারই অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা।

৬. একক আধিপত্য

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে আসার আগে থেকেই এই রাজ্যের একাধিক পঞ্চায়েত আর জেলা পরিষদের দখল ছিল তৃণমূলের হাতে। রাজ্যের ক্ষমতা দখলের এ পর একটা সময় পর্যন্ত মমতাকে প্রকাশ্যে বলতে শোনা গেছে রাজ্যের শাসক দল যদি স্থানীয় স্তরে নিয়ন্ত্রক শক্তি না হয় তাহলে উন্নয়ন ব্যহত হয়। আর তৃণমূল কর্মীদের সেই ক্ষেত্রে এলাকা ধরে রাখার দায়িত্ব দেওয়া হত। তাতেই স্থানীয় স্তরে আশান্তি শুরু হয় বলেও আশঙ্কা অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। কিন্তু বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব মমতা আর অভিষেক একাধিকবার দলীয় কর্মীদের শান্তির নির্দেশ দিলেও অনেক সময় তাতে গুরুত্ব দিতে নারাজ নিচু তলার কর্মীরা।

৭. বোমাগুলির সাপ্লাই

বর্তমানে রাজ্য বারুদের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে বলা যেতে পারে। এগরা, বজবজ একের পর এক বাজি কারখানায় দুর্ঘটনা। পুলিশের রিপোর্ট সেখানে প্রচুর পরিমাণে মজুত ছিল বারুদ। কিন্তু কী করে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে চোরা পথে বারুদ এল তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর নেই প্রশাসনের কাছে। অন্যদিকে বীরভূম, মালদা, মুর্শিদাবাদের মত সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতেও অন্যান্যবার ভোটের আগে থেকেই সন্ত্রাস শুরু হয়ে যায়। এবারও তার ভিন্ন ছবি ধরা পড়েনি। তাই বলা যেতেই পারে পুলিশ ভোটে অনেক বেশি নিষ্ক্রীয়। আর সেই কারণে ভোটে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব বাড়ে।

৮. পুলিশ কর্মী বনাম বুথ

এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩১৩৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ভোট গ্রহণ হবে। পঞ্চায়েত সমিতি আর জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা ৬৩ হাজার২২৯ ও ৯২৮। মোট বুধের সংখ্যা ৬৭ হাজারের বেশি। কিন্তু রাজ্যে পুলিশ কমীর সংখ্যা তুলনায় অনেক কম। ৭০ হাজারের মত। তাই প্রতি বুথে ২ জন করেও পুলিশ কর্মী নিয়োগ করা সম্ভব নয়।

৯. এলাকা দখল

পঞ্চায়েত দখল রাখতে মরিয়া রাজ্যের যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলি। কারণ টাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জেলা পরিষদ পাঁচ বছরের জন্য ৫০০ কোটি টাকা ব্যায় করতে পারে। গ্রাম পঞ্চায়েত ৫-১৫ কোটি টাকা খরচ করতে পারে। কেন্দ্র গ্রামের উন্নয়নের জন্য প্রতি বছর এই রাজ্যকে ৪০০০ কোটি টাকা দেয়। তাই পঞ্চায়েত যার হাতে থাকবে এই টাকার মালিকও সেই রাজনৈতিক দল।

১০. পঞ্চায়েত লোকসভার সেমিফাইনাল

এই রাজ্যের প্রধান শক্তি যদি তৃণমূল কংগ্রেস হয় তাহলে অফিসিয়াল প্রতিপক্ষ বিজেপি। কারণ রাজ্যের একমাত্র সরকারি বিরোধী দল। আগামী বছর লোকসভা নির্বচন। কেন্দ্রের বিজেপি নেতারা সেই দিনে গুরুত্ব দিলেও রাজ্য বিজেপি কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে পঞ্চায়েত কেই সেমিফাইনাল হিসেবে দেখছে। তাই বিজেপি এক পাও পিছতে নারাজ। অন্যদিকে বিনাযুদ্ধে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ তৃণমূল। আর সেই কারণে মনোনয়ন তেকেই শুরু হয়েছে ভোট সন্ত্রাস। অন্যদিকে তৃণমূলে এলাকা হাতছাড়া হওয়া মানে সেটা সেই নেতার কাছে একট সম্মানে ব্যাপার। তাই এলাকা ধরে রাখতে রীতিমত মরিয়া তৃণমূল।

আরও পড়ুনঃ

পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি, কেন বিরোধী থেকে যৌথমঞ্চের আস্থা নেই রাজ্য পুলিশে? রইল ১০টি কারণ

'আমরা দর্শক হয়ে বসে থাকব না', পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রাজ্য ও কমিশনকে তোপ আদালতের

 

PREV
click me!

Recommended Stories

BJP News: মুর্শিদাবাদে বদলাচ্ছে রাজনীতির সমীকরণ! বড়ঞায় বিজেপিতে যোগ দিল শতাধিক নেতৃত্ব
জুতো পায়ে আম্বেদকরকে শ্রদ্ধা নিবেদন! ভিডিও ভাইরাল হতেই বিতর্কে তৃণমূল নেতা