জ্ঞান ফিরল মালগাড়ির সহ-চালকের, দুর্ঘটনা রহস্যের জট খুলতে তাঁর বয়ানই ভরসা?

একটি দুর্ঘটনা এবং একাধিক বিভীষিকা। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর অনেকগুলো ঘণ্টা কেটে গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মালগাড়ির আহত সহ-চালক মনু কুমার। জ্ঞান ফিরল তাঁর।

Subhankar Das | Published : Jun 19, 2024 9:21 AM IST / Updated: Jun 19 2024, 11:23 PM IST

একটি দুর্ঘটনা এবং একাধিক বিভীষিকা। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর অনেকগুলো ঘণ্টা কেটে গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মালগাড়ির আহত সহ-চালক মনু কুমার। জ্ঞান ফিরল তাঁর।

গত সোমবার সকালে, রাঙাপানি স্টেশন পেরোনোর ঠিক পরেই ফাঁসিদেওয়ায় দুর্ঘটনার (Kanchanjunga Express Accident) কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। একই লাইনে দুটি ট্রেন চলে আসার ফলেই এই দুর্ঘটনা। একটি মালগাড়ি পিছন থেকে এসে ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে। কার্যত, মালগাড়ির ইঞ্জিনের ধাক্কায় কাঞ্চনজঙ্ঘার বগি উঠে যায় ওপরে। তার নিচ দিয়ে সজোরে ঢুকে যায় মালগাড়ির ইঞ্জিন।

Latest Videos

সেই মালগাড়ির চালক অনিল কুমারের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। আর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সহ-চালক মনু কুমার। হাসপাতালে জ্ঞান ফিরতেই প্রথম প্রশ্ন করলেন, “ড্রাইভার সাহাব ক্যায়সে হ্যায়?” কিন্তু যখন তাঁকে জানানো হল যে, চালক অনিল কুমার আর নেই, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ফের চোখ বন্ধ করে ফেলেন সহ-চালক মনু কুমার।

এরপর আবার চোখ খুলে যন্ত্রণাকাতর মুখে তিনি বলেন, স্ত্রীকে যেন এই দুর্ঘটনার কথা না জানানো হয়। তারপর আবার জ্ঞান হারান মনু। এই দুর্ঘটনায় (Accident) এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ৬ বছরের শিশুও রয়েছে।

দুর্ঘটনার পরে মনু কুমারকে উদ্ধার করে প্রথমে শিলিগুড়ি (Siliguri) রেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে, তড়িঘড়ি শিলিগুড়ির (Siliguri) একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত তিনি।

আপাতত তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তবে দুর্ঘটনার ঘোর এখনও কাটেনি মালগাড়ির সহ-চালকের। ট্রমার মধ্যে আছেন তিনি। তাঁকে কোনও কথা জিজ্ঞাসা করা হলে অনেকক্ষণ বাদে সেই কথার জবাব দিচ্ছেন মনু কুমার। এমনকি, মাঝেমধ্যে জ্ঞানও হারিয়ে ফেলছেন।

মূলত, বিহারের সহরসা জেলার বাসিন্দা এই মনু কুমার। প্রায় আট বছর ধরে তিনি রেলে কাজ করছেন। তাঁর সহকর্মীদের কথায়, “ওই মালগাড়ির চালকের সঙ্গে কর্মসূত্রেই মনুর পরিচয় হয়। একসঙ্গে কাজ করতে করতে দুজনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চোখের সামনে এমন দুর্ঘটনা এবং বন্ধুর মৃত্যু তাড়া করে বেড়াচ্ছে মনুকে।”

যদিও এখন কর্মসূত্রে স্ত্রীকে নিয়ে শিলিগুড়ির ভক্তিনগর এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন মনু কুমার। গত সোমবার, দুর্ঘটনার খবর সহরসা গ্রামে পৌঁছতেই শিলিগুড়ি ছুটে আসেন মনুর বাবা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, ছেলেকে দেখতে শিলিগুড়ির সেই বেসরকারি হাসপাতালে আসেন তিনি। হাসপাতালে এসেও নিজের ছেলেকে দেখতে সাহস পাচ্ছিলেন না ওই বৃদ্ধ।

ছলছল চোখে বাবার একটাই প্রশ্ন ছিল, “আমার ছেলেটা ভালো আছে তো?” তারপর মনুর সহকর্মীরাই আশ্বস্ত করলেন তাঁকে। তারপর ছেলের সুস্থতার খবর পেয়ে একটু আশ্বস্ত হয়ে তিনি রওনা দেন শিলিগুড়ির দিকে।

আর এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে উঠে আসছে একাধিক তথ্য। কিন্তু আসল কারণ হয়ত জানা যেতে পারে ওই মালগাড়ির সহ-চালকের থেকেই। হাসপাতালে শুয়ে থাকা মনু কুমারও হয়ত সেটা বুঝতে পেরেছেন যে, তাঁর বয়ান কতটা মূল্যবান। এদিকে বুধবার থেকে রেল কমিশন ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। একাধিক ব্যক্তির বয়ান রেকর্ড করা হবে বলে জানা যাচ্ছে।

তদন্তে উঠে আসবে আরও অনেক প্রশ্ন। ট্রেনের গতি কত ছিল? কোন কোন সিগন্যাল পার করেছিল ট্রেনগুলি? এই সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে শুধু মনু কুমারের কাছেই। তবে আপাতত তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন হাসপাতালে।

এদিকে মালগাড়ির সহ-চালক মনু কুমারের খবর নিতে মঙ্গলবারই, মালেগাঁও থেকে এসে উপস্থিত হন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত (এনএফ) রেলওয়ের মজদুর ইউনিয়নের সদস্যরা। সেই মজদুর ইউনিয়নের সম্পাদক তথা অবসরপ্রাপ্ত ট্রেন চালক আশিস বিশ্বাস মানতে নারাজ যে, এই ঘটনা শুধুমাত্র চালকের গাফিলতির ফল।

তিনি বলেন, “চালকের সংখ্যা এতই কম যে, তারা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পর্যন্ত পান না। রেলওয়ে (Indian Railways) সেফটি কমিটির পর্যালোচনা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, টানা দু-রাতের বেশি কোনও চালক ডিউটি করতে পারবেন না। দুদিন নাইট ডিউটির পর তাঁকে একদিন অবশ্যই বিশ্রাম দিতে হবে। সেখানে এই মালগাড়ির চালক টানা তিন দিন নাইট ডিউটি করেছিলেন। পরের দিন তাঁকে ভোরে ফোন করে ডিউটির কথা বলা হয়েছিল৷ এটাই একটা বড় সমস্যা।”

আশিসবাবুর কথায়, “স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর চালকদেরকে যে ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত সেটা অনেকক্ষেত্রেই করা হয় না। একই পরিস্থিতি সিগন্যাল দফতরেও। সেখানেও কর্মী ভীষণ কম। ফলে, সিগন্যালের কারণে ট্রেন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলে, তাদের ওপরেই চাপ আসতে থাকে। তাই এই ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া সোমবার কোশন অর্ডারে ট্রেন চলছিল। কিন্তু দুর্ঘটনায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের ওপর যা প্রভাব পড়েছে, তাতে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতিবেগে যদি ট্রেন চলত তাহলে এই অবস্থা হওয়ার কথা নয়। তাই এক জনের কাঁধে দোষ না চাপিয়ে পুরোটা তদন্ত করে দেখা উচিত।”

সবমিলিয়ে, এই দুর্ঘটনা ঘিরে দানা বাঁধছে রহস্য। আর মালগাড়ির সহ-চালক মনু কুমারের জ্ঞান ফিরে আসা নিঃসন্দেহে ভালো খবর।

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।

Share this article
click me!

Latest Videos

ঝড়-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই কাজ চলছে জোরকদমে! এবার Mithakhali-তে দেখা যাবে America-র নীলকন্ঠ মন্দির!
ভরা কোটাল আসার আগেই নদী বাঁধে ধস! আতঙ্কে দিনযাপন ট্যাংরামারির বাসিন্দাদের | North 24 Parganas News
'ডাক্তারদের জন্যই আমার বাচ্চাটা চলে গেল!' কি ঘটেছিল Sagar Dutta Medical-এ? দেখুন
সাগর দত্তের নার্সিং স্টাফদের আর জি কর করে দেওয়ার হুমকি, প্রতিবাদে MSVP-কে ঘিরে বিক্ষোভ | Agitation
Daily Horoscope Live: ২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সঙ্গীর সঙ্গে কোনও বিবাদ হতে পারে, দেখুন জ্যোতিষ কথা