বগটুই কাণ্ড নিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় দলীয় বৈঠকে আক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ। পাল্টা তোপ দাগেন শুভেন্দু অধিকারী।
সম্প্রতি বগটুই গণহত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হয়। বাম-কংগ্রেস, বিজেপি ও তৃণমূল রাজ্যের চারটি রাজনৈতিক দলই নিজেদের মত করে ভয়ঙ্কর সেই দিনের কথা স্মরণ করেছে। মৃতদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। পাশাপাশি আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষ্যে নিজেদের রাজনৈত জমি শক্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দল সরসরি দ্বন্দ্ব জড়িয়ে পড়েছে। বগটুই নিহতগের পরিবারগুলি তৃণমূল নেতাদের তাঁদের বাড়িতে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে। পাল্টা তারা বিজেপি শিবিরে ভিড় করেছেষ শুক্রবার কালীঘাটের দলীয় বৈঠকে তা নিয়ে আক্ষেপ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন,' কি করিনি ওদের জন্য। চাকরি দিয়েছি,ক্ষতি পূরণ দিয়েছি,সমাজিক প্রকল্পের সুযোগ দিয়েছি। তারপরো ওরা অন্য দলের সংস্পর্শে যাচ্ছে।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল বেতা তেমনই জানিয়েছেন।
অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, বগটুইয়ের বাসিন্দারা এখন বিজেপির সঙ্গে রয়েছে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাগের কারণ। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে যদি পঞ্চায়েত নির্বাচন হয় তাহলে বীরভূমের বাসিন্দারা এখনই জবাব দিয়ে দেবে। আর সেই কারণে তিনি বগটুই নিয়ে কোনও কথা বললেননি। বগটুইকাণ্ডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইটের প্রেক্ষিতে বলেন ওখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল কটাক্ষ করেন।
বীরভূমে বগটুইকাণ্ড নিয়ে গত বছর উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। গত বছর ২১ মার্চ রাত্রি সাড়ে আটটা নাগাদ ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বগটুই মোড়ে বোমা মেরে খুন করা হয় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখকে। ওই রাত্রে ভাদুর ছায়াসঙ্গী ছিল লালন শেখ। ঘটনস্থল থেকে পালিয়ে প্রাণ বাঁচান। এদিকে ভাদু শেখ খুনের পরে পরেই বগটুই গ্রামের একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় ১০ জনের। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ প্রথমে ২২ জনকে গ্রেফতার করে। দুদিন পর ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পরই তৃণমূলের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্যদিকে ভাদু শেখের খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় ৬ জনকে। হাইকোর্টের নির্দেশে দুটি ঘটনার তদন্তভার নেয় সিবিআই। ২১ জুন সিবিআই দুটি ঘটনার চার্জশিট জমা দেয়। সেই তালিকায় লালন শেখের নাম ছিল শীর্ষে। কিন্তু তাকে নাগালে পায়নি। ঘটনার পরদিন সকাল ১০ টা পর্যন্ত লালনকে এলাকায় দেখা গিয়েছিল। পুলিশ ধরপাকড় শুরু করতেই গা ঢাকা দেয় সে।
তারপর থেকেই লালন শেখের জন্য বিশেষ তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআই। শেষপর্যন্ত শনিবার ঝাড়খণ্ডের পাকুড় মফঃস্বল থানার নরোত্তমপুর গ্রাম থেকে লালনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। জানা গিয়েছে,রামপুরহাটের এক নাপিতের মাধ্যমে পাকুড়ের এক নাপিতের কাছে লালনের প্রয়োজনীয় টাকা পৌঁছে যেত। সেই নাপিতকে ধরেই পুলিশ লালনের কাছে পৌঁছে যায়।