শ্বেতা একাধারে কামারহাটি পুরসভায় ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করতেন আবার পাশাপাশি মডেলিংও করতেন। সূত্রের খবর ২০১৭ সালে অয়নের স্ত্রীর মাধ্যমেই শ্বেতার সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। অয়নের সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করতেন শ্বেতা।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার তৃণমূলনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্য়ায় ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীল। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ কোটি টাকার চাকর বিক্রির অভিযোগ। অয়নের সল্টলেকের ফ্ল্যাট থেকে মিলেছে ২০১২ থেকে ২০১৪ চালের টেট পরীক্ষার ওএমআর শিটও। অয়ন শীলের সূত্র ধরেই নিয়োগ দুর্নীতিতে উঠে এসেছে আরও এক নতুন নাম। অয়নের ঘনিষ্ঠ বন্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তীর সঙ্গে মোটা টাকার লেনদেনের হিসেবও এসেছে ইডির হাতে। তবে এখানেই শেষ নয়। জানা যাচ্ছে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা টলিউডেও ঢেলেছিলেন অয়ন শীল। বান্ধবী শ্বেতাকে সিনেমায় নামাতে নিজের প্রোডাকশন হাউসো খোলেন তিনি। শ্বেতা একাধারে কামারহাটি পুরসভায় ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করতেন আবার পাশাপাশি মডেলিংও করতেন। সূত্রের খবর ২০১৭ সালে অয়নের স্ত্রীর মাধ্যমেই শ্বেতার সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। অয়নের সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করতেন শ্বেতা।
পরে অয়ন শীলের হাত ধরেই টলিউডে পা রাখেন শ্বেতা। অয়নের প্রোডাকশন হাউসের প্রোযোজনায় নির্মিত ছবি 'কবাডি কবাডি'তেই ডেবিউ করেছিলেন তিনি। ওই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ঋত্বিক চক্রবর্তী, সোহিনী সরকার, অর্জুন চক্রবর্তীর মতো অভিনেতারা। ছবির পরিচালনায় ছিলেন কৌশিক গাঙ্গুলী। যদিও ছবির কাজ শুরু হলেও শেষ হয়নি বলেই জানা যাচ্ছে। বড় পর্দায় দেখা না গেলেও বহু শর্ট ফিল্ম ও মডেলিং প্রজেক্টে দেখা গিয়েছে শ্বেতাকে। অয়ন শীলের সল্ট লেকের ফ্ল্যাট থেকে মিলেছে 'কাবাড্ডি কাবাড্ডি' ছবি-সংক্রান্ত কাগজপত্রও। এই সিনেমায় কে কত টাকা পারিশ্রমিক পেত সেই সংক্রান্ত নথিও মিলেছে। প্রসঙ্গত আগেই জানা গিয়েছে অয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে শ্বেতার অ্যাকাউন্টে ২৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। অয়নের ৩২টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মধ্যে একটি রয়েছে শ্বেতারও। শুধু তাই নয় শ্বেতার নামে রয়েছে একটি হন্ডা সিটি গাড়িও। ইডির সন্দেহ এই বিলাসবহুল গাড়ির টাকা আসে অয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে শ্বেতার অ্যাকাউন্টে ট্রেনসফার হওয়া ২৫ লাখ টাকা থেকেই।
তদন্ত এগোনোর সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে দুর্নীতির অঙ্ক ও ব্যাপ্তি। প্রায় রোজই উঠে আসছে চমকে দেওয়ার মতো একাধিক তথ্য। মঙ্গলবার আদালতে ইডির দাবি শুধুমাত্র প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রেই কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। আগামী দিনে এই অঙ্ক আরও বাড়বে বলে দাবি তদন্তকারী সংস্থার। পাশাপাশি দুর্নীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে জড়িত কুন্তল ঘোষ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, অয়ন শীলরাও। মঙ্গলবার আদালতে ধৃত অয়ন শীল সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছে ইডি। তাঁদের দাবি ২০২১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার চাকরি বিক্রি করেছেন অভিযুক্ত অয়ন শীল।
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলের গ্রেফতারির পর থেকেই উঠে আছে একের পর নতুন তথ্য। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে শুধু স্কুলে নয় পুরসভাতেও নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা। ইতিমধ্যেই বিষয়টি সিবিআইকে জানানো হয়েছে। ইডির আরও দাবি মানিকের সঙ্গে যোগসাজোশ করেই প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলেছিল অয়নরা। ইডি সূত্রে আরও জানা যায় পুরসভায় চাকরির জন্য এজেন্ট মারফত তালিকা আসত অয়নের কাছে। মোট ৬০টি পুরসভায় অন্তত ৫ হাজার চাকরি বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবার অয়নের ল্যাপটপ, মোবাইল ঘেটে মিলল একাধিক এজেন্টের নাম ও চাকরি প্রার্থীদের তালিকাও। এখনও পর্যন্ত চারজন এজেন্টের নাম জানা গিয়েছে। অয়নের মোবাইলে তপনদা, লালদা, কানুদা, এমডি- এইরকম নাম থেকে তালিকা আসত চাকরিপ্রার্থীদের। ইডি সূত্রে খবর, তপনদা নামের এজেন্টের কাছ থেকে ১৫ জন চাকরিপ্রার্থীর নাম এসেছিল। লালদা পাঠিয়েছিলেন ৬৪ জনের নাম৷ কানুদা একাই ৯৬ জন চাকরিপ্রার্থীর তালিকা দিয়েছিলেন এবং এমডি ৪৩ জনের তালিকা পাঠিয়েছিলেন অয়নকে।