‘কালী’ এখানে ‘কালী’ নন, তিনি হলেন ‘ব্রহ্মময়ী’। দেবী এখানে ‘মা’ নন, তিনি হলেন ‘মেয়ে’। জেনে নিন মূলাজোড় কালীবাড়ির অদ্ভুত ঐতিহাসিক কাহিনী।
উত্তর ২৪ পরগণার শ্যামনগর স্টেশনের কাছেই আছে মূলাজোড় গ্রাম। এখানেই দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন মা ব্রহ্মময়ীর কাছে পুজো দিতে। ভাগীরথী নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত এই কালী মন্দিরটির ইতিহাস অত্যন্ত বেদনাময়।
কথিত আছে, এই কালী বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার বিখ্যাত জমিদার গোপীমোহন ঠাকুর। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ভাই। তাঁর স্নেহের কন্যা ব্রহ্মময়ীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল মাত্র আট বছর বয়সে। বিয়ের পরের দিন পালকি করে আহিরীটোলার গঙ্গার ঘাট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সদ্যবিবাহিতা ছোট্ট ব্রহ্মময়ীকে। সেই স্থানেই ব্রহ্মময়ী গঙ্গার স্রোতে তলিয়ে যায়।
কন্যা হারানোর শোকের মধ্যেই পিতা গোপীমোহন এক অদ্ভুত স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে দেবী কালী তাঁকে ডেকে বলেন যে, তিনিই গোপীমোহনের কন্যা ব্রহ্মময়ী। গঙ্গায় তল্লাশির পর যেখানে ব্রহ্মময়ীর শরীর খুঁজে পাওয়া যাবে, সেখানেই যেন গোপীমোহন একটি কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এরপরেই গোপীমোহন মূলাজোড় ঘাটে এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করালে ব্রহ্মময়ীর দেহ উদ্ধার হয়। একই সঙ্গে ওই স্থান থেকে কষ্টিপাথরের তৈরি করা একটি দেবীমূর্তিও খুঁজে পাওয়া যায়। এরপরেই স্বপ্নাদেশ মেনে মূলাজোড় ঘাটে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার।
১৮০৫ সালে ‘ব্রহ্মময়ী’ কালী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে কালী-কে নিজের মেয়ে-রূপে পুজো করতেন গোপীমোহন। মন্দিরপ্রাঙ্গণে রয়েছে ১২টি শিবমন্দির। কালী মন্দিরটি নবরত্ন শিল্পশৈলীতে নির্মিত। গর্ভ মন্দিরে স্থাপিত প্রসন্ন মুখমণ্ডলের দেবী বিগ্রহটি কালোপাথরের নির্মিত। উচ্চতায় প্রায় ৩ ফুট। দেবী স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিতা থাকেন এবং বসন পরে থাকেন। এখানকার কালী মন্দিরসহ শিবমন্দিরগুলি সব পশ্চিমমুখী। এই নিয়েও রয়েছে একটি ইতিহাস।
বহুকাল আগে এই মূলাজোড় জায়গাটি ছিল ডাকাতদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। এই দেবী তাদেরই আরাধ্য হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু, কখনও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে এখানে দেবীর পুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কথিত আছে, সাধক রামপ্রসাদ যখন ভাগীরথী নদীর ওপর দিয়ে গান গাইতে গাইতে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর গানের টানে এখানকার দেবীর মুখ পশ্চিম দিকে ঘুরে গিয়েছিল।
অনেকে বলেন যে, এই মন্দিরে সাধক বামাক্ষ্যাপা স্বয়ং এসে নিজের হাতে দেবীর পূজা করতেন। জমিদার গোপীমোহন গানের খুব বড় ভক্ত ছিলেন। শোনা যায়, কালী মির্জা তাঁর আমলের বিখ্যাত গায়ক ছিলেন। তিনিও এখানে এসে দেবীকে গান শোনাতেন। গোপীমোহন নিজেও দেবীর উদ্দেশ্যে গান রচনা করেছিলেন। এখানে মাতৃমন্দিরের পাশাপাশি রয়েছে দ্বাদশ শিব মন্দির।
কেন দেবাদিদেব মহাদেবের বুকের ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন মা কালী?
মানুষের কাটা মাথা! কেন সেই মুণ্ডের মালাই শোভা পায় মা কালীর গলায়?
‘শ্যামা মা কি আমার কালো রে’, কালীর গায়ের রং কালো হওয়ার অর্থ কী?