দুর্নীতির জাল থেকে বেরোতে ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছেন গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল ঘোষের ‘বান্ধবী’ সোমা চক্রবর্তী। কিন্তু, এত সহজেই কি তাঁকে নিস্তার দেবে ইডি?
সল্টলেকের অভিজাত এলাকায় নেল পার্লার রয়েছে সোমা চক্রবর্তীর। বছর পাঁচ-ছয়েক আগে হুগলীর তৎকালীন যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের সাথে এক ‘কমন ফ্রেন্ড’-এর মাধ্যমে তাঁর আলাপ হয়েছিল। তারপর আলাপ ঘনিয়ে ওঠে বন্ধুত্বে। সেই বন্ধুত্ব পৌঁছে গিয়েছিল একেবারে মোটা টাকার লেনদেনে। সোমার পার্লারের ব্যবসা প্রায় ১০ বছর ধরে অব্যাহত। এরই মধ্যে সদ্য ‘বন্ধু’ হয়ে ওঠা কুন্তলের থেকে লাখ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন সোমা। সেই টাকাই ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইডি।
প্রথমে যখন সোমাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, তিনি কুন্তলের থেকে মোট কত টাকা নিয়েছেন, তখন তিনি বলেছিলেন যে, কুন্তল তাঁকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। তদন্তের পর সেই ৫ লক্ষের হিসেব গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫৫ লক্ষে। এই টাকার হিসেব মিলতেই গত ১১ মার্চ সোমা বলেন যে, ‘২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাত-আট মাসে একটা লেনদেন হয়। ৫০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি দিয়েছিলেন কুন্তল। গত ১০ বছর ধরে আমার বিজনেস আছে। আমার সোর্সিং লাগে। অনেকের কাছেই আমার লোন আছে কুন্তল ঘোষ তার মধ্যেই একজন। তাই টাকা নিয়েছিলাম। তবে এর বাইরে আর কোনও টাকা নিইনি। এটা এমন কিছু ব্যাপার না।’ যেহেতু তিনি ‘ধার’ নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন, সেহেতু সম্পূর্ণ টাকা তাঁকে ডিমান্ড ড্রাফট করে কুন্তলের অ্যাকাউন্টে ফেরৎ দিতে বলে ইডি। সেই টাকা তিনি ফেরৎ দিয়েছেন ১৭ মার্চ, শুক্রবার। টাকা ফিরিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘ওটা আমার একটা লোন অ্যাকাউন্ট। ৫৫ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকাই ঋণ হিসাবে নিয়েছিলাম। সেটা কুন্তল ঘোষের অ্যাকাউন্টে ফিরিয়ে দিলাম।’
তবে, এখন প্রশ্ন উঠছে যে, টাকা ফেরৎ দেওয়ার পরেই কি নিস্তার পেয়ে যাবেন তিনি? এই প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর এবং কুন্তল ঘোষের আরও একটি বড়সড় লেনদেন। মাত্র ৬-৭ মাসে কুন্তল ঘোষ যে তাঁকে ৫৫ লক্ষেরও বেশি টাকা ধার দিয়েছিলেন, তা স্বীকার করেছেন সোমা নিজেই। কিন্তু, তার মাঝখানেই কুন্তলের দুই শিশু-সন্তানের নামে খোলা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে একবার ৬ কোটি টাকা ঢুকেছিল সোমা চক্রবর্তীর অ্যাকাউন্টে। সেই টাকা পরবর্তী সময়ে অন্য কোনও এক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে যায়। এই টাকা কোন উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল এবং কার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছিল, ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়েও কাটাছেঁড়া করছেন তদন্তকারী অফিসাররা। তাই, নিয়োগ দুর্নীতির ঘোলা জলে আর কোন কোন রহস্য লুকিয়ে আছে, তা এখনও জোরালো তদন্তের অন্দরে।
আরও পড়ুন-
'অনেকের কাছেই আমার ধার আছে, কুন্তল তার মধ্যে একজন, এটা এমন কিছু ব্যাপার না', সংবাদমাধ্যমের কাছে অকপট সোমা চক্রবর্তী
কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক অনুব্রতর ‘রাঁধুনি’ বিজয় রজক, তিনি দিল্লিতে হাজিরা দিতেই সুকন্য়ার ১৬ কোটির তত্ত্ব ফাঁস