প্রাথমিকে নিয়োগে সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেল চাকরিপ্রার্থীরা। ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগের ওপর অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ জারি আদালতের।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় ধাক্কা । এবার অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ের কারণে আপাতত প্রাথমিক স্কুলগুলিতে কোনও শিক্ষক নিয়োগ করতে পারেবে না রাজ্য সরকার। চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়া ১২ হাজার শিক্ষকের কাজ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদালতের রায়ে তা থমকে গিয়েছে।
গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর একটি রায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বলেছিলেন যে সব চাকরিপ্রার্থী ডিএসএড এর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাদেরকও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শামিল করতে হবে। চাকরিপ্রার্থীদের একাংশা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে জানিয়েছিল, ডিএলএড পরীক্ষা বিলম্বিত হওয়ার কারণে তারা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছে না। তাদের বক্তব্য শুনে শেষ বছরের শিক্ষার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাখার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে ডিভিশন বেঞ্চের রায় ছিল নিয়োগের দিনক্ষণ ঘোষণার পর দিন পর্যন্ত যারা ডিএসএড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন কেবল তারাই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে। ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে চ্য়ালেঞ্জ জানিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের একটি অংশ আদালতের দ্বার্থ হয়। সেই শুনানিতেই চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যে একাধিক মামলা চলছে। যে কারণে প্রায় থমকে রয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। নিয়োগ ক্ষেত্র স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে। টাকার বিনিময় চাকরি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি একটি মামালায় ২০২০ সালে টেট পরীক্ষা দেওয়ার এক চাকরিপ্রার্থীকে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য ডাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। কিন্তু পর্যদ সেই নির্দেশ মানেনি। চাকরিপ্রার্থীর ইন্টারভিউ নেওয়া হয়নি বলেও জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। জবাবে পর্যদের আইনজীবী বলেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্যদ সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে। সেই কারণেই সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তারপরই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চের কেস নম্বর জানতে চান। কিন্তু পর্যদের আইনজীবী তা জানাতে পারেননি। তারপরই কলকাতা হাইকোর্টে জরুরি তলব করা হয় মধ্য শিক্ষা পর্যদের চেয়ারম্যান গৌতম পালকে।
আদালত গৌতম পালের কাছেও ডিভিশন বেঞ্চের কেস নম্বর জানতে চাইলে তিনিও সদুত্তর দিতে পারেননি। তারপরই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গৌতম পালকে কড়া ধমক দেন। তারপরই বলেন, 'আমি আপনার বেতন বন্ধ করে দিচ্ছি। সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও ধার্য করছি।' বিচারপতির এই মন্তব্যে কার্যত ভেঙে পড়েন মধ্যশিক্ষা পর্যদের সভাপতি গৌতম পাল। তিনি এজাতীয় কড়া পদক্ষেপ না নিতে আর্জি জানান। তিনি বলেন, ' ধর্মাবতার দয়া করে এক সপ্তাহ সময় দিন। আপনার নির্দেশ আমি কার্যকর করব।' তিনি আরও বলেন, পর্যদ তাঁকে বেতন দেয় না। তিনি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতন পান। তারপই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, তিনি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যলায়কে বেতন বন্ধ করার কথা জানিয়ে দিচ্ছেন। তারপর আবারও গৌতম পাল আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বেতন বন্ধ না করার জন্য মিনতি করেন। তিনি বলেন বেতন বন্ধ হয়ে গেলে তাঁর পরিবারের ক্ষতি হবে। বাড়িতে অসুস্থ মা রয়েছে। এরপরই আদালত তাঁকে পাঁচ মিনিট সময় দেয় আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করার।
পাঁচ মিনিট পরে গৌতম পাল আদালতে এসে জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হবেন না। সংশ্লিষ্ট চাকরিপ্রার্থীকে পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ দেওয়া হবে। পাল্টা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আরও দুই সপ্তাহ সময়সীমা বেঁধে দেন আদেশ কার্যকর করার জন্য। তিনি আরও বলেন, 'আপনারা অধ্যাপক , আপনাদের সর্বদা শ্রদ্ধা করি। কিছু রাজনৈতিক নেতা আদালতের নাম উল্টোপাল্টা বলেন, তাদের শ্রদ্ধা করি না।' এদিন আপাতত রেহাই পান গৌতম পাল।