বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কেন্দ্র সরকার প্রাপ্য অর্থ পাঠায়নি বলে অভিযোগ তুলেছে রাজ্য সরকার। এই পরিস্থিতিতে বাংলার মানুষকে বাঁচাতে নতুন পথে হাঁটতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছ থেকে বরাদ্দ অর্থ না মেলায় বারবার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে রাজ্যের শাসক দল। এক বছরের বেশি পার হয়ে গেলেও একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বাংলাকে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার এক টাকাও দেয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এর ফলে গ্রামবাংলার মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টাকা না দিয়ে রাজ্যে বারবার কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয়েছে। এই সমস্যার কোনও সুরাহা করতে না পেরে এবার গ্রামীণ এলাকার অদক্ষ শ্রমিকদের পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ তৈরি করেতে বিকল্প প্রকল্পের কথা ভাবছে নবান্ন।
জানা গেছে, ১০০ দিনের কাজ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বিকল্প স্কিম বা প্রকল্পটি হবে একেবারে রাজ্য সরকারের নিজস্ব। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দফতর থেকে ইতিবাচক সাড়া মিললেই শীর্ষমহলের অনুমোদন চাওয়া হবে। তারপরেই চূড়ান্ত হবে প্রকল্পের যাবতীয় পরিকল্পনা। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় বাজেট প্রস্তাব পেশ করবে রাজ্য সরকার। সব ঠিক থাকলে সেখানেই নয়া প্রকল্প প্রস্তাব আকারে পেশ করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি হাসিমারায় সরকারি সুবিধা প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘হাজার বঞ্চনা হলেও বাংলা কারও কাছে হাত পাতবে না। আমি ভিক্ষা করার লোক নই। এবার আমরা নিজেদেরটা নিজেরা বুঝে নেব।’ তাঁর ওই ঘোষণার ভিত্তিতেই রাজ্য সরকার নিজস্ব প্রকল্প আনার কথা ভাবছে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্র টাকা না দেওয়ায় ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করেও পারিশ্রমিক পাননি বাংলার বহু মানুষ। তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে বীরভূমের সভামঞ্চ থেকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের নিজস্ব প্রকল্প চালু হলে কী কী সুবিধা গ্রামীণ মানুষকে দেওয়া যাবে, সে বিষয়ে আগাম ধারণা নিয়েই মাঠে নামতে চাইছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্র টাকা না দিলেও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের প্রকল্পে জব কার্ড হোল্ডারদের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে রাজ্য। সরকারের দাবি, ইতিমধ্যে ৪০ লক্ষের বেশি মানুষ কাজ পেয়েছেন। ১০ কোটিরও বেশি শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। মজুরি হিসেবে দেওয়া হয়েছে প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা। সূত্রের খবর, রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি একটু চাপের থাকলেও মানুষের স্বার্থে বাজেটে চলতি প্রকল্পগুলির উপর কোপ পড়ার আশঙ্কা থাকছে না।
রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন। দীর্ঘদিন ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ থাকায় এবং প্রাপ্য টাকা না পাওয়ায় মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ জমেছে তার প্রভাব ভোটবাক্সে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে টাকা না দেওয়ায় বিজেপির ভোট কমতে পারে। অন্যদিকে, রাজ্যের মানুষের জন্য বিকল্প কিছু না ভাবলে তৃণমূলের ভোট কমতে পারে। এই পরস্থিতিতে রাজ্য সরকার নিজেই যদি বিকল্প একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে পারে, তাহলে সেটা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মাস্টারস্ট্রোক।
আরও পড়ুন-
ভোরবেলার পর দুপুর ১টা, সোমবার দ্বিতীয় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল তুরস্ক! দেশ জুড়ে মৃত্যুর হাহাকার
ভারতীয় রেলে চালু হচ্ছে ই-ক্যাটেরিং পরিষেবা, হোয়াটসঅ্যাপেই খাবার বুক করতে পারবেন যাত্রীরা
পরেশ রাওয়ালের বাঙালি-বিদ্বেষী মন্তব্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট