তেলের দাম নিয়ে যে রাজনীতি হচ্ছে তাতে ঘোর আপত্তি অশোক লাহিড়ির। তারমতে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণের রেগুলেটরটা যদি রাজনৈতিক নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া যায় তাহলে আর দেখতে হবে না। ভোট দেখে তখন রেগুলেটর ঘুরিয়ে দাম কমাবো আর বাড়াবে।
তেলের দাম বাড়তে বাড়তে কোথায় গিয়ে যে থামবে তার কোনও ঠিকানাই পাওয়া যাচ্ছে না। পেট্রলের দাম ১০০ টাকা পেরিয়েছে বহুদিন, এখন সেই দামকেও অনেকটা পিছনে ফেলে আরও সামনে ছুটে চলেছে বর্তমান মূল্য। একই হাল ডিজেলের দামেও। ডিজেলের দামও এখন শতকের গণ্ডী পার করার অপেক্ষায়। তেলের এমন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে রাজনীতি চলছেই। এমতাবস্থায় অর্থনীতিবিদ তথা বালুরঘাট বিধানসভার বিধায়ক অশোক লাহিড়়ি তেলের দামে রাজনীতি নিয়ে সরব হলেন। তিনি জানিয়েছেন, তেলের দাম কখন কমবে, কখন বাড়বে- এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার যদি রাজনীতিবিদদের উপর ছেড়ে রাখা যায়, তাহলে তারা ভোটব্যাঙ্ক দেখে কখনও দাম বাড়াবে, কখনও দাম কমাবে।
তেলের দাম বাড়া নিয়ে অবশ্য অশোক লাহিড়ি সাফ জানিয়েছেন, একজন গাড়ি চড়বে, আর অন্যজন তার গাড়ির চালানোর তেলের দাম বহন করবে। এটা হতে পারে না। তিনি জানান, দেশের তাবড় তাবড় অর্থনীতিবিদরা এর আগেও বলেছেন, তেলের দামে ভর্তুকি বন্ধ করার কথা। কারণ, তেলের দামে ভর্তুকি দিয়ে আখেরে অন্যের উপরে ঋণের বোঝা চাপে।
এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি ওয়েল ফান্ড বলে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। তেলের দামের বোঝা যাতে সাধারণ মানুষের উপরে না পড়ে তার জন্য তাতে নানা রকমের বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। যেভাবেই হোক দেশীয় বাজারে তেলের দামকে সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এই করতে গিয়ে যে টা হয়েছে তাতে দিনের পর দিন সরকার ভর্তুকি দিয়ে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করলেও তেলে ঋণের ভার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঋণের ভার যেমন দেশের উপরে চেপেছে, তেমনি দেশের নাগরিকদের উপরও এর দায়ভার বর্তেছে। তাই তেলের দামকে সবসময়ই ভর্তুকিহীন রাখাটাই যুক্তিযুক্ত। এখনও এই ঋণের দায়ভার মিটিয়ে চলেছে ভারত সরকার।
অপরিশোধিত তেলের দাম বিশ্ববাজারে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারেও তেলের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলে দেশের তেলের দাম সেভাবে আর কমে না। এর কারণও ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অশোক লাহিড়ি বলেছেন যে, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলে দেশের এবং দেশবাসীর সুবিধা। কারণ, সরকার নিয়ন্ত্রিত তেল সংস্থাগুলো তেলে বাড়তি দাম নিয়ে যে মুনাফাটা অর্জন করে, তা দিয়ে তারা ঋণটাকে মেটাতে সমর্থ হয়। এর ফলে তেলে ঋণের যে বোঝা ভারত সরকারের উপরে চেপে বসে আছে তার ভারটা অনেকটা লঘু হয়।
তবে, তেলের দাম নিয়ে যে রাজনীতি হচ্ছে না তা এক্কেবারেই অস্বীকার করেননি অশোক লাহিড়ি। রাজনীতিবিদরা সুযোগ পেলেই যে তেলে নিয়ে রাজনীতি করছেন তাতে কোনও রাখ-ঢাক তিনি রাখেননি। এমনকী, নিজেও যে এখন একজন রাজনীতিবিদ সে কথাও প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার যখনই তেলের দাম বাড়ানোর কথা ঘোষণা করছে তখন যদি রাজ্য সরকারগুলি তেলের উপরে কর অনেকটা কমিয়ে দেয় তাহলে সাধারণ মানুষের সুবিধা হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে তিনি আবার ইউপিএ সরকারের আমলে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে ভর্তুকি বেঁধে দেওয়ার বিষয়টিকেও টেনে নিয়ে আসেন। সে সময় কীভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর বিরোধিতা করেছিলেন তাও উল্লেখ করেন। তিনি জানিয়েছে, সে সময় ইউপিএ সরকার ভর্তুকি-সহ ৬টি সিলিন্ডার দেওয়ার কথা বলেছিল। এটাও অনেকটা বেশি ছিল। কারণ, গরিব মানুষদের ঘরে ২টো সিলিন্ডারেই বছর পার হয়ে যায়। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে সময় ভর্তুকি যুক্ত গ্যাস সিলিন্ডার ২৪টি করার দাবি জানান। যার ফলে, ইউপিএ সরকার সেই প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছিল। এভাবে ভর্তুকির রাজনীতির করে আখেরে দেশের মানুষেরই অপকার সাধিত করা হয় বলেও মন্তব্য করেছেন অশোক লাহিড়ি।
আরও পড়ুন|রাজ্য বাজেটে চা শিল্পে স্বস্তি, কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানো হল আরও এক বছর
আরও পড়ুন| 'কত টুপি আর বাংলার লোককে পরাবেন', মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন শুভেন্দু
আরও পড়ুন|'কয়েক কোটি কর্মসংস্থান তৈরি হবে রাজ্যে', বাজেটে বড় ঘোষণা মমতার