সংক্ষিপ্ত

  • নির্ববাচন যত এগিয়ে আসছে চড়ছে রাজনীতির পারদ
  • একইসঙ্গে জল্পনা বাড়ছিল সৌরভের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে
  • বেশ কয়েক মাস ধরে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা চলছিল সৌরভের
  • এবার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ খুললেন বিসিসিআই সভাপতি
     

শীতের আভাস দিয়ে রাজ্যের তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করলেও, আসন্ন বিধানসভা ভোটকে কেন্দ্র করে বাংলার রাজনীতির পারদ কিন্তু তরতরিয়ে বাড়ছে। এই প্রথমার বাংলার বিধানভা ভোটের ইতিহাসে শাসক দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী যে বিজেপি হতে চলেছে তা  নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই আট থেকে আশির। চাল-পাল্টা চাল, আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ, রাজনীতির জল মাপামাপি ভোট যত এগোচ্ছে ততই সুর চড়াচ্ছে শাসক বিরোধী সব শিবির। তবে এই সবকিছুর মাঝে সকলের মনেই একটা প্রশ্ন দীর্ঘ দিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে যে বাংলায় বিজেপির মুখ কে হতে চলেছে। কখনও শোনা গিয়েছে দিলীপ ঘোষের নাম, কখনও তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় শোনা গিয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর নাম। কিন্তু এই দুটি নাম নিয়ে জল্পনা কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। কিন্তু একটি নাম কিন্তু বাংলার রাজনীতির আকাশে বেশ কয়েক মাস ধরেই ভেসে রয়েছে। তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আর শনিবার এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই জল্পনা আরও বাড়ালেন খোদ বর্তমান বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। 

আরও পড়ুনঃসত্যি হল সৌরভের দাবি, নিজের চোট বিতর্ক ইস্যুতে মুখ খুললেন রোহিত শর্মা

রাজনীতির আঙিনায় 'দাদাগিরি' কি ক্রমশ আসন্ন হচ্ছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ঘিরে একের পর এক ঘটনা উস্কে দিচ্ছে সেই জল্পনাই। ক্রিকেট জীবন হোক বা অবসর জীবন রাজনীতি থেকে দূরে থেকেছেন সৌরভ। সিএবি থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসকের দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে সামলালেও, রাজনীতিতে আসার ভাবনার কথা কোনও দিন প্রকাশ করেননি বাংলার মহারাজ। কিন্তু বিগত কয়েক মাসের ঘটনাবলীতে ক্রমশ দানা বাঁধছে সৌরভের রাজনীতিতে আসার জল্পনা। এবার সেই জল্পনায় প্রকারন্তরে সৌরভ নিজে আরও বাড়িয়ে দিলেন। শনিবার এক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সৌরভকে প্রশ্ন করা হয়। তাতে হেসে ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়ক বলেন, ‘আমি কী করব সেটা পরে দেখা যাবে।' অর্থাৎ ভবিষ্যৎই বলবে আসল কথা। সৌরভের এই উত্তরেই গুঞ্জন আরও বেড়ে গিয়েছে। কারণ সৌরভকে বরাবারই আমরা জানি স্পষ্ট বক্তা হিসেবে। হেঁয়ালী তিনি পছন্দ করেন না।  কিন্তু এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উলটো রাস্তায় হেঁটেছেন তিনি। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে আরও জল্পনা জিইয়ে রাখলেন। রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবাবেই কী নিজের ভবিষ্যৎ বার্তা দিয়ে রাখলেন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। চলতি মাসের শুরুতে বঙ্গ সফরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নাম ধরে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে সৌরভ এবং শুভেন্দু অধিকারী বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চলেছেন কিনা। তাতে হেঁয়ালি করে শাহ জানিয়েছিলেন, সেই তালিকা অনেক লম্বা। অমিত শাহ, জয় শাহ-র সঙ্গে সৌরভের সম্পর্ক ভাল সে কথা সকলেরই জানা। এবার কি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পথে হেঁটে কোনও বড় ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন বাংলার দাদা?

আরও পড়ুনঃঅভিভাবক সৌরভ, পিতৃহারা সিরাজের সাফল্য কামনা করে পাশে দাঁড়ালেন বোর্ড সভাপতি

রাজনীতির ময়দানে সৌরভের অভিষেক নিয়ে জল্পনা দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে। গত ৮ জুলাই সৌরভের জন্মদিনের দিন সেই জল্পনা উস্কে দিয়েছিলেন খোদ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। এক বাংলা দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডোনা বলেছিলেন,'সৌরভ যদি রাজনীতির জগতে পা দেন, তবে সেখানেও শীর্ষে পৌঁছবেন তিনি। সৌরভ এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা নেই। তবে যে পিচেই খেলুক না কেন, ও সেরা হয়। একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করলেও শীর্ষে পৌঁছয় একদিন। যদি রাজনীতিতে যোগ দেয়, তবে আশা করছি সেখানেও শীর্ষে পৌঁছবে।' সেই জল্পনার রেশ মিটতে না মিটতেই নিউ টাউনে রাজ্য সরকার যে জমি দিয়েছিল, তা ফিরিয়ে দেন সৌরভ। কী কারণে জমি ফিরিয়ে দিয়েছেন, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে মুখ খোলা হয়নি। সৌরভও কিছু জানাননি। তবে সৌরভের ঘনিষ্ঠ-মহল সূত্রে খবর মিলেছিল, জমি ঘিরে মামলা হওয়ায় তা ছেড়ে দিয়েছেন সৌরভ। তারপর দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছিলেন ডোনা। তাতে আরও বেড়েছিল জল্পনা।

আরও পড়ুনঃবোনের সঙ্গে বাড়িতেই ১১ বছর ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে এই খেলোয়ার, আগামি বছর বিয়ে

অপরদিকে বিগত কয়েক বছরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গেও সম্পর্ক ভাল হয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। শোনা যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের হস্তক্ষেপেই রাতারাতি বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সংসদীয় রাজনীতিতে সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা অনেক দিন থেকে করে চলেছে বিজেপি। গুঞ্জন শোনা যায়, ২০১৪ সালেই লোকসভা নির্বাচনে সৌরভকে কেন্দ্রয়ী ক্রীড়ামন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল সৌরভকে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি হননি মহারাজ। তবে এবার কি ২০২১ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির তুরুপের তাস হতে চলেছেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। সৌরভকে মুখ খরেই বাংলার মানুষের কাছে ভোট চাইবেন পদ্মশিবিরের নেতারা। আর তা যদি সত্যি হয় তবে তা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ-জেপি নাড্ডাদের মাস্টার স্ট্রোক বলতেই হবে। তাহলে কি বাংলার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এখনো সৌরভ এই বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও, বঙ্গ রাজনীতির অলিতে গলিতে কান পাতলে কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে সেই আভাস। আর বাদবাকিটা ভবিষ্যতের গর্ভে।