Indus Water Treaty Conflict News: সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল হতেই তীব্র জলের তেষ্টায় ভুগছে পাকিস্তান। জলের অভাবে ক্ষতি হচ্ছে চাষের। এই অবস্থায় ভারতের কাছে আবার জলের আবদার ইসলামাবাদের। জানুন বিশদে…

Indus Water Treaty Conflict News: একে তীব্র গরম, তার উপর জলসঙ্কট। পাকিস্তানের যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা অবস্থা। কারণ গত ২২ এপ্রিল জম্মু কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর থেকেই ভারত-পাক কূটনৈতিক টানাপোড়েনের জেরে ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত করেছে। এই পরিস্থিতিতে চরম জলসংকটে থাকা পাকিস্তান একাধিকবার ভারতের কাছে আবেদন জানিয়েছে ওই চুক্তি পুনর্বহালের জন্য। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ আলি মুর্তজা ভারতের উদ্দেশে মোট এখনও পর্যন্ত চারটি চিঠি পাঠিয়েছেন।

প্রথম চিঠিটি মে মাসে, ‘অপারেশন সিঁদুরেরর’ আগে পাঠানো হয়। সেখানে ভারতকে অনুরোধ করা হয়, সিন্ধু জলচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে। এরপর ধাপে ধাপে আরও তিনটি চিঠি পাঠিয়ে ইসলামাবাদ জলচুক্তি চালু রাখার আর্জি জানিয়েছে ভারতের কাছে। জানা গিয়েছে, ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান ছয়টি নদীর জল ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক খুনের পরই ভারত এই চুক্তি স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে। ভারত এটিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ তৈরির অংশ হিসেবেই ব্যাখ্যা করে এসেছে।

অন্যদিকে, ভারত-পাকিস্তান জল চুক্তি নিয়ে উত্তেজনার আবহে নতুন তথ্য সামনে এলো। সূত্রের খবর, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পাঠানো চারটি চিঠি জল শক্তি মন্ত্রক বিদেশ মন্ত্রকে পাঠিয়ে দিয়েছে। এই চিঠিগুলির মাধ্যমে পাকিস্তান চায় যে, ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি আবার কার্যকর করা হোক। সূত্রের খবর, পাকিস্তান চুক্তি মধ্যস্থতাকারী বিশ্বব্যাঙ্কের কাছেও হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে, বিশ্বব্যাঙ্ক এই বিষয়ে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালের চুক্তি অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলের নদীগুলি — শতদ্রু, বিয়াস ও রবি ভারতের অধীনে এবং পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলি — সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব পাকিস্তানের অধীনে ভাগ করা হয়। গত মে মাসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিষয়ে কড়া বার্তা দেন। তিনি স্পষ্ট বলেন, “রক্ত আর জল একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানকে ইঙ্গিত দেন যে, যখন সন্ত্রাসবাদে রক্ত ঝরে, তখন জল চুক্তি চালু রাখা সম্ভব নয়।

সন্ত্রাসবাদের মদত ত্যাগ না করা পর্যন্ত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখবে ভারত, কেন্দ্রের কড়া বার্তা পাকিস্তানকে (Indus Water Treaty Conflict News):-

সীমান্ত পার হওয়া সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগে পাকিস্তানকে ফের কড়া বার্তা ভারতের। কেন্দ্র জানিয়েছে, যতক্ষণ না পাকিস্তান “বিশ্বাসযোগ্য ও অপরিবর্তনীয়ভাবে” সন্ত্রাসে মদত দেওয়া পুরোপুরি ত্যাগ করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতই থাকবে। ভারতের এই অবস্থান পাকিস্তানকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের মতে, সন্ত্রাস এবং শান্তি—এই দুই একসঙ্গে চলতে পারে না। তাই চুক্তি পুনরায় কার্যকর করতে হলে প্রথমে ইসলামাবাদকে সন্ত্রাসের পথ পুরোপুরি ছাড়তে হবে।

সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতের মধ্যেই বিয়াস-গঙ্গা ও সিন্ধু-যমুনা সংযোগ প্রকল্পে উদ্যোগী ভারত, উপকৃত হবে উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্য (Indus Water Treaty Conflict News):-

সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের মাঝেই বড়সড় জল প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত সরকার। সূত্রের খবর, বিয়াস নদীকে গঙ্গা ক্যানেলের সঙ্গে যুক্ত করতে প্রায় ১৩০ কিমি দীর্ঘ একটি ক্যানেল (খাল) নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। পাশাপাশি, সিন্ধু নদীকে যমুনার সঙ্গে সংযোগকারী একটি ক্যানেল বা খাল নির্মাণেরও প্রস্তাব রয়েছে।

২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পের অংশ হিসেবে একটি ১২ কিমি লম্বা টানেল তৈরি করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং দিল্লির মতো রাজ্যগুলি এই প্রকল্পের সরাসরি উপকৃত হবে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে যে, এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে এবং আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে তা সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুরো প্রকল্প নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন (DPR) শিগগিরই প্রস্তুত করা হবে। 

সূত্রের মতে, সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত থাকার ফলে পাকিস্তানে রবি ফসল মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারে, যদিও খরিফ ফসলের ওপর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম হবে। ইতিমধ্যেই চুক্তি স্থগিত থাকায় পাকিস্তানে জলের সংকট প্রকট আকার নিয়েছে। কার্যত তীব্র জলসঙ্কটে ভুগছে পাকিস্তান (Pakistan)। 

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।