সংক্ষিপ্ত

  • এখন বিরোধিতা করছেন, আগে এনআরসি চেয়েছেন
  • সেবার স্পিকারের মুখে কাগজ ছুড়েছিলেন মমতা
  • ১৪ বছরের আগের ঘটনা এখনও ভোলেনি সংসদ
  • তখন এনডিএ-র শরিক ছিল তৃণমূল কংগ্রেস 

জাতীয় নাগরিকপঞ্জীকে এখন বিভ্রাট, বিপর্যয় আখ্য়া দিচ্ছেন। ১৪ বছর আগে এই এনআরসি নিয়ে সংসদে স্পিকারের মুখে কাগজ ছুড়ে মেরেছিলেন মমতা। 

এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হতেই নাম না করে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। টুইটারে মমতা বলেছেন,'এনআরসি থেকে যারা রাজনৈতিক লাভ তোলার চেষ্টা করছিল তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে এনআরসি বিপর্যয়। এদের দেশের কাছে অনেক কিছুর জবাব দিতে হবে। এই ঘটনা তখনই ঘটে, যখন কেউ খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এই ধরনের কাজ করে। বৃহত্তর সমাজের ভালোর জন্য কেউ এই কাজ করে না। 'এই বলেই অবশ্য থেমে থাকেননি মমতা। অসমে বাঙালিদের উদ্দেশ্য়ে তিনি জানান,'এই ধরনের প্রক্রিয়ার জাঁতাকলে যারা পিষ্ট হচ্ছেন, তাঁদের পাশে রয়েছেন তিনি। বিশেষ করে অসমের বাংলাভাষী ভাইবোনেদের পাশে তাঁর মন পড়ে রয়েছে।'

আরও পড়ুন :এনআরসি বিভ্রাট 'চক্রান্তকারীদের' মুখোশ খুলে দিয়েছে, টুইটে আক্রমণ মমতার

নাম নেই আরও পড়ুন :শুনেই কুয়োয় ঝাঁপ বৃদ্ধার, ভুতুরে এনআরসি তালিকা দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় বাসিন্দারা

অথচ দেশের রাজনৈতিক অতীত বলছে অন্য কথা। ২০০৫ সালের ৪ অগাস্ট এই এনআরাসি ইস্য়ুতেই লোকসভার স্পিকারের মুখে কাগজ ছুড়েছিলেন মমতা। তখন তাঁর বক্তব্য ছিল,পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্য়া পরিবর্তন করে দিচ্ছে অনুপ্রবেশকারীরা। তাই অবিলম্বে এই নিয়ে সংসদে তাঁকে বলতে দেওয়া হোক। যদিও স্পিকার তাঁর কথায় গুরুত্ব না দেওয়ায় ওয়েলে নেমে আসেন তৃণমূল নেত্রী। শেষে তাতেও কাজ না হওয়ায় স্পিকারের মুখে কাগজ ছুড়ে আসেন তিনি। পরে আসনে ফিরে কাঁদতে শুরু করেন মমতা। সেই সময় দেশে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের শাসন ছিল। অন্যদিকে এনডিএ-র শরিক ছিল তৃণমূল। 

কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, রাজ্যে শাসকের আসনে বসে 'পুরোনো সেই দিনের কথা' ভুলে গিয়েছেন মমতা। অসমের পর পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি লাগু করার কথা বলেছে বিজেপি। যা নিয়ে বিজেপির প্রবল বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল নেত্রী। আগে এনআরসি থেকে ৪০ লক্ষের নাম বাদ পড়ায় অসমে গৃহয়ুদ্ধের আশঙ্কা করেছিলেন মমতা। এমনকী এনআরাসির ফলে রক্তগঙ্গা বইতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন,এর ফলে অসমে মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়বে। 
প্রশ্ন জাগে,বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সরব হয়েও কেন এখন এনআরসি নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করছেন মমতা? রাজ্য রাজনৈতিক মহল বলছে, রাজ্যের জনসংখ্য়ার পরিসংখ্য়ানই এর মূল কারণ। দেখা গেছে, অসমের পর পশ্চিমবঙ্গেও লাফিয়ে বেড়েছে মুসলিমদের সংখ্যা। অতীতেও এই মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে ৩৪ বছর গদি ধরে রেখেছিল  সিপিএম। এখন গদিতে বসে সেই মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক হাতছাড়া করতে চাইছেন না মমতা। কারণ তিনিও জানেন, এনআরসি রাজ্যে লাগু হলে সবার আগে এই মুসলিমরাই কাঠগড়ায় উঠবে। প্রথম থেকেই তাই গড় ধরে রাখতে মুসলিম তোষণেই ভর করেছেন মমতা।

আরও পড়ুন :এনআরসি নিয়ে এখনই হতাশ বিজেপি, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবার অন্য পথ, ইঙ্গিত দিলেন মন্ত্রী

আরও পড়ুন ;এনআরসি নিয়েও উস্কানি, নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ফের গুরুতর অভিযোগ ইমরানের

সাম্প্রতিক অতীতে অসমে এনআরসি তালিকা ঘোষণার পর মমতা প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন অসমে বাংলাভাষীদের খোঁজ খবর নিতে। কিন্তু বিমানবন্দর থেকেই তাঁদের বিদায় জানিয়েছে সর্বানন্দ সনোয়ালের বিজেপির সরকার। সব থেকে আবাক করার বিষয়, এনআরসি ইস্য়ুতে অসম কংগ্রেসকে পাশে পাননি তৃণমূল নেত্রী। উল্টে তিন বারের কংগ্রেসের মুখ্য়মন্ত্রী তরুণ গগৈ অসমে এনআরসি চেয়েছেন।