সংক্ষিপ্ত
ব্যবসা করার প্রাথমিক শিক্ষাটা পেয়েছিলেন পিতৃদেবের কাছ থেকে। কারণ দেবজিতের বাবাও ছিলেন একজন ছোটখাটো উদ্যোগপতি। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর সেই ব্যবসা আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যায়। খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলেন দেবজিত। চোখের সামনে দেখেছিলেন নিজেদের বেড়ে চলা ব্যবসার অন্তর্জলি যাত্রা। সে সময় কিছুই করতে পারেননি দেবজিত।
এক কাপ কফি (Coffee)। আর আপনি। সামনে এক আকাশ খোলা কাচের জানলা (Sky open Glass Windows)। আনমনা করা এক চেয়ার টেবিল। যেখান থেকে সামনে রাস্তার পিচ ঢালা কালো রাস্তা উপর দিয়ে সার দিয়ে গাছেদের সারি। সেই সব গাছের আবার এক এক রকম ফের। মাঝ রাস্তা দিয়ে ছুটে যাওয়া গাড়ি। (Rain) বর্ষাস্নাত কোনও দুপুরে বা শীতের (Winter) রোদ মাখা কোনও এক দিনে এমন ঠিকানায় আপনি ভেসে যেতেই পারেন আপন খেয়ালে।
আরও পড়ুন, Durga Puja 2021: বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপুজোর সূত্রপাত স্বামীজীর হাত ধরে
আবার আপনার যদি মনে হয় কয়েক জনে মিলে হবে এক প্রবল আড্ডা। আরাম কেদারায় বসে ভেসে যাবেন বাক-দণ্ডির সীমা উড়িয়ে এত অনন্ত ক্ষণে। সঙ্গে থাকবে ধূমায়িত কফির পেয়ালা। আসলে যারা কফি ভালোবাসেন। সেই সঙ্গে ভালোবাসেন প্রিয়জনদের সঙ্গে কিছু আপন মুহূর্ত, তাঁদের কাছে কিন্তু ক্রমশই আপন হয়ে উঠেছে ক্যালকাটা ৬৪ (Calcutta 64 Cafe)। নামে কাফে কিন্তু রয়েছে অতিথি-কে আপন করে নেওয়ার মতো রসদ।
আরও পড়ুন, Durga Puja 2021: ৩২ কেজি রুপোর গয়নার সঙ্গে গুজরাটি খাগড়ায় সাজছে সপরিবার দুর্গা
কথা হচ্ছিল ক্যালকাটা ৬৪-এর অন্যতম কর্ণধার এবং প্রাণপুরুষ দেবজিত পাল-এর সঙ্গে। স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন দেবজিত (Debjit Pal)। তাই একদিন চাকরি করতে করতেই নেমে পড়েছিলেন ক্যালকাটা ৬৪-কে বাস্তবায়িত করতে। ব্যবসা করার প্রাথমিক শিক্ষাটা পেয়েছিলেন পিতৃদেবের কাছ থেকে। কারণ দেবজিতের বাবাও ছিলেন একজন ছোটখাটো উদ্যোগপতি। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর সেই ব্যবসা আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যায়। খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলেন দেবজিত। চোখের সামনে দেখেছিলেন নিজেদের বেড়ে চলা ব্যবসার অন্তর্জলি যাত্রা। সে সময় কিছুই করতে পারেননি দেবজিত। তাঁর একমাত্র দাদাও সে সময় ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র। ফলে পরিবারের কারও পক্ষে ডুবতে বসা ব্যবসাকে দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। তবে ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে কারখানায় গিয়ে গিয়ে রোজকার কাজে হাত লাগাতে লাগাতে নিজের হাতে ছালা পড়তে দেখেছিলেন দেবজিত।
একজন উদ্যোগপতি হওয়ার মজাটা কোথায় তা ছোটবেলায় পেয়ে যাওয়া দেবজিত তাই বড় হয়েও সেই স্বাদটা ভুলতে পারেননি। তাই একদিন চাকরি করতেই করতেই ক্লাউড কিচেন এবং একটা কাফে তৈরির পরিকল্পনা করেন। সল্টলেকের বিসি ব্লকে নিজেদের বাড়ির নিচেই প্রায় ১৫০০ স্কোয়ারফিটের জমিতেই খুলে ফেলেন কাফে। নাম দেন ক্যালকাটা ৬৪। আজ এই কাফে সল্টলেকের এবং কলকাতার বেশকিছু মানুষের নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর এক আদর্শ স্থান। অতিমারিতে লকডাউনের জেরে ক্ষতি হয়েছে অনেকটা। কিন্তু, ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নিয়েছেন দেবজিত। গত দেড় বছরে দিনভর অসংখ্য ফোনও তিনি পেয়েছেন, যেখানে মানুষ জিজ্ঞেস করেছে ক্যালকাটা ৬৪ কবে খুলছে। লকডাউনের নিয়ম শিথিল হতেই ফের খুলেছে ক্যালকাটা ৬৪। গত দেড় বছরে কোনও কর্মী ক্যালকাটা ৬৪-কে ছেড়ে যায়নি। একজন উদ্যোগপতি হিসাবে কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়াটা বিশাল বলেই মনে করেন দেবজিত। ক্যালকাটা ৬৪-কে নতুন করে দাঁড় করাতে চাকরিও ছেড়েছেন দেবজিত।
আরও পড়ুুন, Durga Puja2021: ছৌ শিল্পের আদলে ৩ সেমি অভিনব দুর্গা বানিয়ে তাক লাগালেন বাঁকুড়ার শিল্পী
উদ্যোগপতি হিসাবে মঞ্চে অবতীর্ণ হওয়ার সময় থেকেই তাঁর পাশে রয়েছেন স্ত্রী স্নেহা। একটা সময়ের বান্ধবীর সঙ্গে এখন সংসার পেতেছেন দেবজিত। সদ্য তাঁদের ঘর আলো করে এসেছে পরিবারের নতুন সদস্য। দেবজিত-এর উদ্যোগপতি হওয়ার পিছনে রয়েছেন তাঁর দাদা বিরোজিত পাল। যিনি আবার ক্যালকাটা ৬৪-এর আরও এক স্তম্ভ। ক্যালকাটা ৬৪ খেলার সময় থেকেই বিরোজিত এবং স্নেহা দাঁড়িয়েছিলেন দেবজিতের পাশে। স্নেহার কথায়- 'কঠোর পরিশ্রমের পর এখন ফল মিলছে। এটা দেখে খুবই আনন্দ হয়। ক্যালকাটা ৬৪-এর সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হল সব বয়সের মানুষের কাছে এর জনপ্রিয়তা। এটা সত্যি খুবই আনন্দের।'
দেবজিত জানিয়েছেন, 'ক্যালকাটা ৬৪আমাদের কাছে একটা আবেগ। আমরা মনে করি যারা রোজ ক্যালকাটা ৬৪-এ আসেন তাঁরা যেন এটাকে তাঁদের সেকেন্ড হোম বলে মনে করতে পারেন এবং এই উদ্দেশে আমরা অনেকটাই সফল। এই বছর আমরা ৬তম বর্ষে পদার্পণ করেছি। এমনকি দক্ষিণ কলকাতাতেও আমরা ক্যালকাটা ৬৪-এর একটা আউট লেট খোলার পরিকল্পনা নিয়েছি।' বরাবরই নিজে কিছু করার একটা তাগিদ ছিল। আর সেখান থেকেই আজ এক উদ্যোগপতি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেবজিত। স্বপ্ন দেখলে তা যে ব্যর্থ হয় তনা তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন।
আরও দেখুন, বিরিয়ানি থেকে তন্দুরি, রইল কলকাতার সেরা খাবারের ঠিকানার হদিশ
আরও দেখুন, কলকাতার কাছেই সেরা ৫ ঘুরতে যাওয়ার জায়গা, থাকল ছবি সহ ঠিকানা
আরও দেখুন, মাছ ধরতে ভালবাসেন, বেরিয়ে পড়ুন কলকাতার কাছেই এই ঠিকানায়
আরও পড়ুন, ভাইরাসের ভয় নেই তেমন এখানে, ঘুরে আসুন ভুটানে