ক্রুসিফেরাস সবজি যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি ইত্যাদি পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও, অতিরিক্ত খেলে গ্যাস, অম্বল, এবং থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে। পরিমিত পরিমাণে খাওয়া এবং রান্না করে খাওয়া উপকারী।

বাঙালির কঁচুবাটা, মুলোর ঘন্ট, মাছের মাথা দিয়ে বাঁধাকপি, সরষে শাকের প্রতি প্রেম চিরকালের। আবার ডায়েট করা বাঙালির স্যালাডে ব্রকলি আর বাঁধাকপিও পাবেন। খুব স্বাস্থ্যকর শাকসবজি ভরা খাদ্যকালিকা মনে হচ্ছে তো? তবে গ্যাস-অম্বল চুয়া ঢেকুর কেন দিন দিন বেড়ে চলেছে? ভেবে দেখেছেন কি কখনও?

উপরে উল্লেখিত সবকটা সবজিই আসলে ক্রুসিফেরাস পরিবারের সবজির অন্তর্গত। এই পরিবারের সবজিগুলিকে একসঙ্গে Brassica vegetables বা Brassicaceae নামেও ডাকা হয়। যথেষ্ট পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ এই সবজি। তবে সম্ভাব্য কিছু অপকারিতাও রয়েছে এগুলির। পাচণতন্ত্রের ক্ষেত্রে খুব একটা আরামদায়ক নয় এরা। বিশেষ করে স্যালাডে কাঁচা খেলে গ্যাস অম্বলের মত পেটের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। হ্যাঁ এই সমস্ত সবজিতে থাকা ফাইভার শরীরের জন্য উপকারী হলেও, যাদের বদহজমের সমস্যা আগে থেকেই রয়েছে বা ইরিটেবল বাওল সিনড্রোম (IBS)-এ যারা ভোগেন, তাদের জন্য ক্রুসিফেরাস সব্জি মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।

ক্রুসিফেরাস পরিবারের সবজি সমূহ :

* বাঁধাকপি ও লাল বাঁধাকপি * ফুলকপি * ব্রকলি * শালগম * মুলো * ব্রাসেলস স্প্রাউট * সর্ষে শাক * জলের মূল জাতীয় সবজি

সম্ভাব্য অপকারিতা:

১. আয়োডিন শোষণে বাধা

ক্রুসিফেরাস সবজিতে গয়ট্রোজেন (Goitrogens) নামক যৌগ থাকে, যা আয়োডিন শোষণে বাধা দিতে পারে। এতে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে, বিশেষ করে যারা হাইপোথাইরয়েডিজমে ভোগেন।

২. গ্যাস ও ফাঁপা ভাব

এই ধরণের সবজিতে উচ্চমাত্রার ফাইবার ও সালফারযুক্ত যৌগ থাকায় অতিরিক্ত খেলে গ্যাস ও পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩. রক্ত পাতলাতে সহায়ক উপাদান

ভিটামিন K এর মাত্রা বেশি হওয়ায় যারা ব্লাড থিনার (যেমন ওয়ারফারিন) গ্রহণ করেন, তাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কী করণীয়?

* সিদ্ধ বা রান্না করে খেলে গয়ট্রোজেন যৌগের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়, ফলে আয়োডিন শোষণে বাধা কম হয়।

* অতিরিক্ত নয়, বরং পরিমিত পরিমাণে খেলে এর উপকারিতা পাওয়া যায়, অপকারিতা এড়িয়ে চলা যায়।

* থাইরয়েড সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই সবজি খাওয়া উচিত। প্রয়োজনে আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবারের সাথে মিলিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

* একই ধরনের সবজি প্রতিদিন না খেয়ে সপ্তাহে কয়েকবার ভিন্ন ভিন্ন ক্রুসিফেরাস সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কপিজাতীয় সব্জির বদলে শসা, লাউ, লেটুস, টম্যাটো, কুমড়ো, চালকুমড়ো, ঝিঙে ইত্যাদি খেতে হবে।

* বিশেষত যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে তাদের রাতে এধরবের সবজি না খাওয়াই ভালো। কারণ রাতে হজম ধীর হয়, তখন সালফার ও ফাইবারজাত সবজি খেলে সমস্যা হতে পারে।