এই নিবন্ধে ৭টি প্রাথমিক উপসর্গ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যা ক্যান্সারের ইঙ্গিত দিতে পারে, যেমন ব্যাখ্যাহীন ওজন হ্রাস, অবসাদ, অন্ত্রের ক্রিয়ার পরিবর্তন, ক্ষত ঠিক না হওয়া, গিলতে অসুবিধা, স্তনে পরিবর্তন এবং শরীরের কোনও স্থান শক্ত হয়ে যাওয়া।
ক্যানসারের নাম শুনলেই সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং এর সবচেয়ে বড় কারণ এই সম্পর্কে তথ্যের অভাব। আসুন কীভাবে নিজেই প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার চিহ্নিত করবেন জেনে নি।
ভারতে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যুই হয় ক্যান্সারের কারণে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভারতে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১. ৪৬ মিলিয়ন, যা ২০২৫ সালে প্রায় ১.৫৭ মিলিয়নে পৌঁছতে পারে। তবে বর্তমানে এই উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় ক্যান্সার হারিয়ে সুস্থতার হার তিনগুণ বেড়েছে, তার সবথেকে বড়ো কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে ক্যান্সারের উপসর্গগুলিকে চিহ্নিতকরণ। রোগ চিনতে দেরি হলে চিকিৎসায় বিলম্ব, এবং ঝুঁকিও বাড়বে ক্রমশ। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ অমিতাভ সিং মতে, "প্রাথমিক সনাক্তকরণ জীবন বাঁচায়"।
তবে সমস্যা হচ্ছে, অনেক সময় ছোট-খাট উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে সেগুলোকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেন না অনেকেই। এসব উপসর্গই আসলে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১. ব্যাখ্যাহীনভাবে ওজন হ্রাস : কোন কারণ ছাড়াই পাঁচ কেজি বা তার বেশি ওজন কমলে সেটি ক্যান্সারের প্রথম লক্ষণ হতে পারে। অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, খাদ্যনালী বা ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়ার এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
২. ক্লান্তি : কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার বাড়ার সাথে সাথে চরম ক্লান্তিভাব যা বিশ্রাম নেয়ার পরও দূর হয় না। যেমন লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে শুরুর দিকেই ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
৩. অন্ত্রের ক্রিয়া বা মূত্রাশয়ের কার্যক্রমে পরিবর্তন : দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া মলাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। আবার অন্যদিকে প্রস্রাব করার সময় ব্যথা, প্রস্রাবে রক্তপাত, বা মূত্রাশয়ের কার্যক্রমে পরিবর্তন মূত্রাশয় বা প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
৪. ক্ষত ঠিক না হওয়া : শরীরে যদি কোন ক্ষত থাকে যেটি চার সপ্তাহের পরও ভাল না হয় বা না সাড়ে, এমন ক্ষতের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
৫. গিলতে অসুবিধা : ক্রমাগত বদহজম বা কোন কিছু গিলতে গেলে সমস্যা হলে সেটা ইসোফ্যাগাস, পাকস্থলী বা গলার ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
৬. স্তনে পরিবর্তন : পুরুষদের তুলনায় নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। স্তন ক্যানসারের বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি সনাক্ত করার জন্য মহিলাদের সময়ে সময়ে তাদের স্তন স্ব-পরীক্ষা করা উচিত। স্তনবৃন্তের আকৃতি বা রং পরিবর্তন, স্তনে বা বগলের কাছে ফুসকুড়ি, মাংস শক্ত হয়ে যাওয়া, ভিতরের দিকে বা পাশের দিকে বাঁক নেওয়া স্তন ক্যান্সারের কয়েকটি লক্ষণ।
৭. শরীরের যে কোন স্থান শক্ত হয়ে যাওয়া বা লিম্ফ নোড : সাধারণত স্তন, অণ্ডকোষ, গ্রন্থি এবং শরীরের নরম টিস্যুতে অনেকসময় ছোটো শক্ত টিউমারের মতো দেখা হয়ে থাকে। দেহেও মাংস জমে শক্ত হয়ে থাকে। এটা ক্যান্সারের প্রাথমিক বা বিলম্বিত উপসর্গ হতে পারে।
উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলি অনুভব করেন তবে দেরি না করে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নিন, ক্যান্সার পরীক্ষা করান। এ ছাড়া তামাক ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, সব সময় ফলমূল ও শাকসবজির মতো স্বাস্থ্যকর খাবার খান, ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন, এমনকি সরাসরি সূর্য রশ্মি এড়াতে চেষ্টা করুন।


