অতিরিক্ত চিনি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে পরিপাকতন্ত্রের জন্য। এটি গাট ডিসবায়োসিসের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা আরও বাড়িয়ে তোলে।
‘ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজ়েশন’ বা WHO-এর মতে, এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ডায়েটে দৈনিক চিনির পরিমাণ ২৫ গ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু ২০২২ সালে ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এর একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয়েরা দিনে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম চিনি খেয়ে থাকেন। মাত্র এই ৫ গ্রাম এই বাড়তি চিনি ধীরে ধীরে নানা জটিল শারীরিক সমস্যার জন্ম দেয়।
আমাদের পরিপাকতন্ত্রে ( digestive system) রয়েছে লক্ষ লক্ষ উপকারী ও অপকারী ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়ারা হজম প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে যারা শর্করা খেয়ে বেঁচে থাকে। বলে দেহের শর্করা কম বা বেশি হলে যখন এই ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখনই দেখা দেয় গাট ডিসবায়োসিস। গবেষণা বলছে, কিছু ব্যাকটেরিয়া চিনিকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে এবং এদের আধিক্য হলে আমাদের মস্তিষ্কে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা আরও বেড়ে যায়।
এভাবে আমাদের অজান্তেই আমরা অতিরিক্ত চিনি খেতে থাকি, এবং এতে পেটের স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়। তাই দেহে শর্করা বেশি হলে যে লক্ষণগুলি খেয়াল করতে হবে-
১) লাগাতার যদি কারও গ্যাসের সমস্যা হতে শুরু করে, তা হলে বুঝতে হবে পেটের মধ্যে থাকা জীবাণুদের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।
২) দেহে বার বার ক্লান্তি ভাব দেখা দিলে বা রাতে অনিদ্রা হলে সাবধান হওয়া উচিত।
৩) ঘন ঘন মুড সুইং বা খিটখিটে স্বভাবের বহিঃপ্রকাশ দেকা দিলেও বুঝতে হবে পেটের সমস্যা হয়েছে। কারণ পেটের সমস্যা মানে সেরোটোনিনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে।
৪) খাবার পরে যদি মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, তা হলে সাবধান হতে হবে। বুঝতে হবে পরিপাকতন্ত্রে শর্করাপ্রিয় জীবাণু সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
৫) ঘন ঘন ডায়েরিয়া, অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলেও বুঝতে হবে পরিপাকতন্ত্র যথাযথ ভাবে কাজ করতে পারছে না।
কী করণীয়?
শর্করা জাতীয় খাবারের ক্রেভিংস সংবরণ করাটা খুব জরুরি। তার জন্য খেয়াল রাখুন পেটের স্বাস্থ্যে। ফলমূল, শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খান। কেক, পেস্ট্রি, বাইরের প্যাকেটজাত খাবারের মতো শর্করা ও ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার বর্জন করুন। শর্করা বা কৃত্রিম শর্করার বদলে মধু, খেজুর, বাদাম খেতে পারেন। তবে প্রাকৃতিক শর্করা বেশি এমন ফল বা খাবার পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো। দই, কেফির বা ফার্মেন্টেড প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার খান যা পেটের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন হজমে সহায়তা পাবেন, পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।


