বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী, একজন মানুষের শরীরে দিনে সর্বোচ্চ ২ গ্রাম সোডিয়ামের প্রয়োজন হয়। এই পরিমাণ সোডিয়াম সাধারণত প্রায় ৫ গ্রাম নুনের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। তাই, সুস্থ থাকতে দৈনিক নুন গ্রহণ ৫ গ্রামের নিচে রাখার পরামর্শ সংস্থার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা World Health Organisation সম্প্রতি সুস্থ জীবনধারায় অতিরিক্ত নুন বা সোডিয়াম গ্রহণের ঝুঁকি নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী বছরে প্রায় ৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে অপুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে, যার মধ্যে অন্তত ২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয় উচ্চ সোডিয়াম গ্রহণের কারণে।

নুন আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এটি শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখে, স্নায়ুতে সংকেত পরিবহন করে এবং পেশীর কার্যকারিতা নিশ্চিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে অতিরিক্ত সোডিয়ামযুক্ত নুন শরীরে প্রবেশ করলে তা বিপজ্জনক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্দেশিকা অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে দিনে সর্বোচ্চ ২ গ্রাম সোডিয়ামের প্রয়োজন হয়। এই পরিমাণ সোডিয়াম সাধারণত প্রায় ৫ গ্রাম সাধারণত নুনের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। তাই, সুস্থ থাকতে হলে দৈনিক নুন গ্রহণ ৫ গ্রামের নিচে সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিচ্ছে সংস্থা।

নির্দেশিকা সম্পর্কযুক্ত আরও তথ্য

WHO তথ্য থেকে আরও জানা যায়, সোডিয়াম যুক্ত নুন খাওয়ার বদলে, পটাশিয়ামযুক্ত নুন খাওয়া তার থেকে ভালো। বিশেষ করে শিশু, মহিলা কিংবা বয়স্ক কোনও ব্যক্তির কিডনির সমস্যা থাকলে সোডিয়াম যুক্ত নুন খাওয়া সত্বর বন্ধ করতে হবে।

WHO-র গবেষকরা সারা পৃথিবীতে নুন খাওয়া নিয়ে ৩৫ হাজার মানুষের ওপর হওয়া ২৬ টি গবেষণা এবং সমীক্ষা খতিয়ে দেখেছেন। ২ মাস থেকে ৫ বছর অবধি এদের শরীরের গতিবিধির উপর নজর রাখা হয়েছিল। ফলস্বরূপ দেখা গেছে, সাধারণ নুন খাওয়ার অভ্যাস কমানোর ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি, রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

তবে আরও একটি বিষয়, শুধু পটাশিয়ামযুক্ত নুন খাবার ফলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে ঠিকই তবে তাতে যে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমবে এমনটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। এমন অনেক গবেষণা আছে যাতে পটাশিয়ামযুক্ত নুন খাবার পরেও শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা কমেনি।

তবে কী করণীয়?

* রান্নায় কম নুন ব্যবহার করা এবং খাবার সময় অতিরিক্ত নুন না খাওয়া। * প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড ও প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলা। * খাবারের প্যাকেটে সোডিয়াম বা নুনের পরিমাণ দেখে তারপর কিনে নেওয়া। * খাবারের অতিরিক্ত নুনের স্বাদের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য স্বাদ বর্ধক মসলা, সস, আচার, চাটনি, স্যুপ-ব্রথ, স্যালাড ইত্যাদি খেতে পারেন।

ভারতীয়দের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই নির্দেশিকা?

নিয়মিত অতিরিক্ত নুন গ্রহণ করলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) দেখা দিতে পারে, যা পরবর্তীতে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, এমনকি হাড় ক্ষয়ের মতো জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সমীক্ষা বলে, ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩৫.৫ শতাংশ হাইপারটেনশনের সমস্যায় ভোগেন। ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে মোট মৃত্যুর ২৮.১ শতাংশ হয় শুধুমাত্র হৃদরোগের কারণে। এছাড়াও বর্তমানে দেশে কম বয়সিদের মধ্যে যে হারে হৃদরোগ, হাইপারটেনশন, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ছে, তাতে শরীর সুস্থ রাখতে নুনের পরিমাণে রাশ টানা অত্যন্ত জরুরী। আজকাল অনেকেই আবার নুনের বিকল্প হিসেবে সৈন্ধব নুন খাচ্ছেন। তবে তাতেও সোডিয়ামের পরিমাণ প্রায় একই। এইজন্য সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে পটাশিয়াম যুক্ত নুন গুরুত্বপূর্ণ।