দাঁতের ব্যথা, মাড়ির সমস্যা কিংবা সংক্রমণের কারণে ফেলে দেওয়া আক্কেল দাঁত, এখন অস্থি থেকে হৃদরোগ সবের চিকিৎসাতেই কার্যকরী প্রমাণিত হচ্ছে। তবে কি আক্কেল দাঁতেই লুকিয়ে দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ের চাবিকাঠি?

আক্কেল দাঁতের যন্ত্রণায় ভোগেন নি, এমন খুব কমই পাবেন। একেই অস্বাভাবিক যন্ত্রণা তায়ে দাঁতের সেট নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি, তাই চিকিৎসকেরাও আক্কেল দাঁত তুলে ফেলার পক্ষেই মত দেন। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসার দৌলতে আজ বিষয়টা উল্টে গেছে। এক গবেষবা বলছে দাঁতের ব্যথা, মাড়ির সমস্যা কিংবা সংক্রমণের কারণ হিসেবে অপ্রয়োজনীয় বলে যে দাঁত ফেলে দেওয়া হতো এতকাল, এখন সেটিই হতে পারে বহু দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার সম্ভাবনাময় উৎস।

কী বলছে গবেষণা?

সম্প্রতি স্পেনের বাস্ক কান্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডঃ গ্যাসকন ইবারেটক্সের নেতৃত্বাধীন এক গবেষণায় আক্কেল দাঁত নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়। ইঁদুরের ওপর এই পরীক্ষা চালানো হয়। দেখা গিয়েছে, পরীক্ষাগারে এই স্টেম সেল পরীক্ষাগাগারে রূপান্তর করলে তা বৈদ্যুতিকভাবে সক্রিয় স্নায়ুকোষের মতো কাজ করে। এই পদ্ধতি মানবদেহে সফল ভাবে প্রয়োগ করা গেলে মস্তিষ্কের সঞ্চালন ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে এবং ক্ষতিকারক প্রোটিন জমা হওয়া রুখতে সাহায্য করবে। পার্কিনসন, আলঝাইমারের মতো স্নায়বিক রোগের চিকিৎসায় যুগান্তকারী বদল আসতে পারে।

আক্কেল দাঁত কীভাবে দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসায় কাজে লাগতে পারে?

গবেষকরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি আক্কেল দাঁতের গভীরে থাকে একটি নরম অংশ—ডেন্টাল পাল্প, যা মেসেনকাইমাল স্টেম সেল-এর ভাণ্ডার। সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে এই কোষগুলি সহজেই স্নায়ুকোষ (নিউরন), অস্থি, তরুণাস্থি, এমনকি হৃৎপিণ্ডের পেশিতে পর্যন্ত রূপান্তরিত হতে পারে।

মানুষের অস্থিমজ্জা বা বোন ম্যারোতেও এই ধরনের ‘মেসেনকাইমাল স্টেম সেল’ পাওয়া যায়, তবে তা সংগ্রহ করা ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল। তুলনামূলকভাবে আক্কেল দাঁত থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করা সহজ, নিরাপদ এবং এতে নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও নেই কিছু।

চিকিৎসায় আক্কেল দাঁত

* স্নায়ুতন্ত্র, হাড় এবং তরুণাস্থি পুনর্গঠনে সাহায্য করবে। 

* মস্তিষ্কের সঞ্চালন ক্ষমতা ফিরিয়ে আনে এবং ক্ষতিকারক প্রোটিন জমা হওয়া রুখতে সাহায্য করে। 

* হার্ট ফেলিওরের ক্ষেত্রে সহায়ক। 

* শিরদাঁড়ার চোট, অস্থির চিকিৎসা ও দাঁত চিকিৎসায় আরও উন্নত সহায়ক হতে পারে।

সুবিধা

* এই পদ্ধতির বড় সুবিধা হল, ব্যক্তির তার নিজের দাঁত থেকেই কোষ সংগ্রহ করে তা শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়, তাই ‘ইমিউন রিজেকশন’ বা দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।

* বোন ম্যারো দাতা খোঁজার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না, এবং জটিলতা মুক্ত পদ্ধতি।

আক্কেল দাঁতের স্টেম সেল আধুনিক চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে ঠিকই, তবে এখনও পর্যন্ত কেবলমাত্র ইঁদুরের উপরেই পরীক্ষা করে দেখেছেন গবেষকরা। মানুষের উপর এর প্রয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা প্রমাণ করার জন্য আরও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন হবে।