সংক্ষিপ্ত
পামেলা মালহোত্রা এবং অনিল মালহোত্রা একটি অনুর্বর জমিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে রূপান্তরিত করেছিলেন। ৩১ বছর আগে এই জমিটি নিয়েছিলেন তাঁরা। এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নাম 'সাই অভয়ারণ্য'। তাঁদের ৩০০ একরের এই অভয়ারণ্যে এশিয়ান হাতি থেকে ভারতীয় কিং কোবরা পর্যন্ত 200 টিরও বেশি বিপন্ন প্রজাতির বসবাস। এবার জেনে নেওয়া যাক 'সাই অভয়ারণ্য'-এর অজানা ইতিহাস।
পামেলা গেলের (Pamela Gale) জন্ম নিউ জার্সিতে হলেও বিয়ে হয় একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁর মালিক অনিল মালহোত্রার (Anil Malhotra) সাথে। হাওয়াইতে তাঁদের হানিমুনে গিয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁরা একটি জমি কিনবেন। এরপর তাঁরা ঠিক করেন যে হাওয়াই ছেড়ে দিয়ে তাঁরা ভারতে তাঁদের জমানো পুঁজি দিয়ে জমি কিনবেন। সেইমত প্রথমে তাঁরা জমি কিনতে হিমালয়ে যান কিন্তু সেখানে তাঁদের কেবলমাত্র ১২ একর জমি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়।তারপরেই তাঁরা দক্ষিণ ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং দক্ষিণ ভারতের কর্নাটকে গড়ে তোলেন ভারতের প্রথম ব্যাক্তিগত অভয়ারণ্য 'সাই' (SAI Save Animals Initiative)।
তারা কর্ণাটকের কোডাগু (Kodagu) জেলার প্রায় ৫৫ একর জমি কিনে নেন। তবে সেখানকার কৃষকদের থেকে তারা আমিন জমি কিনেছিলেন যা অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ব্যবহৃত হয় না। ধীরে ধীরে এই ৫৫ একর বনভূমি বৃহত্তর হয়েছে বর্তমানে ৩০০ একর জমি জুড়ে রয়েছে এই অভয়ারণ্য। জমি কেনার সময় সেখানে প্রচুর দেশীয় গাছ ছিল। পামেলা মালহোত্রা এবং অনিল মালহোত্রা (Pamela Malhotra & Anil Malhotra) সেই গাছগুলি ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং এক্ষেত্রে তাঁরা তিনটি নিয়ম মেনে চলতেন: গাছ কাটবেন না, মানুষের হস্তক্ষেপ করবেন না এবং চোরা শিকারি করবেন না।
আরও পড়ুন- বন্যপ্রাণ রক্ষার্থে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস, জেনে নিন দিনটির গুরুত্ব
আরও পড়ুন- খাদ্যাতালিকায় যোগ করুন এই পাঁচটি খাবার, রইল স্বাস্থ্য ভালো রাখার সহজ উপায়
আরও পড়ুন- 'ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে' ঐতিহ্যবাহী উৎসব দোল পূর্ণিমার দিন-ক্ষণ-তিথি এক নজরে
সাই অভয়ারণ্যটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে। ২৩ বছরের মধ্যে এই ৫৫ একর অনুর্বর জমিটিকে একটি ৩০০ -একর অভয়ারণ্যে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন পামেলা মালহোত্রা এবং অনিল মালহোত্রা (Pamela Malhotra & Anil Malhotra)। বর্তমানে এই অভয়ারণ্যে ৩০০ টিরও বেশি প্রজাতির পাখি রয়েছে। বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে বেঙ্গল টাইগার, এশিয়ান এলিফ্যান্টস, হায়েনা, বন্য শুকর, চিতাবাঘ, সম্ভার এবং দৈত্য মালাবার কাঠবিড়ালি-সহ একাধিক প্রাণী। নতুন প্রাণীদের শনাক্ত করতে এবং চোরা শিকারীদের খোঁজখবর রাখতে অভয়ারণ্য জুড়ে বেশ কয়েকটি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পামেলা মালহোত্রা তাঁর 'ফ্রম দ্য হার্ট অফ নেচার' (From The Heart Of Nature) বইটিতে উল্লেখ করেছেন এই অভয়ারণ্য তৈরীর পিছনে তাঁদের লড়াইয়ের কাহিনী। কীভাবে এই বনের প্রাণী এবং গাছগুলির সঙ্গে তাঁরা মানসিক এবং শারীরিকভাবে যুক্ত ছিলেন সেই কথাও উল্লিখিত হয়েছে এই বইয়ে। এই বইতে তিনি জানান, 'শুরুতে বেহাল রাস্তার কারণে আমাদের বাড়িতে কোনও ধরনের নির্মাণ সামগ্রী আনা প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই, আমার স্বামী এই অপরিণত রাস্তাগুলিতে প্রচুর পাথর এবং অন্যান্য রাস্তার সামগ্রী রেখেছিলেন যাতে আমাদের গাড়ি চালাতে সুবিধা হয় যা স্থানীয় লোকদের জন্যও একটা বিরাট বিষয় ছিল। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জেলায় আইনি গোলকধাঁধার সম্মুখীন হওয়া যেহেতু জমিগুলিকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা ছিল তাই প্রায়শই কেনা এবং মালিকানার ক্ষেত্রে আইনগত সমস্যার সম্মুখীন হতে হত। এছাড়া স্থানীয় জনগণের দ্বারা গ্রহণযোগ্যতাও প্রাথমিকভাবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, যদিও পুরানো প্রজন্ম বন রক্ষণাবেক্ষণ এবং সমস্ত বন্যপ্রাণীকে হত্যা না করার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল।'