গত কয়েক দশকে রাম জন্মভূমি নিয়ে হয়েছে ব্যাপক রাজনীতি
জমি বিতর্কের অবসানেও সমাপ্তি ঘটল না সেই প্রবণতার
উত্তরপ্রদেশে ভোটের দামামা বাজেতেই ফের শ্রীরাম-কে ঘিরে বিতর্ক
শ্রীরামের নামে অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগে বিদ্ধ মন্দির ট্রাস্ট
গত কয়েক দশক ধরে অযোধ্যায় রাম জন্মভূমির জমির দখল নিয়ে বিতর্ক চলেছে। কিন্তু, সেই বিতর্কের অবসানের পরও রাম-রাজনীতির সমাপ্তি ঘটল না। উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের দামাম বেজে উঠতেই ফের শ্রীরাম-কে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হল। রবিবার উত্তরপ্রদেশের দু'দুটি বিরোধী দল রাম মন্দির তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট-এর বিরুদ্ধে একটি জমি বিষয়ক অবৈধ চুক্তি করার অভিযোগ তুলেছে। শ্রীরামের নাম করে জনগণের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে সেই অর্থ নয়ছয় করা হচ্ছে, এমনটাই দাবি তাঁর।
রবিবার সমাজবাদী পার্টির (SP) প্রাক্তন বিধায়ক তথা উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী পবন পান্ডে অভিযোগ করেন, স্থানীয় বিজেপি নেতারা এবং ট্রাস্টের কিছু সদস্য মিলে রামমন্দিরের জমি সংলগ্ন আরেকটি জমির বিষয়ে জালিয়াতিতে যুক্ত। কিছু দলিল দেখিয়ে তিনি দাবি করেছেন, এই চুক্তি হয়েছিল চলতি বছরের মার্চ মাসে। দুজন রিয়েল এস্টেট ডিলার ওই জমিটি এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ কোটি টাকায় কেনেন। এর কয়েক মিনিট পর, ওই একই জমি ট্রাস্ট ওই ডিলারদের কাছ থেকে ১৮.৫ কোটি টাকায় কেনে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। উভয় লেনদেনের ক্ষেত্রেই 'সাক্ষী' ছিলেন অযোধ্যার মেয়র তথা বিজেপি নেতা এবং একজন ট্রাস্টের সদস্য। পবন পান্ডে প্রশ্ন তুলেছেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে ওই জমিতে কোন সোনা ফলেছিল যে, এর দাম ২ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা হয়ে গেল?
তাঁর দাবি এর অর্থ সাড়ে ষোল কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন তিনি। কোটি কোটি মানুষ রাম মন্দির ট্রাস্টকে অনুদান দিয়েছেন। তাদের সেই কষ্টার্জিত অর্থের এই পরিণতি দেশের ১২০ কোটি মানুষের অপমান বলে দাবি পবন পান্ডের। একই অভিযোগ করেছেন আপ নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং। তিনি বলেছেন, 'ভগবান রামের নামে দুর্নীতি হবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। তবে এইসব নথিতে দেখা যাচ্ছে যে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে'। এই ট্রাস্ট গঠন করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। স্বভাবতই ট্রাস্টের দিকে আঙুল ওঠার অর্থ, সরাসরি বিজেপির দিকেই আঙুল ওঠা।
ভিএইচপি নেতা চম্পত রাই
রাম মন্দির ট্রাস্ট স্বাভাবিকভাবেই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। টুইট করে রবিবার গভীর রাতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা তথা রামজন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য চম্পত রাই বলেছেন, এই অভিযোগ 'রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত এবং বিভ্রান্তিকর'। তাঁর দাবি, ওই জমিটি মূল ক্রেতারা বহু বছর আগেই কিনেছিলেন। সেই সময়ের জমিটির বাজার মূল্য ছিল ২ কোটি। মার্চে সেই চুক্তির আনিষ্ঠানিকতা শেষ করে বর্তমান বাজার মূল্যে (সাড়ে আঠারো কোটি টাকা) তারা মন্দির ট্রাস্টকে জমিটি বিক্রি করে।
আরও পড়ুন - আকাশ থেকে হাতে আসবে করোনা ভ্যাকসিন, টিকাকরণের অনন্য কৌশল নিচ্ছে মোদী সরকার
আরও পড়ুন - মুকুল প্রভাব - বিজেপি নেতার 'ফুল' বদল, পঞ্চায়েত দখলের আওয়াজ তুলল তৃণমূল
চম্পত রাই আরও জানিয়েছেন, তীর্থযাত্রীদের যাতে রাম মন্দিরে সহজে প্রবেশ করতে পারেন, তার জন্য়ই মন্দির চত্ত্বরের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে সংলগ্ন কিছু জমি তাঁরা কিনেছেন। উত্তরপ্রদেশ সরকারও উন্নয়ন কাজের জন্য অযোধ্যায় জমি অধিগ্রহণ করছে। সেই কারণেই বর্তমানে অযোধ্যা শহরে জমির দাম অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। আর যে জমিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, সেটি আবার অযোধ্যা রেলওয়ে স্টেশনে খুব কাছে শহরের বিশিষ্ট স্থানে অবস্থিত। তাই তার দামটা ছিল আরও চড়া।
সব মিলিয়ে ফের শ্রীরামকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি। ২০২২ সালের গোড়ার দিকেই এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর রাম-রাজনীতি থামবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু তা এখনও ধিকি ধিকি করে জ্বলে থাকল।