'পার্টিগেট' (Partygate) নিয়ে ঘোর সমস্যায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন (Boris Johnson)। তাঁর উত্তরাধিকারী হিসাবে উঠে আসছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাকের (Rishi Sunak) নাম।
বলা হচ্ছে 'পার্টিগেট' (Partygate), অর্থাৎ পার্টি কেলেঙ্কারি। বর্তমানে এই পার্টি কেলেঙ্কারি নিয়েই ঘোর সমস্যায় পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন (Boris Johnson)। এমনকী, তাঁর নিজের দল, 'কনজারভেটিভ পার্টি'র (Conservative Party) সদস্যরাই তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি করছেন। আর এই অবস্থায়, তাঁর উত্তরাধিকারী হিসাবে উঠে আসছে, এক ভারতীয় বংশোদ্ভূতের নাম। বর্তমানে ব্রিটিশ সরকারের চ্যান্সেলর তথা অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন ঋষি সুনাক (Rishi Sunak)। পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে চলেছেন এই ব্রিটিশ-ভারতীয় ব্যবসায়ী তথা রাজনীতিবিদই।
কে এই ঋষি সুনাক? তাঁর মা ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট। আর বাবা, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (NHS) একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান। বাবা-মা দুজনেই ভারতীয় হলেও, ঋষির জন্ম যুক্তরাজ্যেই (United Kingdom)। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (Stanford University) স্নাতক, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (Oxford University) স্নাতোকোত্তর। মায়ের ছোট্ট কেমিস্টের দোকানে কাজ করা থেকে শুরু করে, ঋষি সুনাক নিজের হাতে একটি ১০০ কোটি পাউন্ড অর্থমূল্যের বৈশ্বিক বিনিয়োগ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর স্ত্রী, 'ইনফোসিস' সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির কন্যা অক্ষতা মূর্তি। কৃষ্ণা এবং অনুষ্কা নামে দুই মেয়ে রয়েছে তাঁদের।
আরও পড়ুন - সরলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাজিদ জাভিদ, ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রীর পদে নারায়ণমূর্তির জামাই
আরও পড়ুন - Yogini Idol Hand Over in London: মকর সংক্রান্তিতে ঘরে ফিরল নিখোঁজ প্রাচীন যোগিনী মূর্তি
ব্যবসায় সফল হওয়ার পর, ২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের (Yorkshire) রিচমন্ডের (Richmond) সংসদ হিসাবে তিনি প্রথম ব্রিটিশ সংসদে প্রবেশ করেছিলেন। আর মাত্র ৬ বছরের মধ্য়েই টোরি পার্টিতে একজন কট্টর ব্রেক্সিট (Brexit) সমর্থক হিসেবে দ্রুত উত্থান ঘটেছে তাঁর। প্রধানমন্ত্রীর পদের পরই ব্রিটিশ কোষাগারের চ্যান্সেলর, যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসাবে এই ঐতিহ্যশালী পদে আসীন হয়ে এমনিতেই তিনি নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন। এবার, ৪১ বছরের এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদে বসে আরও এক নতুন ইতিহাস লিখবেন, এমনটাই বলছে ব্রিটিশ বুকিদের বাজির দর।
একে টোরি পার্টির মধ্যে তীব্র অন্তর্কলহ চলছে। তারমধ্যে, কোভিড-১৯ মহামারির (COVID-19 Pandemic) বিরুদ্ধে সেই দেশের অর্থনৈতিক লড়াইয়ে, ঋষি সুনাকের নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপই ব্রিটিশ জনগণের সমর্থন পেয়েছে। সেই সঙ্গে, ঋষি সুনাক এবং তার স্ত্রী অক্ষতার বিলাস বহুল জীবনযাত্রা নিয়ে সমালোচনা হলেও, একজন আদ্যন্ত পারিবারিক মানুষ হিসেবে ঋষির ভাবমূর্তি ব্রিটিশ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতার আগে, ঋষি তাঁর মেয়েদের তৈরি ব্রেসলেট পরেন। প্রায়শই নিজেকে 'গর্বিত হিন্দু' হিসাবেও জাহির করে থাকেন তিনি। গত নভেম্বর মাসে দীপাবলির দিন মহাত্মা গান্ধীর জীবন স্মরণে একটি নতুন ৫-পাউন্ডের স্মারক মুদ্রা উন্মোচনের সময়ও তাঁকে সেই ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল।
এর আগে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানোর বিষয়ে চরম অনাগ্রহ দেখিয়েছিলেন ঋষি। তবে, ব্রিটিশ রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, বর্তমানে পার্টির মধ্যেই বিদ্রোহের মুখে পড়া ৫৭ বছর বয়সী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সমর্থনে এর আগে যতটা দৃঢ়ভাবে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিতেন ঋষি, বর্তমানে ততটাও দেখা যাচ্ছে না। সমর্থন তিনি করে যাচ্ছেন, তবে, তাতে যেন মন নেই। অনেকেই মনে করছেন, এটা তাঁর নিজের নেতৃত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিস বাড়িটির ঠিকানা ১০ ডাউনিং স্ট্রিট। চ্যান্সেলরের অফিস ঠিক তার পাশের বাড়িটিতেই, ১১ ডাউনিং স্ট্রিট। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমে এখন দারুণ জল্পনা, ঋষি সুনাকের বাড়ি বদলে পাশের বাড়িতে আসাটা, এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। তৈরি হবে নতুন ব্রিটিশ ভারতীয় ইতিহাস।