বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ল স্কুল থেকে স্নাতক ইশা সিং ১৯১ স্থান পেয়েছেন, সেটা যেমন সাফল্যের, তেমনই তাঁর চিন্তাভাবনার ভিন্নতা বেশ নজর কেড়েছে সবার।
তিনি ইশা সিং (Isha Singh)। ইউপিএসসি পরীক্ষার (UPSC Exam) এই কৃতী ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছেন, তাঁর একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (Public Service Commission) বা ইউপিএসসির কড়া গন্ডি টপকে ১৯১ তম (Rank 191) স্থান পেয়েছেন ইশা। ইশার প্রাথমিক শিক্ষা লখনউয়ের মার্টিনিয়ার গার্লস কলেজ এবং মুম্বাইয়ের জেবি পেটিড অ্যান্ড ক্যাথেড্রাল স্কুলে হয়েছিল। বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ল স্কুল থেকে স্নাতক ইশা সিং ১৯১ স্থান পেয়েছেন, সেটা যেমন সাফল্যের, তেমনই তাঁর চিন্তাভাবনার ভিন্নতা বেশ নজর কেড়েছে সবার।
তাঁর সঙ্গে পড়াশোনা করা অন্যান্য বন্ধু বান্ধব যখন বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন মোটা অঙ্কের বেতনের জন্য, তখন তাঁর মন প্রাণ রয়েছে দেশের জন্যই। অবলীলায় ছেড়েছেন ২০ লক্ষ টাকা প্যাকেজের চাকরি। ফিরেও তাকাননি সেদিকে। নাম করা ল ফার্মে চাকরি করার দারুণ অফার ছিল তাঁর কাছে। তবে যাঁর নজর মাতৃভূমির সেবা করা, তাঁকে যে অর্থ টলাতে পারবে না, তা বলাই বাহুল্য।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (ইউপিএসসি) ফলাফলে নজরকাড়া রেজাল্ট করা ইশা ল ফার্মে চাকরির প্রস্তাবও এড়িয়ে দেশসেবার ব্রত নিয়েছেন। অবশ্য এর পিছনে তাঁর পরিবারের ভূমিকাও অস্বীকার করার মতো নয়। পেয়েছিলেন। তাঁর বাবা ওয়াই পি সিং জৌনপুরের রামনগর উন্নয়ন ব্লক এলাকার জওয়ানসিপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মুম্বাইয়ে একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন।
এশা সিং ছোটবেলা থেকেই তার বাবার কাজকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন, কিভাবে তার বাবা জনসাধারণের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে আগ্রহ দেখাতেন। কীভাবে সাধারণ মানুষকে ন্যায়বিচার দিতে কাজ করতেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন তাঁর বাবা। সেখান থেকেই শিখেছিলেন তিনি। ঠিক তখনই তিনি ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার স্বপ্ন এখন সত্যি হয়েছে। আইন পড়ার পর, তিনি তার মায়ের সাথে আইন অনুশীলন শুরু করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বিধবাদের অধিকার আদায়ের লড়াই নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল। সেই লড়াইয়ে প্রথম থেকে ছিলেন তিনি।
ইশা সিং বলেন, পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মুম্বাইয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। তার বিধবারা প্রত্যেকে দশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। এতে, মুম্বাই হাইকোর্ট মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে তথ্য চেয়েছে যে সরকার এখন পর্যন্ত কতজন ম্যানুয়াল স্ক্যাভেনজার চিহ্নিত করেছে। ফৌজদারি বিচার এবং নারীর ক্ষমতায়নে অনেক কাজ করেছে। নীতি পরিবর্তন আনতে আদালতে পিআইএল করা হয়েছে। এমন নয় যে আমি সব কাজ ছেড়ে শুধু ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে পরিশ্রম চালিয়ে গিয়েছি সব কাজ সামলে।
ইশার আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তার মায়ের ভূমিকার কথাও। তাঁর মাকে দেশের অনেকেই এক ডাকে চেনেন। তিনি আভা সিং। কংগ্রেস নেত্রী, আইনজীবী ও প্রাক্তন সিভিল সার্ভেন্ট। তবে পরিচয় এখানেই সেষ নয়। তিনি সমাজসেবী হিসেবে বিখ্যাত। পড়াশোনার সময় ইশার সঙ্গেই থাকতেন তাঁর মা। বাবাও ইউপিএসসি প্রস্তুতির সময় সাহায্য করতেন। ইশা সিং বলেন, এই মানুষগুলো সবসময় আমাকে অনুপ্রাণিত করত। বাবা -মা আমাকে শিখিয়েছেন যে কেউ তোমাকে এগিয়ে দেবে না। মুক্ত চিন্তা মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়।