এটা শিশু-কল্যাণের বিষয়, রাজনীতি করবেন না - রাজ্যকে কড়া ধমক শীর্ষ আদালতের। লকডাউনে কত শিশু অনাথ হয়েছিল বাংলার, কী তথ্য দিল রাজ্য?
লকডাউন চলাকালীন কত শিশু অনাথ হয়েছে বাংলায়? রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতে যে সংখ্যাটা বলেছিল, তা হল মাত্র ২৭ জন। মঙ্গলবার, রাজ্যের দেওয়া এই তথ্য সুপ্রিম কোর্ট বিশ্বাসই করল না। বরং রাজ্যকে 'অগ্রহণযোগ্য তথ্য' সরবরাহ করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে আদালত বলেছে সঠিক সংখ্যা না জানালে আদালতের পক্ষ থেকে তদন্তের আদেশ দেওয়া হতে পারে। এমনকী, বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও-এর নেতৃত্বাধীন দুই বিচারকের বেঞ্চ বাংলার সরকারকে এই কথাও বলেছে, যে এটা শিশু-কল্যাণের বিষয়। এটাকে যেন তারা কেন্দ্রের সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইয়ের বিষয় হিসাবে না দেখে।
কোভিড-১৯ জনিকত কারণে বা লকডাউন-এর সময় যেসব শিশুর বাবা-মা মারা গিয়েছে তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়েই এক মামলার শুনানিতে এদিন শীর্ষ আদালত, রাজ্য সরকারকে রীতিমতো কড়া সুরে কথা শোনালো। রাজ্য জানিয়েছিল, লকডাউনের সময় বাবা-মা দুজনেই মারা গিয়েছেন এমন শিশুর সংখ্যা মাত্র ২৭। তাতেই বিচারপতি নাগেশ্বর রাও-এর বেঞ্চ জানায় রাজ্য সরকারের আইনজীবীর ওই বিবৃতি নথিবদ্ধ করা হলেও তাঁরা বিশ্বাস করছেন না। মহামারির তীব্রতা এবং বঙ্গের আয়তনের অনুপাতে এই সংখ্যাটি নিতান্তই কম বলে জানিয়েছে আদালত। এর জবাবে বাংলার সরকারের আইনজীবী বলেছিলেন, তথ্য সংগ্রহ একটি 'চলমান' প্রক্রিয়া। কিন্তু, তাঁর এই জবাবকে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য' এবং 'অজুহাত' বলে উড়িয়ে দিয়েছে আদালত।
শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে বাংলার সমস্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের অবিলম্বে অনাথ শিশু সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে জাতীয় শিশু অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বা এনসিপিসিআর-এর পোর্টালে আপলোড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে এই পরিসংখ্যানগুলি আপলোড করার বিষয়য়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেই বিষয়ে একটি হলফনামা দাখিল করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ বিভাগের সচিবকে।
আরও পড়ুন - ত্রিপুরায় গৃহবন্দি 'পিকে'র দল, উদ্ধারে বাংলা থেকে তিন বিশ্বস্ত সৈনিক পাঠালেন মমতা
আরও পড়ুন - দিল্লিতে কি 'ডেলি প্যাসেঞ্জারি' করবেন মমতা, কেন হঠাৎ তাঁকে সংসদীয় দলের নেতা করা হল
আরও পড়ুন - পেগাসাস তদন্ত থেকে করোনা ভ্যাকসিন - কী কথা হল মোদী-মমতার ঐতিহাসিক বৈঠকে
কোভিডে অনাথ হওয়া শিশুদের শিক্ষা ও লালান-পালনের জন্য আদালত স্বত্ঃপ্রণোদিত হয়ে এই মামলা করেছে। প্রথম থেকেই এই মামলাকে ঘিরে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছে। বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ পরস্পর বিরোধী প্রতিবেদন দাখিল করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। সবমিলিয়ে কোভিডে ভারতে ঠিক কতজন শিশু অনাথ হয়েছে তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। গত মে মাসে, কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু কল্যান মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের যে ১ এপ্রিল থেকে ২৫ মের মধ্যে সারাদেশে ৫৭৭ জন শিশু বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে। গত সপ্তাহে সেই তথ্য সংশোধন করে স্মৃতি জানিয়েছেন সংখ্যাটা ৬৪৫। সবচেয়ে বেশি উত্তরপ্রদেশে, ১৫৮ জন, তারপর অন্ধ্রপ্রদেশে, ১১৯ জন।