ওমিক্রনের (Omicron) আতঙ্কের মধ্যে তীব্র বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের (West bengal Police) নাচের ভাইরাল ভিডিও (Viral Video) নিয়ে। রায়গঞ্জের (Raiganj) কসবায় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পর ওই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ।
ভাইরাল ভিডিওয় (Viral Video) দেখা যাচ্ছে, খোলা মাঠে উচ্চগ্রামে বাজছে ডিজের বাজনা - 'তেরি আঁখ কা ও কাজল' থেকে 'পরম সুন্দরী'। আর এক দঙ্গল মহিলা ও পুরুষ তার তালে তালে উদ্দাম নেচে চলেছে। মাস্ক কোথায়? শারীরিক দূরত্ব? কে না জানে, নাচতে গেলে নাক-মুখ ঢাকা মাস্ক বা শারীরিক দূরত্ব টুরত্ব রাখা যায় না। দেখলে মনে হতে পারে এই ভিডিও ফুটেজ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের আগেকার কোনও সময়ের। যখন পৃথিবী ওমিক্রন (Omicron) কেন, নভেল করোনাভাইরাসেরও (Novel Coronavirus) নাম শোনেনি। আর এই নৃত্যরত ব্যক্তিদের সকলেই হলেন আইনরক্ষক বা পুলিশকর্মী এবং তাঁদের পরিবারবর্গ। কোভিড মহামারি চলাকালীন মানুষ মহামারির উপযুক্ত আচরণ করছে কিনা, তা দেখাটা যাঁদের দায়িত্ব-কর্তব্য।
ঘটনাস্থল রায়গঞ্জ (Raiganj) থানা এলাকার কসবা। গত ২১ ও ২২ ডিসেম্বর - দুদিন ধরে কসবার এসএপি ফোর্থ ব্যাটালিয়ানের (SAP 4th Battalion) সংরক্ষিত এলাকায়, পুলিশের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। ৪২তম বার্ষিক এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন উত্তবঙ্গের ডিআইজি। বুধবার প্রতিযোগিতার শেষদিনে পুরস্কার তুলে দিতে আইজি, ডিআইজি, এসপি ব়্যাঙ্কের অফিসাররা। প্রতিযোগিতায় পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের পরিবারবর্গও অংশগ্রহণ করেন। এই অবধি ঠিকই ছিল। কিন্তু, খেলা ও পুরস্কার বিতরনী শেষ হওয়ার পর, রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হতেই অবস্থা হাতের বাইরে চলে যায়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে পুলিশ কর্মীদের কোনওরকম কোভিড বিধি (COVID-19 Restrictions) মানতে দেখা যায়নি। এই নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের (West Bengal Doctor's Forum) পক্ষ থেকে চিকিৎসক জয়ন্ত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, পুলিশকর্মীরা নাচতেই পারেন। তবে, তাঁদের সময়টা বিবেচনা করা উচিত ছিল। ডক্টর্স ফোরামের পক্ষ থেকে বারবার করে মানুষকে শারীরিক দূরত্ব এবং মাস্ক পরার কথা বলা হচ্ছে, বিশেষ কর ওমিক্রন আসার পর। এই অবস্থায় চিকিৎসক বা পুলিশকর্মীদের মতো দায়িত্বশীল নাগরিকদের কোভিজ বিধি লঙ্ঘন করাটা একেবারেই কাম্য নয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, দ্বিতীয় তরঙ্গের সময়ে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) কোভিড মোকাবিলায় সামনে থেকে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পুলিশকর্মীদের এই ধরণের আচরণ তাঁর প্রচেষ্টা সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। চিকিৎসক জয়ন্ত ভট্টাচার্যের মতে মুখ্যমন্ত্রী এই কথা জানতে পারলে, সম্ভবত কড়া ব্যবস্থা নেবেন।
সেই ভাইরাল ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। তবে এর সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
তবে, বিষয়টিকে আদৌ পাত্তা দিচ্ছেন না ফোর্থ ব্যাটেলিয়নের সদর দফতরের এএসআই মজিরুদ্দিন সরকার। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশকর্মীরা লকডাউনে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। দীর্ঘদিন পর একত্রিত হওয়ার খুশিতে রাতে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে স্থানীয় একটি অর্কেষ্ট্রা ব্যান্ড পারফর্ম করে। তবে তাঁরা বাইরে কোনও জনসাধারণের এলাকায় যাননি। কোভিড বিধি না মেনে নাচার বিষয়ে তাঁর সাফাই, পুলিশের ফিজিকাল ট্রেনিং যখন হয়, তখনও দূরত্ব মানা সম্ভব হয় না। তাঁর দাবি, কয়েকজন আনন্দ করে ফেলেছে, তবে খুব কাছাকাছি ছিলেন না তাঁরা। পরে অবশ্য স্বীকার করে নেন, পিছনের দিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়নি। প্রশাসন কি এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেবে? দেখা যাক।