'লকডাউন, ভারত শিখুক চিনকে দেখে', করোনা মোকাবিলায় ৩ দফা পদক্ষেপের নিদান ডা. ফাউচির

ভারতে এখনই কয়েক সপ্তাহের লকডাউন জারি করা উচিত

এর মধ্যে নিতে হবে চিনের মতো পদক্ষেপ

ভারতের কোভিড সংকট কাটাতে তিন দফা দপদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করলেন ডাক্তার ফাউচি

আমেরিকার শীর্ষ মহামারী বিশেষজ্ঞই নন, হোয়াইট হাউসের প্রধান চিকিৎসা উপেষ্টাও বটে

 

amartya lahiri | Published : May 1, 2021 9:50 AM IST / Updated: May 01 2021, 03:58 PM IST

তিনি আমেরিকার শীর্ষ মহামারী বিশেষজ্ঞ। মহামারির প্রথম তরঙ্গের ঢেউ বহু দূর থাকতেই তিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মহামারি রোখার বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছিলেন। ট্রাম্প শোনেননি, ফলে পরে কোভিড সামলাতে হাবুডুবু খেয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে হোয়াইট হাউসের প্রধান চিকিত্সা উপদেষ্টা ডাক্তার অ্যান্টনি ফাউচির কথা কিন্তু অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফলও মিলেছে হাতে নাতে। গণ টিকাকরণের পর আমেরিকার অবস্থা এখন অনেক ভালো। বরং এখন তাদের জায়গা নিয়েছে আমাদের ভারত। শুক্রবার, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাত্কারে ডা. ফাউচি ভারতের এখন কী কী করণীয়, সেই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আর সেখানেই চিনকে দেখে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

এই শীর্ষ মার্কিন মহামারি বিশেষজ্ঞের মতে, ভারত সরকার বড় তাড়াহুড়ো করে কোভিডের বিরুদ্দে বিজয় ঘোষণা করে দিয়েছিল। তাতেই ভারত এই গুরুতর কোভিড সঙ্কটের মধ্য়ে পড়েছে। দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত 'কঠিন এবং মরিয়া', এমনটাই বলছেন তিনি। তবে এর থেকেও বেরিয়ে আসার রাস্তা আছে - ভারত সরকারকে নিতে হবে কিছু তাত্ক্ষণিক, মধ্যবর্তী এবং দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ। ভারত সরকার যে টিকাকরণকেই সবথেকে বেশি জোর দিচ্ছে, তাতে আশু সমস্যার সমাধান হবে না বলেই জানিয়েছেন তিনি।

তাহলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ কী? ডাক্তার ফাউচির মতে, বর্তমানে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ'ল অক্সিজেন, ওষুধ, পিপিই-র মতো জিনিসগুলির সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখা। আর ভারত যেটা তাত্ক্ষণিকভাবে করতে পারে, তা হল গোটা দেশে অন্তত কয়েক সপ্তাহের জন্য লকডাউন জারি করা। এই বিষয়ে তিনি গত বছর কোভিড সংক্রমণের বিস্ফোরণের মধ্য়ে চিন সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছেন। সেই সময় গোটা দেশের কর্মকাণ্ড পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল চিন সরকার। ডাক্তার ফাউচির মতে, একমাস মতো লকডাউন থাকলে পরের ছয় মাস আর অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে না। সংক্রমণ চক্রের অবসান ঘটাতে অস্থায়ীভাবে লকডাউন জারি করাটা অত্যন্ত দরকারি। এতে সংক্রমণের প্রসার সঙ্গে সঙ্গে কম হয়। সেইসঙ্গে এখনই অক্সিজেন, অন্যান্য ওষুধ - কীভাবে পাওয়া যাবে, সেই বিষয়ে পরিকল্পনা করার জন্য একটি কমিশন, বা গোষ্ঠী তৈরি করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র সাহায্য নিতে পারে তারা। অতীতে সংকটের সময়, বিশ্ব ভারতের উদারতা দেখেছে। এখন সেই ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে এই কমিশন বা গোষ্ঠীকে অন্যান্য দেশের সহায়তা নিয়ে ভারতের তাত্ক্ষণিক সমস্যাগুলি দূর করতে হবে।

মধ্যবর্তী পদক্ষেপ, অর্থাৎ আশু সমস্যাগুলি সমাধানের মধ্যে ভারত যে পদদক্ষেপ নিতে পারে তা হল যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর আয়তন বৃদ্ধি। এই ক্ষেত্রেও ভারতকে, চিনেরই উদাহরণ অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন শীর্ষ মার্কিন মহামারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফাউচি। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত বছর কোভিড সঙ্কট যখন চিনে চরম আকার ধারণ করেছিল, সেই সময় মাত্র কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করেফেলেছিল তারা। সেখানেই অতিরিক্ত রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হয়েছিল। চিনের এই কাজ গোচা বিশ্বে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। ভারতে বর্তমানে মানুষ যেভাবে শয্যার জন্য মরিয়া হয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছে, যে ভারতকেও তেমনটা করে দেখাতে হবে, বলে মনে করছেন হোয়াইট হাউসের প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা। ভারত সরকার এই ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতে পারে। যুদ্ধের সময় তারা অল্প সময়ে ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করে। এই পরিস্থিতিটাও যুদ্ধের মতোই, শত্রু একটি ভাইরাস। এই যুদ্ধের সময়েও সেনারাই পারবে, এই ধরণের হাসপাতাল তৈরি করে মানুষকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দিতে।

আর দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপ অবশ্যই হল ভারতের সকলকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার পরও, দেহে অনাক্রম্যতা তৈরি হতে অনেকটা সময় লাগে। তাই টিকা দিয়ে বর্তমান সংকট মিটবে না। কিন্তু, দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে ভারতে টিকাদানই কোভিড সংকটের বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিষেধক হতে পারে বলে মনে করেন ডাক্তার ফাউচি। ভারতে তৈরি কোভ্যাক্সিন করোনার ৬১৭টি রূপভেগের বিরুদ্ধে কার্যকর। তবে, ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশে মাত্র দুই শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনেরর দুটি ডোজই পেয়েছেন, আর ১১ শতাংশ পেয়েছেন একটি ডোজ। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর, বলে মনে করছেন শীর্ষ মার্কিন মহামারি রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি জানিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব, আরও বেশি লোককে টিকা দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সরকম ব্যবস্থা নিতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে। জনস্বার্থে বিশ্বের বিভিন্ন করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে টিকা সংগ্রহের জন্য চুক্তি করতে হবে। যতগুলি সংস্থার থেকে সম্ভব ভ্যাকসিন নিতে হবে। সেইসঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উত্পাদনকারী দেশ হিসাবে নিজস্ব ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষমতাও বাড়াতে ভারতকে।

আরও পড়ুন -- 'আকাশ ভেঙে পড়বে না'- ২ মে নয়, সুপ্রিম নির্দেশে পিছিয়ে যেতে পারে নির্বাচনের ফল প্রকাশ

আরও পড়ুন - মস্কো থেকে আজই আসছে দেড় কোটি ডোজ স্পুটনিক ভি, করোনা-যুদ্ধে ভারতের তৃতীয় অস্ত্র

আরও পড়ুন - কোভিড-১৯ - মাত্র ৬টি রাজ্যে আজ থেকেই ১৮ ঊর্ধ্বদের টিকাদান, বাংলায় কবে শুরু

এই তিন ধাপের পদক্ষেপের পাশাপাশি ভারতীয় করোনা ভেরিয়েন্টগুলির জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা নিতে হবে ভারতকে। ভ্যাকসিনগুলি ভারতীয় ভেরিয়েন্টগুলির বিরুদ্ধে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে, সুরক্ষা দিতে পারছে কি না, তা নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করা দরকার। ভারত থেকে দুই রকমের  ঘোষণা এসেছে। তাই ডাক্তার ফাউচির মতে ভারতের উচিত খুব তাড়াতাড়ি আমেরিকার সিডিসি, বা যুক্তরাজ্যের এনআইএইচ-এর মতো কোনও সংস্থায় নমুনাগুলি পাঠানো। তাতে জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর কাজ এবং সেই সংক্রান্ত গবেষণার কাজ সহজ হবে।

Share this article
click me!