করোনাভাইরাস মহামারিতে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
তারমধ্যে রাত আটটা বাজলেই হঠাৎ দেশজুড়ে সবাই ঘেউ ঘেউ করছেন
লকডাউনের নিস্তব্ধতা ভেঙে খান-খান হয়ে যাচ্ছে
ব্যাপারটা ঠিক কী, কেন চিৎকার করছেন মার্কিনিরা
করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে মৃত্যুপুরী প্রায় গোটা আমেরিকা। তারমধ্যেই রোজ রাত আটটা বাজলেই ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কলোরাডো, জর্জিয়া থেকে নিউইয়র্ক - প্রায় পুরো আমেরিকা জুড়েই মার্কিনি নাগরিকরা গলার শিড়া ফুলিয়ে ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করে উঠছেন। বাচ্চা থেকে বুড়ো, কেউ বাদ নেই। এমনকী তাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে চিৎকার করে উঠছে বাড়ির পোষ্যরাও। লকডাউনের জেরে রাস্তাঘাটে গাড়ি-ঘোড়া নেই। আকাশে বিমানের চলাচল নেই। থেমে আছে কলকারখানা। প্রায় পরিপূর্ণ স্তব্ধতা ফেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে রোজ রাত আটটা বাজলেই। আবার কিছুক্ষণ পর ঘেউ ঘেউ বন্ধ। ব্যাপারটা কী?
এই চিৎকার চেচামেচি শুরুটা হয়েছিল হাতে গোনা কয়েকজনকে দিয়ে। তাঁরা কলোরাডোর কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী। সারাদিনের কাজের পর নিজেরাই নিজেদের চাঙ্গা করতে, আর মনের উপর ক্রমশ চেপে বসা কোভিড-১৯'এর তীব্র চাপ কিছুটা হালকা করতে রোজ রাত আটটার সময় খোলা আকাশের নিচে এসে ঘেউ ঘেউ করে চেচাতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। তারপর তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের প্রতিবেশীরা। তারাও রাত আটটার সময় বাড়ির বারান্দায় এসে চিৎকার করতে শুরু করেন। সেখান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই গোটা আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়েছে বিষয়টি। কেউ কেউ এককদম এগিয়ে আতশবাজি পোড়াচ্ছেন, কেউ কেউ ভেঁপু বাজাচ্ছেন কেউ বা গাড়ির হর্ন বাজাচ্চেন রাত আটটার সময়। তোলে যে গোধূলিটি বিদ্ধ করে অন্য দিনের একঘেয়েমি জোর বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটাতে।
বেশিরভাগ মার্কিনিই জানিয়েছেন, তাঁরা রাত আটটায় ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করছেন, দেশের সব স্বাস্থ্যকর্মী যাঁরা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে একেবারে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়ছেন, তাঁদের সেই নিঃস্বার্থ ত্যাগকে সম্মান জানাতে এবং তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে। অনেকটা ইতালি বা স্পেনে যেমন বারান্দায় এসে করতালি দেওয়া হয়েছে বা গান গাওয়া হয়েছে. কিংবা ভারতে থালা বাজানো হয়েছে সেইরকমই। অনেকে ঘেউ ঘেউ করছেন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে মনের ক্লান্তি ও হতাশা কমাতে। কেউ কেউ চিৎকার করছেন গৃহহীনদের প্রতি সমর্থন জানাতে। আর বাচ্চারা বলছে, যখন বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ নেই, বাইরে খেলতে যাওয়ার উপায় নেই, তখন, এভাবে চিৎকার করে তারা দারুণ মজা পাচ্ছে।
মার্কিন মনোবিদরা ববলছেন, যারা যে কারণেই এইভাবে কুকুর বা নেকড়ের মতো চিৎকার করুন না কেন, এর মধ্য দিয়ে প্রতি রাতে আমেরিকায় এখটা আশার আলো তৈরি হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে বাধ্য হয়ে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থেকেও প্রতি সন্ধ্যায় এই সম্মিলিত চিৎকার যেন ফের চেনা পৃথিবীতে ফেরার অঙ্গীকারের ঘোষণা। করোনাভাইরাস মহামারির হাত থেকে ফের সমাজের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়ার একটা ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। বাড়িতে বন্দি থাকতে থাকতে মনের ভিতর যে ক্ষত তৈরি হচ্ছে, তার উপর কিছুটা হলেও এতে করে প্রলেপ পড়ছে। আর বাচ্চাদের জন্যও অত্যন্ত উপভোগের।
মৃত্যু মিছিলে হিমশিম নিউইয়র্ক, বিশ্বের অন্যতম আধুনিক শহরে এবার খোড়া হচ্ছে গণকবর
নিউ ইয়র্কে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য চিন দায়ি নয়, ইঙ্গিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমীক্ষায়
প্রাণীসম্পদ থেকে পোষ্য হল কুকুর, করোনাভাইরাস-এর জেরে চিনে বড়-সড় রদবদল
কিন্তু গেউ ঘেউ কেন?কলোরাডোর যে স্বাস্থ্যকর্মীদের থেকে দেশে এই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে, তাঁরা জানিয়েছেন, এই ঘেউ ঘেউ করাটা তাঁরা শিখেছেন ব্রাজিলিয়দের থেকে। কাজের সূত্রে, লাতিন আমেরিকার সেই দেশে গিয়ে তাঁরা দেখেছিলেন, দিনের শেষে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় সেখানকার মানুষদের এভাবে চিৎকার করে উপবোগ করতে। রাত আটটায় আমেরিকায় সন্ধে নামে। তাই তাঁরা সেই সময় এভাবে চিৎকার শুরু করেছিলেন। যা এখন গোটা দেশে সরলেই অনুকরণ করতে শুরু করেছেন।