গত দুই-তিন বছর ধরে একেবারে তেল দেওয়া যন্ত্রের মতো চললেও বিশ্বকাপের আগেই হঠাত ব্য়াটিং বোলিং - সব বিভাগ নিয়েই চিন্তুা বাড়ছে ভারতের। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ হারের পর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের প্রথম গা গা ঘামানো ম্যাচেও ৬ উইকেটে হারতে হল। শুধু পরাজিত হওয়াই নয়, ভারতের প্রথম ওয়ার্ম-আপ ম্য়াচ দেখিয়ে দিয়েছে ভারতের ষে সম্যাগুলি গত কয়েক মাসে চোখে পড়ছিল, তা এখনও রয়েই গিয়েছে। আর সেটাই ভাবাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
বল নড়াচড়া করলে যে ভারতীয় বাঘা বাঘা ব্যাটাররা সমস্যায় পড়েন, এটা এখন ওপেন সিক্রেট। শনিবারের ম্য়াচেও সেটাই দেখা গিয়েছে। কিউই সফরেও বোল্ট মেঘলা আবহাওয়ায় শুইয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় ব্যাটিংকে, শনিবার তারই পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা যায়। রোহিত শর্মা (২), শিখর ধাওয়ান (২), চার নম্বরে নামা কেএল রাহুল (৬) - ভারতের টপ অর্ডারের কেউই মেঘলা আবহাওয়ায় সুইং-এর মোকাবিলা করতে পারলেন না। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডে পাটা পিচই থাকবে, কিন্তু দু-এক জায়গায় কেনিংটন ওভালের পিচের মতো ঘাসের আস্তরণও থাকতে পারে। তার সঙ্গে মাঘলা আবহাওয়া জুড়লে ভারতীয়দের কপালে দুঃখ আছে।
সুইং বোলিং-এর সামনে একমাত্র ইতিবাচক ছিলেন বিরাট কোহলি (১৮)। বোল্টের বলেও স্বচ্ছন্দেই ব্যাট করছিলেন ভারত অধিনায়ক। কিন্তু গ্র্যান্ডহোমের অফ স্টাম্পের বাইরে দেওয়া একটি অফ কাটার বলকে ড্রাইভ করতে গিয়ে উকেটে টেনে আনেন। এটাও কিন্তু তাঁর পুরনো রোগ।
আইপিএল-এ এইবছর ধারাবাহিক ভাবে অনেক রান করেছেন ধোনি। কিন্তু আইপিএল-এও তাঁর বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ খেলার অভিযোগ উঠেছে। আইপিএল-এ ধরে ধরে খেলে শেষের দিকে মেরে ম্য়াচ বের করতে সক্ষম হয়েছেন ধোনি। শনিবারও সেই চেষ্টাই করছিলেন সম্ভবত। তাতে কিছুক্ষণের জন্য ভারতের নিয়মিত উইকেট পতনে ব্রেক লাগলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। ৪২ বলে ১৭ করার পথে কোনও সময়েই স্বচ্ছন্দে ছিলেন না তিনি। কার্তিকের (৪) ব্য়াটিং দেখে বোঝা গিয়েছে আইপিএল-এর খারাপ ফর্মই অব্যাহত রয়েছে। কাজেই টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে ভারতের ব্যাটিং-এ ধস নামার যে পুরনো রোগ ছিল, তা রয়েই গিয়েছে।
বোলিং বিভাগেও গত দুই বছরে -চা জুটিকে যতটা ধারাবাহিক ছিল চলতি বছরে কিন্তু তাঁদের ততটা ভয়ঙ্কর দেখায়নি। শনিবারের ম্যাচেও কিউই ব্য়াটিং-এ দাঁত ফোটাতে ব্যর্থ ভারতের রিস্ট স্পিনার জুটি। কুলদীপ ৮.১ ওভারে উইকেটে দিয়েছেন ৪৪ রান, আর চাহাল ৬ ওভারে ৩৭ দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট।
শনিবারের পিচ ও পরিস্থিতি কিন্তু দুই দিকে বল সুইং করাতে পারা ভুবনেশ্বর কুমারের জন্য আদর্শ ছিল। কিন্তু আইপিএল থেকে তাঁরও দক্ষতায় মরচে লেগেছে।
ভারতের পক্ষে ইতিবাচক দিক বলতে শুদুমাত্র হার্দিক পাণ্ডিয়া ও জাদেজার ব্যাটিং এবং বুমরা ও শামির বোলিং। উল্টো দিকে ধোনি যখন কোনও রকমে উইকেটে টিকে ছিলেন, তখন অপর প্রান্তে পাণ্ডিয়া কিন্তু নিদের স্বাভাবিক খেলাই খেলেছেন। ধুমধাড়াক্কা চালানোও নয়, দুর্দান্ত সব ক্রিকেটিয় শট মেরেছেন। ৩৭ বলে ৩০ করার পথে তিনি ৬টি চার মারেন।
তবে ভারতের রান ১৫০ পার হত না যদি না জাদেজা ৫০ বলে ৫৪ রানের ইনিংসটি খেলতেন। ২০ তম ওভারে ৮১ রানে ৬ উইকেট পড়ে গিয়েছে এই অবস্থায় ব্যাট করতে নেমে টেল এন্ডারদের সঙ্গে দারুণ পরিণত ব্যাটিং করলেন জাড্ডু।
আর কিউইদের ব্য়াটিং-এর সময়ে এই ১৬৯ রানের সামান্য পুঁজি নিয়েও প্রথম স্পেলেই ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন বুমরা (৪ ওভারে ২ রান দিয়ে ১ উইকেট)। উল্টো দিকে বুবিই চাপ ধরে রাখতে না পারলেও, পরের দিকে বল করতে এসে শামি (৪ ওভারে ১৬ রান) -ও কিন্তু প্রথম দিনই ইংল্যান্ডের মাটিতে সঠিক লেন্থ খুঁজে পেয়েছেন।
কাজেই যতই ভারতকে ট্রফি জেতার অন্যতম দাবিদার ধরা হোক না কেন, বিশ্বকাপের আগে ভারতের এই হঠাত পড়তি ফর্ম কিন্তু বেশ চিন্তার। আর তা আরও বাড়িয়েছেন কেদার যাদব ও বিজয় শঙ্কর। দলের সূত্রে যা খবর, এই দুই চোট পাওয়া ক্রিকেটারকে সম্ভবত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরের গা-ঘামানো ম্যাচেও খেলিয়ে দেখার সুযোগ মিলবে না।