দেবী মা কামাক্ষ‍্যা বারো বছর রান্নাঘরে অবস্থান করেছিলেন, জেনে নিন বোলপুরের গুপ্ত পরিবারের পুজোর অজানা ইতিহাস

রান্না ঘরের জানালার ফাঁক থেকে হঠাতই দীর্ঘ হাত বের করে শিশুটিকে এনে দিলেন তার মায়ের কাছে। একফোঁটা জলেও সে ভিজে যায় নি। শিশুর মা তো দেখে বিহ্বল। উনি নিষেধ করলেন ঘটনাটি যেন প্রচার না পায়

দুর্গাপুজা মানেই যে শুধু থিমের চমক তা নয়। বাংলার আনাচে কানাচে বনেদী বাড়ির পুজোও বর্তমানে সমান জনপ্রিয়। দূরদুরান্ত থেকে যারা কলকাতায় ঠাকুর দেখতে আসেন, এদের মধ্যে অনেকেই বনেদী বাড়ির পুজো দেখতে পছন্দ করেন। কলকাতার যেমন থিমের বিষয় বস্তু জানতে আগ্রহী থাকেন অনেকেই ঠিক তেমন ভাবেই বনেদী বাড়ির দুর্গাপুজোর ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেক অজানা কাহিনি, লোককথা বা সেই দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার পিছনে বিশেষ কিছু কারণ থাকে। আর ঠিক এই গল্প জানতেই অনেকেই পৌঁছে যান প্রাচীণ ২০০-৩০০ বছরের পুরানো বনেদী বাড়িগুলোর দুর্গাপুজো দেখতে।

ঠিক এই রকমই এক বাড়ির পুজোর গল্প জানাবো আপনাদের। এই বাড়ির পুজো প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীণ। এই বাড়ি শান্তিনিকেতন বোলপুরের বাসিন্দা বরদাচরণ গুপ্ত মহাশয়ের পুজো। বাড়ির বর্তমান সদস্য ঋতায়ণ গুপ্ত এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-কে জানিয়েছেন তাঁদের পরিবারের প্রাচীণ এই পুজোর ইতিহাস সম্পর্কে।

Latest Videos


 
ঋতায়ণ গুপ্ত বাবু জানিয়েছেন, -'আমাদের বংশের আদি পুরুষ স্বর্গীয় বরদাচরণ গুপ্ত মহাশয় কৈশোরে কামাক্ষ‍্যা ধামে সাধনা করার জন‍্য গৃহত্যাগ করে চলে যান। দীর্ঘদিনের সাধনা শেষে ভৈরবী বেশে মা৺কামাক্ষ‍্যার দর্শন লাভ করেন। মা নির্দেশ দেন যে তোমার অদর্শনে বাড়ির লোকজন ব‍্যাথিত হয়ে পড়েছেন, দীর্ঘদিন অজ্ঞাত থাকার কারণে তোমার দ্বাদশ বৎসর অদর্শনে তাঁরা তোমার শ্রাদ্ধ তর্পণ ক্রিয়ার আয়োজন করছেন আসন্ন 'অমুক' তিথিতে। তুমি কাল বিলম্ব না করে সত্ত্বর গৃহে ফিরে যাও। "তোমার সাধনায় আমি প্রসন্ন হয়েছি"

বরদাচরণ গুপ্ত মা-কে নিবেদন করলেন যে, মা তোমাকেও আমার সঙ্গে আমাদের বাড়িতে যেতে হবে এবং গৃহের অধিষ্ঠাত্রী রূপে নিত‍্য অর্চিতা হবেন। ওঁনার কাতর ক্রন্দনে মা বলনেন তবে তাই হবে কিন্তু 
১) সামনে থাকা ভাঙ্গা মাটির প্রাচীর টা তে তুমি এবং আমি চেপে লোকচক্ষুর অন্তরালে বায়ু মার্গে পৌঁছাবো তোমার পৈত্রিক বাড়িতে।
২) তোমার পৈত্রিক বাড়িতে আমি থাকবো তবে কারও উচ্ছিষ্ট যেন না খেতে দেওয়া হয় আমাকে। ৩) বাড়ির কেউ যেন আমার পরিচয় জানতে না পারেন। যে মুহুর্তে আমার পরিচয় প্রকাশ পাবে সেদিন আমি ওখানে থেকে স্বনামে ফিরে আসবো। 
৪) গৃহে যেন কোনও দিন গৃহবধূগণ কলহ না করে,আমার অধিষ্ঠান ক্ষেত্রের কাছে অযথা শব্দ উপদ্রব না হয়। অভক্ষ‍্য ভক্ষণ ,অশাস্ত্রীয় বিবাহ না হয়। শ্রীবরদা চরণ গুপ্ত মহাশয় উপায়ান্তর না দেখে তাতেই সম্মত হলেন।
যে মুহুর্তে ওঁনারা দুজন গৃহে প্রবেশ করছেন তখন গৃহের প্রাঙ্গণে অজ্ঞাত গৃহত‍্যাগী বরদাচরণ গুপ্তের নামে শ্রাদ্ধের পিন্ড সমর্পণ হতে চলেছে...উনি পৌঁছেই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান নিবৃত্ত করতে অনুরোধ করলেন এবং বললেন, "তিনি কামাক্ষ‍্যা থেকে প্রত‍্যাগত সঙ্গে যে মা এসেছেন ওঁনার কাছে তিনি দ্বাদশ বর্ষ অবস্থান করেছেন স্বচ্ছন্দে। ঐ মা গৃহে থাকবেন। মা, বাড়ির সবার জন্য রান্নার কাজ করবেন, বাড়ির সবাই যেন ওঁনাকে খুব সন্মান করেন।"



একদিন  শ্রাবণের দুপুরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। একদিকে বসবাসের ঘর আর একদিকে খড়ের চালের মাটির ঘর মাঝে বিরাট উঠান। বর্ষায় প্রচন্ড পিচ্ছিল ও হয়েছে। ওদিকে বাড়ির ভেতর থেকে মাস ছয়েকের শিশু প্রচন্ড ভাবে কাঁদছে। শিশুর মা এদিকে রান্না ঘরে ঐ ৺মায়ের সঙ্গে রান্না করছেন। শিশুর মা চেষ্টা করেও উঠোন পাড় হতেও পারছেন না , প্রচণ্ড বজ্র বৃষ্টির মধ্যে। তখন শিশুর মা একবার বলে ফেলেছে ৺মা তুমি ছেলেটাকে এনে দাও। উনি তখন রান্না ঘরের জানালার ফাঁক থেকে হঠাতই দীর্ঘ হাত বের করে শিশুটিকে এনে দিলেন তার মায়ের কাছে। একফোঁটা জলেও সে ভিজে যায় নি। শিশুর মা তো দেখে বিহ্বল। উনি নিষেধ করলেন ঘটনাটি যেন প্রচার না পায়...তবুও এই কথা গোপন রইল না।

এবার মা ভগবতী বরদাচরণ গুপ্ত মহাশয় কে জানালেন, তাঁর গৃহে তিনি আর থাকতে পারবেন না, পূর্ব সংকল্পের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। উনি ব‍্যাকুল হয়ে মায়ের সঙ্গে কামাক্ষ‍্যায় যেতে চাইলেন। মা নিষেধ করলেন এবং বললেন উনি যেন আর গৃহত্যাগ না করেন তবে ওঁনার প্রতিভূ স্বরূপ তাঁর হস্তধৃত খড়গটি নিত‍্য অর্চনা করেন। বিশেষতঃ অষ্টমী তিথিতে। সেই থেকে গৃহে সযত্নে উনি দেবী প্রদত্ত খড়গের নিত‍্য আরাধনা করতে লাগলেন। কিছুকাল পরে দেবীগৃহের পাশে থাকা ভান্ডার ঘরের অনবরত শিকল তোলার শব্দে দেবী রুষ্ট হয়ে অন্তর্ধান করলেন। সাধকের কারত প্রার্থনায় দেবী বললেন তিনি গৃহ থেকে এতটা দূরে কোনও এক দিঘির জলে নিমজ্জিত হয়ে স্বরূপ গোপন করেছেন। সেখান থেকে উদ্ধার করা হলো এবং প্রায়শ্চিত্ত করে পাপক্ষালন করে অভিষেক অন্তে পূজো যথাবিধি শুরু হলো। 



এরপর গৃহবধূদের অহেতুক কোলাহল কিম্বা কোনও এক কারণে খাঁড়া ঠাকুর পূর্ববৎ অন্তর্ধান হলেন। ক্ষমা ভিক্ষা করায় স্বপ্নাদেশ হলো কোনও একভক্তের কলা বাগানের মাটির তলায় উনি অবস্থান করছেন। পূর্ববৎ উদ্ধার হলেন। এবার ওঁনাকে শিকল বেঁধে ঘরের কপাট তুলে রাখা হলে পুনরায় অন্তর্ধান হলেন। জানালেন খড়ের গাদার মধ্যে গৃহের বাইরে অবস্থান করছেন। এরপর থেকে গৃহে অর্চিতা হতেন তবে বিগত কুড়ি বছর যাবৎ আবার দেবীর নির্দেশ অমান্য হওয়ায় ছোট দাদুর মালদহের বাড়িতে সেবার বিঘ্ন ঘটে...শেষে বসতবাড়ি বিক্রি করে অন‍্যত্র চলে গেছে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় একপ্রকার ছিন্ন। আমি নিজের জীবনে মাত্র দুইবার খগড় রূপী মা কামাক্ষ‍্যার দর্শন পেয়েছি। (সংগৃহীত ছবিও এযাবৎ নেই)। বর্তমানে গুপ্ত বাড়ির নিত‍্য সেবিত খগড় রূপে দেবী আয়ূধ সেবিত হচ্ছেন মালদহের ইংলিশ বাজার থানার গঙ্গাবাগে।সেখানে ত্রিসন্ধ‍্যা অর্চনা সহ প্রতি অষ্টমী তিথিতে  সচন্দন গঙ্গোদক সহ খড়গ(স্থানীয় মানুষের মুখে "খাঁড়া ঠাকুর") অভিষেক সমর্পণ হন। প্রমাণিত প্রসিদ্ধি এরূপ যে ঐ অভিষেক বারি পানে আসন্ন প্রসবা রমণীর কোনরূপ প্রসব বেদনায় কাতর হন না।

দেবী সমর্পিত আয়ূধ গোপীনাথ গুপ্তের বংশধরের কাছে সেবিত হচ্ছেন। গোপীনাথ গুপ্তের অগ্রজ প্রসিদ্ধ উকিল স্বর্গত: পরেশনাথ গুপ্তের বোলপুর কাছারিপট্টীর বাস ভবনে তাঁর পৌত্র ডাক্তার দেবপ্রতিম গুপ্ত দীর্ঘ সাতাশ বছর যাবৎ দশভূজা সালঙ্করা মৃন্ময়ী মায়ের সেবা বিধান করছেন। এখানেও আছে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য। ডাক্তার দেবপ্রতিম গুপ্ত( স্থানীয় মানুষজনদের মুখে শোনা ডাক নাম প্রীতম) আজন্ম নিরামিষভোজী।ডাক্তারী পাশ করে বর্তমানে সিউড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য ভবনের জেলা অধিকর্তা রূপে কর্মরত ;বীরভূম জেলার স্বাস্থ্য বিভাগীয় পর্যবেক্ষক রূপে।সেই সাথে তাঁদের শ্রীগুরুদেবের (একচক্রাধাম, বীরচন্দ্রপুর নিত‍্যানন্দ প্রভুর জন্মস্থান আশ্রম "নিতাই বাড়ি" আশ্রমের প্রাণপুরুষ) অপ্রকটের পর ডাক্তার দেবপ্রতিম গুপ্ত আশ্রমের মহন্ত পদে গুরুভ্রাতা গণের অনুরোধে দায়িত্ব নিবাহ করছেন। তাঁর গুরু প্রদত্ত নাম শ্রীনরোত্তম দাস। উনি একাধারে  বীরভূমবাসীর চিকিৎসা বিষয়ক সেবা এবং জনহিতার্থে পারমার্থিক কল‍্যাণে সাধু জীবন অঙ্গীকার করেছেন।ডাক্তার বাবু কৈশোর থেকে স্বহস্তে মৃন্ময়ী মায়ের প্রতিমা নির্মাণ করে আসছেন সেইসাথে দুর্গোৎসবের তন্ত্রধারকের কাজ।

দেবী সমর্পিত আয়ূধ গোপীনাথ গুপ্তের বংশধরের কাছে সেবিত হচ্ছেন। গোপীনাথ গুপ্তের অগ্রজ প্রসিদ্ধ উকিল স্বর্গত: পরেশনাথ গুপ্তের বোলপুর কাছারিপট্টীর বাস ভবনে তাঁর পৌত্র ডাক্তার দেবপ্রতিম গুপ্ত দীর্ঘ সাতাশ বছর যাবৎ দশভূজা সালঙ্করা মৃন্ময়ী মায়ের সেবা বিধান করছেন। এখানেও আছে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য। ডাক্তার দেবপ্রতিম গুপ্ত( স্থানীয় মানুষজনদের মুখে শোনা ডাক নাম প্রীতম) আজন্ম নিরামিষভোজী।ডাক্তারী পাশ করে বর্তমানে সিউড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য ভবনের জেলা অধিকর্তা রূপে কর্মরত ;বীরভূম জেলার স্বাস্থ্য বিভাগীয় পর্যবেক্ষক রূপে।সেই সাথে তাঁদের শ্রীগুরুদেবের (একচক্রাধাম, বীরচন্দ্রপুর নিত‍্যানন্দ প্রভুর জন্মস্থান আশ্রম "নিতাই বাড়ি" আশ্রমের প্রাণপুরুষ) অপ্রকটের পর ডাক্তার দেবপ্রতিম গুপ্ত আশ্রমের মহন্ত পদে গুরুভ্রাতা গণের অনুরোধে দায়িত্ব নিবাহ করছেন। তাঁর গুরু প্রদত্ত নাম শ্রীনরোত্তম দাস। উনি একাধারে  বীরভূমবাসীর চিকিৎসা বিষয়ক সেবা এবং জনহিতার্থে পারমার্থিক কল‍্যাণে সাধু জীবন অঙ্গীকার করেছেন।ডাক্তার বাবু কৈশোর থেকে স্বহস্তে মৃন্ময়ী মায়ের প্রতিমা নির্মাণ করে আসছেন সেইসাথে দুর্গোৎসবের তন্ত্রধারকের কাজ।

এই বংশের মৃন্ময়ী মায়ের পূজো আদিকাল থেকেই বৈষ্ণবীয় রীতিতে সমর্পিত হচ্ছেন।পূজোর সূচনা লগ্নে ৺পরেশনাথ গুপ্তের কনিষ্ঠ পুত্র শ্রীসুব্রত গুপ্ত মহাশয় পূজক ও তন্ত্রধারকের ভূমিকা নির্বাহ করতেন দেবপ্রতিম গুপ্ত মহাশয়। বর্তমানে ৺পরেশনাথ গুপ্তের অপর দুই পৌত্র শ্রীমান উত্তরণ গুপ্ত পূজকের কাজ ও সংকল্পিত চন্ডীপাঠ করেন ঋতায়ণ গুপ্ত।আর তন্ত্রধারকের মূল ভূমিকায় ডাক্তার দেবপ্রতিম গুপ্ত।তাঁদের বাড়ির পূজোর অন‍্যতম বিশেষত্ব শ্রীধাম নবদ্বীপধামের সমাজবাড়ি আশ্রম ও তৎ অনুসারী বরাহনগর শ্রীশ্রী পাঠবাড়ি আশ্রম ও শ্রীগুরুদেব শ্রীমৎ জীবশরণ দাস বাবাজী মহাশয়ের আদর্শে এখানে দেবীপুরাণের মন্ত্র সমন্বিত পূজার সাথে বৃহৎনন্দিকেশ্বর পুরাণ ও আনন্দ বৃন্দাবনচম্পূ:  থেকে চয়নিত স্তবের পূষ্পার্ঘ‍্য নিবেদিত হন শ্রীকৃষ্ণ প্রীত‍্যর্থে। এই ঐতিহ্যশালী বংশের আরও একটি উজ্জ্বল দিক না বললেই নয় তাহল যথাক্রমে এই বৈদ‍্য ব্রাহ্মণ বংশের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যদেবের লীলা সহচর তথা প্রথম  সংস্কৃতে প্রথম জীবনী গ্রন্থকার মুরারী গুপ্তের জ্ঞাতি সম্পর্ক। হালিশহরের রামপ্রসাদ সেন এবং পরিব্রাজক পরমহংস কৃষ্ণানন্দ স্বামী, পবনদূত রচয়িতা ধ‍্যোয়ী সেনশর্ম্মার বংশের সঙ্গে সম্পর্কিত।

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

ট্যাবের টাকা মুহূর্তে হাওয়া! কাদের অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে , এবার গোসাবায় | Bengal Tab Scam | Gosaba
‘জনগণের কষ্টের টাকায় মুখ্যমন্ত্রী উৎসব করবেন!’ মমতাকে ধুয়ে দিলেন সুকান্ত, দেখুন কী বললেন | Sukanta M
‘এবার সনাতনীদের এক হতে হবে’ হিন্দুদের উদ্দেশ্যে যা বললেন শুভেন্দু অধিকারী | Suvendu Adhikari
ক্যামেরা ছিনিয়ে সাংবাদিকের উপর তাণ্ডব! তীব্র বিক্ষোভ মুর্শিদাবাদের রানিতলায় | Murshidabad News Today
Narendra Modi Live: আদিবাসী গর্ব দিবস পালনে মোদী, কী বার্তা, দেখুন সরাসরি